শামীর মোন্তাজিদ ক্যান্সার ও স্টেম সেলের উপর পিএইচডি করছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিয়মিতই বিজ্ঞান বিষয়ক নানান ব্লগ লিখতেন বিভিন্ন সাইটে কিন্তু এবার আর ব্লগ লিখলেন নাহ, লিখে ফেললেন “হাইজেনবার্গের গল্প” নামক বইটি। অধ্যয়ন থেকে হয়েছে বইটি। বইটি পরিবেশিত হবে তাম্রলিপি প্যাভিলিয়নে। বইটির প্রচ্ছদ করেছে মারয়ুক রহমান রিফাত। বইটি নিয়ে কথোপকথন হয় তার সাথে……
সীমান্ত: “হাইজেনবার্গের গল্প” বইটা কি নিয়ে লেখা?
শামীর মোন্তাজিদ: বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারের পেছনকার মজার মজার কাহিনি, কিছু বিজ্ঞানীর জীবন কথা, কিছু বিতর্কিত বিজ্ঞান বিষয়ক ঘটনার সমাবেশে সৃষ্টি হয়েছে হাইজেনবার্গের গল্প বইটি। ৯২ পাতার এই বইটি ২৫টি গল্প বর্ণিত হয়েছে। বইটি এমনভাবে লেখা যাতে করে যেকোন বয়সের, যেকোন বিভাগের মানুষই এই বইটি পড়ে বুঝতে পারবে।
সীমান্ত: বইটার নাম হাইজেনবার্গের গল্প কেন দিলেন?
শামীর মোন্তাজিদ: ১০ মিনিট স্কুলের কেমিস্ট্রি শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্ররা হাইজেনবার্গ নামটা বেশ পছন্দ করেছিলো। যদিও সবাই ব্রেকিং ব্যাড সিরিজের ওয়াল্টার হোয়াটের সাথে আমার মিল খোজাঁর চেষ্টা করে, আমি মূলত এই নামটা ব্যবহার করি অন্য একটি কারণে। ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ সাহেব আমার সবচেয়ে পছন্দের বিজ্ঞানী। রাজনীতি, বিজ্ঞান, ধর্ম— অনেক ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন প্রভাবশালী। তাই বিজ্ঞানবিষয়ক কিছু করার সময় হাইজেনবার্গ নামটাই আমি বেশী ব্যবহার করি।
সীমান্ত: বই লেখার ইচ্ছে জাগলো কেন?
শামীর মোন্তাজিদ: লেখা-লেখির অভ্যাসটা বেশ অনেকদিন ধরেই আমার উপর চেপে বসেছে। আমি বিজ্ঞানের মানুষ; আমার বসবাস ল্যাবরেটরীর সাদা আলোর নীচে। সেই জীবনটা বেশ কঠিন পরিশ্রমের; প্রায়শই রাজ্যের ক্লান্তি ভর করে শরীরটার উপর। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সাধারণত আমি ল্যাব থেকে বের হয়ে রাস্তার ধারের একটা কফিশপে ঢুকে পড়ি। গরম ধোঁয়া তোলা তিতা স্বাদের কালো বর্ণের তরলে চুমুক দিতে দিতে ল্যাপটপটা বের করে আরম্ভ করি লেখা-লেখি। বেশির ভাগ সময়ে সেই গল্পগুলোতেও চলে আসে আমার ল্যাবের বিজ্ঞান।
২০১৭ সালের শুরু দিকে আমার আদরের ছোট ভাই ফাহমিদের সফটওয়ার ফার্ম (battery low interactive) আমার নামে একটি ব্লগ ওয়েবসাইট বানিয়ে দেয় www.shamirmontazid.com ।নিজের লেখা বিজ্ঞান আর ভ্রমণ বিষয়ক গল্পগুলো একটু একটু করে প্রকাশ করতে থাকি ফেইসবুকে। এই সাইটটায় প্রতি সপ্তাহে প্রায় চার-পাঁচ হাজার মানুষ আমার লেখা পড়তে আসে। আমি বেশ অবাক হয়ে যাই। ফেইসবুকের জঞ্জালে কেটী পেরী এবং ক্যাট ভিডিও বাদ দিয়ে আমার বিশাল বিশাল ঘুমপাড়ানী বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা প্রবন্ধ পড়তে মানুষ কেন আগ্রহী হবে?
