মিজানুর রহমান
ক্ষুধা, দারিদ্র, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুর হার, মাতৃত্বকালীন মৃত্যু, গড় আয়ু সহ অনেক ক্ষেত্রে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সূচকে এগিয়ে রয়েছে। কিন্তূ বাল্য বিবাহ শতভাগ রোধ করা যায়নি ফলে এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে।মধ্যম সারির উন্নয়ন শীল দেশ হিসেবে এমডিজি অর্জনে বাল্য বিবাহ আগামীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছেন।বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ গুলোর কাছে ক্ষুধা, দারিদ্র, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা,শিশু মৃত্যূর হার কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ যে সাফল্য অল্পসময়ে অর্জন করেছে তা আজ রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত। শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশকে অন্য উচ্চতায় তারা দেখছে।২০২১সাল নাগাদ বাংলাদেশের এমডিজি অর্জনে সরকারে নেওয়া এই কর্মকান্ড সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখবে।
সরকারের গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে বাল্য বিবাহ রোধ নানা কারনে শতভাগ সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছে, এমন তথ্যই জানালেন বাল্য বিবাহ রোধে গবেষণা ধর্মী প্রতিষ্ঠান গুলো। এতে করে কিশোরী মাতার সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে, অপরদিকে সামগ্রীক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে, যা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অন্তরায় বলে মনে করেন তারা।
গত ১৬জুলাই রাজধানীর ব্রাক সেন্টারে আমরাই পারি বাল্য বিবাহ রুখে দিতে শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় এই তথ্য উঠে আসে। বক্তারা পাঁচটি কারন চিহ্নিত করেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে মেয়েদের মতামত উপেক্ষা করা, প্রত্যন্ত অঞ্চলে তথ্য প্রাপ্তির স্বল্পতা, স্থানীয় উন্নয়নে মেয়েদের অংশগ্রহন স্বল্পতা, পারিবারিক ও সামাজিক বাঁধা, স্বাবলম্বী ভাবে মেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ অভিভাবক দের আমলে না নেওয়া, এই কারণগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে বাল্য বিবাহ রোধে আশানুরূপ ফল পাওয়া যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
এদিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান মাল্টিপল ইন্ডেকেটর ক্লাষ্টার সার্ভেয়ার নামক প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় দেখা যায় বাল্য বিবাহ রোধে রংপুর ও বরিশাল বিভাগ পরিসংখ্যানে পিছিয়ে রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৮বছরের নীচে মেয়েদের বিয়ে দেবার প্রবনতা ৭০%সূচকে রয়েছে বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর বিভাগ ৭৬% সূচকে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এ পরিসংখ্যানের পেক্ষাপটে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে গার্লস নট ব্রাইডস বাংলাদেশ নামক প্রতিষ্ঠান দুবছর মেয়াদী একটি প্রকল্প চালু করে যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছর ২৪জুলাই।
বাল্য বিবাহ রোধ নিয়ে কাজ করছেন ব্রাকের পরিচালক গবেষক আন্না মিনজ তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, গ্রামাঞ্চলের সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি এবং অভিভাবকদের কাছে বাল্য বিবাহের তথ্য জানতে এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তর দেন এখানে কোন বাল্য বিবাহ হয়না। এদিকে উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায় প্রত্যন্ত অঞ্চল শুধু নয় শহড়ের নিকটবর্তী গ্রাম গুলোয় বাল্য বিবাহ অহরহ হচ্ছে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের অভিভাবকরা অবগত করলে ভোট রক্ষায় বিকল্প ভাবে তাদের বিয়ের কাজ সারতে পরামর্শ দেন জনপ্রতিনিধিরা। অনেক ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন নতুনভাবে বয়স বাড়িয়ে বিয়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
বাল্য বিবাহ রোধে ১৮বছরের নীচে বিবাহ রেজিস্ট্রি না করার জন্য কাজীদের প্রতি শক্ত বিধিনিষেধ থাকলেও তারা অর্থ লোভে মূল ভলিউমে বিবাহ রেজিস্ট্রি না করে খসরার মধ্যে রেকর্ড রেখে বিয়ে সম্পন্ন করছেন।গত কয়েক মাসে সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কাজী ওমর আলীর প্রতি একাধিক বাল্য বিবাহ দেবার অভিযোগ উঠেছে।
বাল্য বিবাহ রোধে বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে কাজিদের প্রতি দ্বায়িত্ব পালনে আরো কঠোর বিধি নিষেধ এবং জন প্রতিনিধিদের জবাব দিহিতার আওতায় আনা না গেলে বাল্য বিবাহ পুরোপুরি রোধ করতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।