এস.এম.আরিফুল ইসলাম
একজন শিক্ষার্থীর উপর যে চাপ যায় দৈনিক, সে অর্থে প্রতিটা শিক্ষার্থীই একেকটা সৈনিক! দিন শেষে প্রত্যেকেই চায় জীবনটাকে গড়তে, ভাল কিছু করতে। কিন্তু এই গড়া আর করার মাঝে তাকে নানাবিধ বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। এতসব ঝড়-ঝাপ্টার মাঝেও শিক্ষার্থী নামক সেই সৈনিকটা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায় তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। দিন শেষে অনিচ্ছাকৃত হাসি হেসে মেনে নিতে হয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে। সকল চেষ্টা যখন ব্যর্থতায় রুপ ধারন করে, আপনদের সহানুভূতিটুকু থেকে পর্যন্ত বঞ্চিত হতে হয়! আপন ছেড়ে কাফনকেই হয়ত তখন খুব বেশি আপন বলে মনে হয়! তাইতো “অরিন্দম সৈকত” ছেলেটি সেই কাফনকেই আপন করে নিল! বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের এই শিক্ষার্থী সদ্য সমাপ্তিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ইহজগৎ ছেড়ে পরজগতে পাড়ি জমাল! কিন্তু তার এই মৃত্যুর কারন কি শুধুই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া? নিশ্চই না! পরিবার-পরিজন, তথাকথিত সমাজ সংসারের চাপ সহ্য করতে না পেরে মানসিক যন্ত্রণা থেকে বাঁচার একটি প্রয়াস মাত্র! মৃত্যুপূর্বে তার দেওয়া স্ট্যাটাসগুলোও ছিল জ্বালাময়ী, ছিল আক্ষেপ আর ভ্রুক্ষেপেরও নিদর্শন। তার একটি স্ট্যাটাস পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল- “এতো জিপিএ ৫-পাশের ভীড়ে, আমার স্ট্যাটাস গুলো কী কারো চোখে পড়ে? পড়বে না। পরার কথাও না। যেদিন আমার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়বে এই নীল সাদার দুনিয়ায়,যেদিন আমার মৃত্যুর খবর পত্রিকায় ছাপবে…ঠিক সেইদিন হয়তো “miss you” #RIP হ্যাশট্যাগে ভড়ে উঠবে ফেইসবুক ওয়াল। আমার সাথেই চলে যাবে আমার না বলা কথা গুলো! এইটাই তো দুনিয়া। এইটাই তো একজন মানুষের মৃত্যু পরবর্তী অন্তস্টিক্রিয়া! এটাই তো হেরে যাওয়া এক সৈনিকের প্রাপ্তি!” আজ যদি সমাজ-পরিবার ছেলেটির পাশে দাড়াত, একটু সহানুভূতি দিত তাহলে হয়ত অরিন্দম নামক ছেলেটি “অরি”-কে দমন করার সাহস পেত, এভাবে নিজেকে দমন করতে হতনা! আসলে আমরা কাউকে সহানুভূতিটুকু দিতে পারিনা! অথচ কারো ব্যর্থতায় তাকে ছোট করে দুটি কথা বলতে ভূলিনা! তাইতো আজ হাজারো স্বপ্নভাঙা জীবন, হাজারো অকাল মরন!
ছবি: অরিন্দম সৈকত এর ফেসবুক আইডি থেকে নেয়া।