কিছু মানুষের কাছে আমি সরাসরি কারণটা জানতে চাইলাম। ১০ মিনিট স্কুলের আদরের সহকর্মী অভীপ্সু (IBA,JU) বলেছিলো, “ভাইয়া, আমি ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্র কিন্তু বিজ্ঞানকে ভালোবাসি। কঠিন রিসার্চ পেপার পড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু, যতবারই আপনার লেখা সায়েন্স আর্টিকেল পড়েছি ততবারই বিজ্ঞানে একটু বেশী আকৃষ্ট হয়েছি।” অভিপ্সুর কথাটা বেশ মনে ধরলো। বিজ্ঞান তো কেবল যারা সায়েন্স বিভাগে পড়ে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমার ল্যাবের বিজ্ঞানটা সবার। এর আবিষ্কারের আনন্দটাও তাই সবাই সমানভাবে উদযাপন করবে। অক্সফোর্ডের বন্ধু আনিসুল করিম সবসময় আমার গল্প বলার ক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করে থাকে। তাই, শেষ মেষ ঠিক করে ফেললাম যে, একটা বিজ্ঞান বিষয়ক গল্পের বই লিখবো যা বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও সবাই পড়তে পারবে।
ব্লগ থেকে বই লেখার পেছনের মূল কৃতিত্বটা অধ্যয়ন প্রকাশনীর তাসনোভা আপুর।
তার সাথে প্রথম মিটিং-এর পর আমি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে পিএইচডি করতে চলে আসি। ফেইসবুক মেসেঞ্জারে তিনি দিনের পর দিন আমাকে পান্ডুলিপি পাঠানোর জন্য তাগিদ দিতেন। এই শনিবার, আগামী রবিবার করে করে দুই মাস পর আমি তাকে ব্লগ সাইট থেকে পূর্ব প্রকাশিত ১৫ টি গল্প-প্রবন্ধ একসাথে করে পাঠাই। উনি বললেন, এগুলো নাকি বই হিসেবে পড়তেও ভালো লাগবে। যেহেতু প্রকাশক মানুষ বলেছেন, সেহেতু আশায় বুক বাধঁলাম। যেই মানুষটা গত দেড় বছরে মাত্র ১৫টা বিজ্ঞান বিষয়ক ব্লগ লিখেছে সেই মানুষটাই মাত্র একমাসে আরো নতুন ১০টা গল্প লিখতে মনস্থির করলো। গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ অ্যামস্টারড্যামের এক কফিশপে বসে শেষ গল্পটা লিখে ফেললাম। পূর্বপ্রকাশিত ১৫টি এবং নতুন লেখা ১০টি গল্পসহ মোট ২৫টি কাহিনী থাকছে “হাইজেনবার্গের গল্পে”।
সীমান্ত: বইটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কেমন?
শামীর মোস্তাজিদ: আশা করি বইটি পড়ে কিছু ছেলে-মেয়ে বিজ্ঞানী হবার স্বপ্ন দেখবে। আর বাকীরা অন্তত আমাদের জীবনে বিজ্ঞানের অবদানকে অনুধাবন করতে শিখবে। বইটির গল্পগুলো বন্ধুদের আড্ডায় জায়গা করে নিলে আমার বইটি সফল হবে। বইটি প্রি অর্ডার করতে চাইলে এই লিংকে গিয়ে করতে পারবেন
https://bit.ly/2Rc2Xw7
সাক্ষাতকার নিয়েছে: গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত