নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিখোঁজ সহকারী অধ্যাপক মোবাশ্বের হাসান সিজার গত ৭ নভেম্বর থেকে তিনি নিখোঁজ হয়েছেন। মোবাশ্বের হাসান ছিলেন বাংলাদেশের ধর্মীয় বিষয়ের একজন বিখ্যাত গবেষক। তিনি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণার কাজ করে আসছিলেন।তার পরিবার সেদিন রাত ১০ টায় মোবাশ্বের হাসান নিখোঁজ উল্লেখ করে খিলগাও থানায় সাধারণ ডায়েরি করে।
মোবাশ্বের সিজারের প্রাক্তন স্ত্রীর একটি চিঠি গন যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, চিঠিতে তার স্ত্রীর আকুলতা সত্যিই চোখে পড়ার মতো।
“৭ই নভেম্বরের পর থেকে মোবাশ্বারের জন্যে অনেক লেখালেখি হচ্ছে, মানব-বন্ধন হচ্ছে। ওর বন্ধুরা ওকে ফেরত চায়, ওকে যারা গুম করেছে তাদের বিচার চায়। আমি শাস্তি বা বিচার চাই না। আমি শুধু চাই আমার ছোট্ট মেয়েটার বাবা মেয়ের কাছে ফিরে আসুক। ও শুধু একবার ফিরে আসুক, আমি কথা দিচ্ছি ও আর জীবনেও কোনো কিছু লিখবে না, ওর ফেইসবুক প্রোফাইল থাকবে না ওর ব্লগ থাকবে না। প্লিজ বিশ্বাস করেন।
আমাদের একটা মেয়ে আছে। ডিভোর্সের পর আমাদের কখনো দেখা বা কথা হয় নাই। মেয়ের পিতামাতা হিসাবে আমরা সিক্রোনাইজড ছিলাম। মেয়েটাকে আমি বলেছি তার বাবা বাইরে গেছে ৭ তারিখে পড়াশুনা করতে। ওর বাবা যেহেতু প্রায়ই বাইরে যায় তাই সে বেশি প্রশ্ন করেনি কিন্তু প্রচন্ড অভিমান করেছে। কারণ এমন কখনো হয়নি যে ওর বাবা ওকে না জানিয়ে কোথাও গেছে। ও খুব অবাক হয়ে বলেছে “কই, বাবা তো আমাকে বলে গেলো না”।আমার মেয়ে জানে যে তার বাবা শুক্রবার তাকে খেলনা কিনতে নিয়ে যাবে কিন্তু বাবা তাকে না জানিয়ে বিদেশ যাবে এটা সে কিছুতেই মানতে পারছে না। ফুফুর সাথেও তার বেশ ভালো খাতির। বাবার উপর অভিমান করে সে ফুফুর সাথেও কথা বলেনা এখন।
মেয়েটা জানে তার বাবা বাইরে থেকে খেলনা নিয়ে আসবে অনেক। নভেম্বরেই তার জন্মদিন। প্রতি বছর তার বাবা তার জন্যে একটা বার্থে পার্টি করে আর আমি একটা করি। এবারও সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, “আচ্ছা এবারও তো আমার ২ টা পার্টি হবে তাই না?”। বাবার সাথে খেলতে যাওয়া, মুভি দেখতে যাওয়ার খুব পাগল সে। আপনারা ইমোশন কতটুকু বুঝেন আমি জানি না, কিন্তু আমার মেয়ে বুঝে! এই মেয়েটাকে এভাবে মিথ্যা বলে আর কতদিন বুঝ দিয়ে রাখবো আমি?
কার কি যায় আসে আমি জানি না কিন্তু মোবাশ্বারের বাবার গোটা দুনিয়া জুড়ে ছিল শুধু উনার ছেলে। উনাকে আমি যতটুকু চিনি, ছেলের অভাবে বেশিদিন সুস্থির থাকতে পারবেন না। ওর মেয়ে আর বাবার দিকে তাকিয়ে হলেও ওকে ফেরত আনার ব্যবস্থা করেন প্লিজ। দরকার হলে ও সারাজীবন বাসায় বসে থাকবে ওর বাবার কাছে। দরকার হলে ও চাকরি করবে না। তবুও ওর বাবা আর মেয়ের কাছে ওকে ফেরত দিন একটাবার।
আমার মেয়ের পছন্দের খেলনা My Little Pony। দুনিয়ার আর কোনো খেলনা ওকে টানে না। মোবাশ্বার যখনই বাইরে গেছে, খুঁজে খুঁজে ব্যাগ ভর্তি করে এই খেলনা নিয়ে এসেছে। আমার গোটা রুম এই খেলনা দিয়ে ভর্তি। আপনাদেরও নিশ্চই বাচ্চা আছে, আপনাদের বাচ্চার কোন খেলনা পছন্দ? আপনারা দূরে গেলে সেই বাচ্চার কি অবস্থা হয়?”
-ছবি এবং তথ্য মোবাশ্বের সিজারের বোন তামান্না তাসনিম এবং আশিফ এন্তাজ রবি এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত