মার্যিউর রহমান চৌধুরী
দেশে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর “নিরাপদ সড়ক চাই” আন্দোলনের পর যেখানে সবার আশা ছিলো এবার সড়কে নৈরাজ্য কমে যাবে, মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, উলটো আগের চাইতে বেড়েছে মৃত্যুর মিছিল। অনেক বেশি পরিমানে বেপরোয়া হয়ে পরিবহন চালক, শ্রমিকরা। প্রথম আলো পত্রিকার হিসাব অনুযায়ী গত ২৯ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দৈনিক সড়ক দুর্ঘটনায় কতো জন মারা গিয়েছে সেটা নিচে তুলে দিচ্ছি।
২৯ আগস্টঃ মোট ১৪ জন
৩০ আগস্টঃ মোট ৪ জন।
৩১ আগস্টঃ মোট ৬ জন।
১ সেপ্টেম্বরঃ গাইবান্ধায় ৫ জন সহ পাঁচ জেলায় নিহত আরও ৯ জন।
২ সেপ্টেম্বরঃ মোট ১৭ জন।
৩ সেপ্টেম্বরঃ আট জেলায় মোট ১২ জন।
পত্রিকায় বড় সড়ক দুর্ঘটনার হিসাব করা হয়েছে। এগুলো ছাড়াও দেশে অনেক ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে।আদতে এই কয়দিনে দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু এর চাইতে বেশি সেটা বলার প্রশ্ন রাখে না। প্রতিদিনই সব পত্রিকার প্রথম পাতায় দুর্ঘটনার ছবি দিয়ে হেডলাইন হয়েছে বড় করে। এর কয়েকদিন আগে যদি আমরা কোরবানী ঈদের সময়কার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের হিসাব দেখি তাহলে চোখে পরবে আরও ভয়াবহ অবস্থা। ঈদের সময় এমনিতে যাত্রীর চাপ একটু বেশি থাকে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ১৬ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত এই ১৩ দিনে ২৩৭ টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৫৯ জন এবং আহত ৯৬০ জন। একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছেন ৪৫ জনের।
সত্যিকার অর্থেই এটি দেশের প্রত্যেকটা মানুষের জন্য অনেক কষ্টের ব্যাপার। কয়েকদিন আগে রংপুরে দুইবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর তাতক্ষনিক ধারণ করা ভিডিওতে রক্তাক্ত রাস্তায় পরে থাকা ভিকটিমদের দেহ যেভাবে মানুষের বুককে ভাড়ি করে দিয়েছে একই সাথে সিসি ক্যামরায় ধারণ করা ৩১ আগস্ট কুষ্টিয়ায় বাসের ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে পরে গিয়ে শিশু আকিফার মৃত্যুর দৃশ্য সারা দেশের মানুষকে কান্নার সাগরে ভাসিয়েছে।
তো প্রথমে আমি পরিবহন শ্রমিকদের বেপরোয়া হওয়ার কথাটি কেনো বললাম? গত হয়েক দিনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাকে আমার শুধু নিছক দুর্ঘটনা মনে হয়নি। প্রথমে কুষ্টিয়া শিশু আকিফা দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ টা নিয়ে কথা বলা যাক। যেখানে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যখন আকিফার মা তাকে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন তখন যে বাসটি তাদের ধাক্কা দেয় সেটি দাঁড়ানো ছিলো। তিনি যখন বাসটির সামনে চলে এসেছেন তখনই চালক বাস চালু করে তাকে ধাক্কা দেয়। এছাড়াও ২৭ আগস্ট চট্রগ্রামে ভাড়া নিয়ে বিবাদ হওয়ায় পরিবহন শ্রমিকরা এক যুবককে মারধর করে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয়। পরবর্তিতে বাস চাপায় তার মৃত্যু হয়। এটাও একটা বড় নজির। এরপর ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার মিরপুরে এক পুলিশের এসআই একটি বাস জব্দ করে নিয়ে যাওয়ার সময় সেই বাসই তাকে চাপা দিয়ে হত্যা করে । এই ঘটনা গুলো দেখে আমার মনে হয়েছে এগুলা দূর্ঘটনা নাকি হত্যাকান্ড সেটা ভাববার বিষয়।
আরেকটি দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে চালক,শ্রমিকদের এই বেপরোয়া আচরণের বলি যে শুধু সাধারণ যাত্রীরা হচ্ছে এমনটাও কিন্তু না। তারা নিজেরাও বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পরছেন। যেখানে অধিকাংশ পরিবহন শ্রমিকরাই আসেন নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। এতে করে তাদের পরিবারও বড় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তাদের এই আচরণের কারণ কি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রতি রাগ নাকি নতুন সড়ক আইনে তাদের জিতে যাওয়া সেটা যাই হোক আসল ব্যাপার হলো সড়কেই এই অবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ পর্যন্ত সব শ্রেনির মানুষ।