গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতির সূর্যসন্তানদের স্মরণ করছে গোটা দেশ
ইভান পাল
আজ ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১সালের আজকের এই দিনে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আর ঠিক সেদিন থেকেই ক্ষণগননা শুরু হয় বাঙ্গালি জাতির মুক্তি ও সংগ্রামের এক নতুন যুদ্ধ, নতুন ইতিহাসের। আর সেদিন থেকেই স্বপ্নকাতুর বাঙ্গালি স্বপ্ন দেখতে শুরু করে পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন একটি দেশের, যার নাম লাল সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশ।
আর, স্বাধিকার আদায়ে বাঙালির দীর্ঘ সংগ্রাম সেদিন থেকেই রূপ নেয় সশস্ত্র যুদ্ধে। যার নাম “মুক্তিযুদ্ধ”।।
একটু যদি সংক্ষেপে ইতিহাসের পাতায় তাকায় তবে, —-
বৃটিশদের কাছ থেকে দেশ বিভাগ এবং এরপর ভারত পাকিস্তান দুটো রাষ্ট্রের জন্মলাভ। আর এই বাংলা অংশকে বলা হতো পূর্ব পাকিস্তান। কিন্তু, পাকিস্তানিরা বাঙ্গালিদের যে আবহমান সংস্কৃতি, যে বাংলা ভাষা তা কখনোই মেনে নেয়নি। বরং বারবার এবং বিভিন্নভাবে বাঙ্গালিদের ওপর তারা নির্যাতন ই করেছে। সে অর্থনৈতিকভাবেই হোক, বাণিজ্যিকভাবেই হোক। আর সাংস্কৃতিক দিক থেকে তো অত্যাচার অবশ্যম্ভাবী ছিলোই। তারা তো আমাদের মাতৃভাষা ই আমাদের থেকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তাদের এ আচরণ ছিলো যেন ভাতৃত্ববোধ নয়, বরং ছিলো যেনো প্রভু ভৃত্যের সম্পর্ক। ব্যাপারটা ছিলো যেনো— ওরাই আমাদের প্রভু আর আমরা ছিলাম ওদের ভৃত্য।
যাক, এসবের মাঝে বহু আন্দোলন সংগ্রাম, বহু বাঙ্গালির আত্ম উৎসর্গ আর ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন এবং তাতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এর সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ। আওয়ামী লীগের এ বিশাল জয়কে কুচক্রী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী মেনে নিতে পারছিল না তারা বাঙালিরদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার বদলে বেছে নিয়েছিল বিশাল এক ছককষা ষড়যন্ত্রের ।
পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইয়াহিয়া খান।। তিনি নির্বাচনে বাঙ্গালিদের এরুপ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখে পূর্ব নির্ধারিত জাতীয় অধিবেশন স্থগিত করেন। আর ইয়াহিয়া’র এই স্থগিতাদেশে সারাবাংলায় শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন।
আবার এরমধ্যে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কে সর্তক করে বাঙ্গালিদের অধিকার, বাঙ্গালিদের মর্যাদা বাঙ্গালিদের ন্যায্য ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবার জন্য সেইসাথে বাঙ্গালিদের মানসিকভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে ৭ই মার্চ তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ঝাকঁ মানুষের সামনে জনতার কবি এসে দাড়ালেন।।
আর সেই এক ঝাকঁ স্বপ্নদেখা, সহজ-সরল বাঙ্গালিদের জন্য তিনি তারঁ সেই মহান এবং ঐতিহাসিক ভাষণ খুব সহজভাবেই দিলেন। তালি পড়ল সেদিন প্রতিটি বাঙ্গালিদের হাতে, সর্বস্তরের বাঙ্গালিরা সেদিন উজ্জীবিত হয়েছিলেন। প্রস্তুতিই নিয়েছিলেন যুদ্ধের। মহান মুক্তিযুদ্ধের।
আর সেই ভাষণ দেওয়া মানুষটি বাঙ্গালিদের জন্য খুব দূরের কেউ নেন। যিনি এদেশের সেই খেটে খাওয়া মানুষের বড্ড আপনজন ছিলেন। আর তিনি হলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আর এইসব ক’টি ঘটনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানি শাসকরা চেয়েছিল খুব চুপিসারেই এদেশের মানুষকে মুখবন্ধ করিয়ে দেওয়া যাবে। যার জন্য পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা একটি সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা এবং রাও ফরমান আলীর পরিকল্পনায় ৭১এর সেই ২৫শে মার্চ গণহত্যা চালানো হবে। মুখবন্ধ করিয়ে দেওয়া হবে এদেশের সহজ সরল বাঙ্গালিদের।
মার্চের শুরু থেকেই তারা ভারী অস্ত্র শস্ত্র মজুত শুরু করে। ২৫শে মার্চের সেই ঘুটঘুটে কালো
অন্ধকার রাতে ট্যাংক, কামান সহ অত্যাধুনিক সব মারণাস্ত্র নিয়ে বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনি।
লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, আর গুলি দিয়ে ঝাজড়া করবার বিভৎসতা তো আছেই। এক লক্ষ সাত চল্লিশ হাজার পাচশঁ সত্তর বর্গমাইলের এই ছোট্ট সুন্দর বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) কে তারা সেরাতে ধ্বংসপুরীতে পরিণত করেছিল। কেবল ঢাকা শহরেই নিহত হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ।
১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চের গভীর রাতে এই বাংলার সহজ-সরল, ঘুমন্ত, নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সশস্ত্র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনি।
নিশংসভাবে হত্যা করেছিল এদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) হাজার হাজার মানুষকে।
আহা! কি সেই নিষ্ঠুর দৃশ্য! কি যে ঘৃণিত, কি বিভৎস পাষণ্ডতা!
সে রাতে কাউকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কিংবা কাউকে গুলি করে ঝাজরা করে দিয়েছিল পাষন্ড পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী।।
আর পাকিস্তানি সেনাবাহিনির বাঙ্গালিদের ওপর এই বর্বরোচিত আক্রমণ ইতিহাসে “অপারেশন সার্চলাইট” নামে পরিচিত।
২৫শে মার্চ শুরু করা অপারেশন সার্চলাইট এবং ২৬শে মার্চের মধ্য রাতেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তারঁ নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে।
আর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হবার একটু আগে অর্থাৎ ২৫শে মার্চ রাত ১২টার পর (২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে যান যা পরবর্তীতে চট্টগ্রামে অবস্থিত তৎকালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়।।
২৬শে মার্চ বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম সহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েক’জন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নান প্রথম শেখ মুজিব এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন।
এরপরে ২৭শে মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন। (উইকিপিডিয়া)
আর এরপর পর ই শুরু হয় নয় মাস ব্যাপী এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের। যার নাম মহান মুক্তিযুদ্ধ।।
আর অসংখ্য বাঙ্গালির রক্ত, এই বাংলার মা বোনের শ্লীলতাহানি, তাদেরঁ আত্মোৎসর্গের ফল—-একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, লাল সবুজের “বাংলাদেশ”।।
দিনটি উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ রাষ্ট্রের সবোর্চ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ।
সেই সাথে দিনটিতে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ রাষ্ট্রের সবোর্চ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদবেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অপর্ণ করেন।
বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ দিনটিকে ঘিরে থাকে নানা আয়োজন।
এদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল থেকে রাতঅব্ধি শহরের প্রধান প্রধান সড়কে জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন রঙের পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়।
দেশের প্রতিটি স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সমাবেশ, কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে এবং শরীরচর্চা প্রদর্শনের।
দিনটিতে সরকারি ছুটি থাকে। দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করে। বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলোতেও থাকে এনিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের।
আর গতকাল বাঙ্গালিরা পালন করেছে ১৯৭১ এর ২৬শে মার্চের সেই নিষ্ঠুর গণহত্যার ৪৮তম বার্ষিকী। আর আজ ২৬শে মার্চ ২১বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে লাল সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশ পা রাখলো তারঁ ৪৯তম জন্ম জয়ন্তীতে।।
“শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ”
চ্যানেল আগামী পরিবারের পক্ষ থেকে সব্বাইকে জানাই স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা এবং সেই সাথে চ্যানেল আগামী পরিবার গভীরভাবে ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে বাঙ্গালি জাতির সকল সূর্য সন্তানদের যাদের জন্য আমরা পেলাম আমাদের স্বাধীনতা এবং এই লাল সবুজের বাংলাদেশ।