ইশতিয়াক আহম্মেদ
আকাশপ্রেমিকদের জন্য আজ সুখবর ! আজ বছরের প্রথম “সুপারমুন” ! তাই যারা রাতের কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালোবাসেন এবং সেই সাথে তারা গুনতেও ভালোবাসেন তাদের জন্য আর এক ভালো লাগা থাকছে আজ রাতে। পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে আলোকদূষণ সত্ত্বেও সুপারমুন দেখা যাবে।
সুপারমুন বলতে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে কোন টার্ম নেই ! বিজ্ঞানে মুলত একে perigee syzygy নামে অভিহিত করা হয়। এটি একটি খুব সাধারন ঘটনা হলেও পূর্বে জ্যোতিষীরা একে ভাল খারাপ উভয়ভাবেই উপস্থাপন করতেন। সুপারমুনে চাঁদের আকৃতি কিছুটা বেশি দেখায় বিধায় সাধু জ্যোতিষীদের মতে সুপারমুনের ফলে উঁচু ঢেউ, অগ্ন্যুৎপাত এমনকি ভুমিকম্পও নাকি হয়। যদিও এমন কোন তথ্য এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত হয়নি। আর তাছাড়া জোয়ারভাটাতেও তেমন পার্থক্য এই দশায় লক্ষ্য করা যায় নি !
সুপারমুন দশায় চাঁদকে স্বাভাবিক অবস্থানের তুলনায় কিছুটা কাছে দেখা যাবে। এর কারন হল চাঁদের উপবৃত্তাকার কক্ষপথ ! চাঁদ ৩৫৭,০০ থেকে ৪০৬,০০০ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করে। ফলে এই দশায় স্বাভাবিক অবস্থা থেকে প্রায় ১৪ শতাংশ বড় দেখা যাবে রাতের আকাশের চাঁদকে। একইসঙ্গে, আকৃতি কিছুটা বড় দেখার জন্য চাঁদকে আরও উজ্জ্বল গোলাকার থালার মত দেখতে লাগবে। ‘সুপারমুন’ দশায় চাঁদের ঔজ্জ্বল্যের পরিমাণ বেড়ে যায় প্রায় ৩০ শতাংশ। যদিও এই পার্থক্য কেবল আকারের তারতম্যের জন্য । বাস্তবে উজ্জ্বলতা একই থাকে। তবে এই পূর্ণ চাঁদের সবচাইতে ভাল দৃশ্য দেখা যাবে যখন চাঁদ দিগন্তের নিকটে অবস্থান করবে। অর্থাৎ চাঁদের উদয় ও অস্তের সময়। তাই সন্ধ্যায় ও ভোরে আপনি এই বড় চাঁদের দৃশ্য ভালভাবে উপভোগ করতে পারবেন ! কিন্তু তারপরেও স্বাভাবিক সময়ে যতটা বড় দেখার কথা তার চাইতেও খানিকটা বেশিই চাঁদকে বড় দেখবেন আপনি, এর কারন হল দৃষ্টিভ্রম। আর চাঁদকে স্বাভাবিকের চাইতে বড় মনে হওয়ার এই কারনকে Moon illusion বলে। আপনি নিয়মিত চাঁদ দেখে থাকলে এই ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন না !
২০১১ সালে জাপানের ভয়াবহ ভুমিকম্প ও সুনামি এবং ফুকুসিমা পারমানবিক চুল্লি বিস্ফোরন ঘটেছিল সুপারমনের ১.৫ সপ্তাহ পরে। আবার ২০০৪ সালে ভারতীয় মহাসাগরে ঘটা প্রলয়ঙ্কারি সুনামিও সুপারমুনের ২ সপ্তাহ পরে ঘটেছিল। এর আগে শেষবার ‘সুপারমুন’ দেখা গিয়েছিল ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর। গতবছরের সুপারমুনে নিউজিল্যান্ডে ৭.৫ মাত্রার ভুমিকম্প হয়েছিল। নাসা সহ বড় বড় মহাকাশ সংস্থা সুপারমুনের প্রভাবে এসব তাণ্ডবের ঘটনা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। এগুলো কেবল নিছক সমস্থানিক ঘটনা ! এই বছরের ২৪ জুনের পূর্ণচন্দ্রকেও অনেকে সুপারমুন বলে আখ্যায়িত করেছেন! তবে এই বছরের পর আবার আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না আগামি সুপারমুনের জন্য। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ৩১ জানুয়ারি ফের এই সুপারমুন দেখা যাবে বলে জানিয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। গেল কয়েকদিন আগে ডিসেম্বরেও সুপারমুন দেখা গিয়েহিল
তবে আগামি এবং আজকের এই সুপারমুনে একইসাথে পূর্ণ ও আংশিক চন্দ্রগ্রহন দেখা যাবে। তবে দুটি চন্দ্রগ্রহনই উত্তর আমেরিকা, মধ্য ও পূর্ব এশিয়া থেকে দেখা যাবে। দুর্ভাগ্যবশত আমরা বাংলাদেশ ও ভারতে এই ঘটনা দেখতে পাব না। তবে সুপারমুন ঠিকই দেখা যাবে। এদের মধ্যে ৩১ জানুয়ারির সুপারমুন হল ব্লু মুন বা নিলাভ চন্দ্র । তবে ভাববেন না এমন চন্দ্র নীল দেখতে হবে। একইমাসে ঘটা দ্বিতীয় পূর্ণচন্দ্রকে ব্লু মুন বলে । নিলাভ চন্দ্র প্রতি ২.৫ বছরে একবার দেখা যায়। এর কারন হল চাঁদ ২৯.৫ দিনে একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করে। তাই একইমাসে দুই পূর্ণচন্দ্র সাধারনত হয় না ! আর হলেও মাসের একদম শুরু ও শেষে হয় ! ৩১ জানুয়ারির সুপারমুনের চন্দ্রগ্রহনের সময় অবস্থানের জন্য পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান আলোর লাল বর্ণের রশ্মি চন্দ্রে পতিত হবে। যে কারনে চাঁদকে লালচে বা বাদামির মত দেখা যাবে ! গত বছরের সুপারমুন ১৯৪৮ এর পরে সবচাইতে উজ্জ্বল ছিল। ২০৩৪ সালের ২৪ নভেম্বরে আগামি উজ্জ্বলতম সুপারমুন দেখা যাবে। আর ২০৫২ সালের ৬ ডিসেম্বরে ২১ শতকের সবচাইতে উজ্জ্বলতম সুপারমুন দেখা যাবে ।
আজকের সুপারমুনকে wolf moon বা নেকড়ে সুপারমুন বলার কারন হচ্ছে পূর্বের লোককথা অনুযায়ী, ‘শীতকালের সুপারমুনে মনুষ্য়রূপি নেকড়েরা তাদের আসল রূপ ধারন করে রক্ত পান করবে।’ গ্রিনিচ সময় অনুযায়ী রাত ২:৩৮ অর্থাৎ আমাদের সকালে এই সুপারমুন দশা থাকবে। তবে আমাদের এখানে তখন আর চাঁদ দেখা যাবে না বিধায় আজ ভোরে চাঁদকে দেখার সবচাইতে ভাল সময়।