ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বাসায় বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদাক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি এতে অংশ নেন। বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আঞ্চলিক রাজনীতি ও রোহিঙ্গা ইস্যূ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে আওয়ামী লীগের নেতারা এটিকে সৌজন্যমূলক নৈশভোজ বলে দাবী করছেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, নৈশভোজ শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মার্নিকাটের পাঁচ মিনিট একান্ত বৈঠক হয়।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অ্যাম্বাসেডর মোঃ জমির, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এবং মার্কিন দূতাবাসের পলিটিকাল অ্যাফেয়াস সেকেন্ড সেক্রেটারি কাজী রহমান দস্তগীর ও জ্যাকব জে লেভিনসহ দূতাবাসের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তার উপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা ইস্যূ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং আসন্ন দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। সিটি নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তাষ প্রকাশ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
তিনি জানান, মার্শিকাট আমাদের বলেছেন গাজীপুর সিটি করপোরশেন নির্বাচন দেখতে গিয়েছিলাম এবং প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। নির্বাচন পরিবেশ আমার কাছে সন্তোষ মনে হয়েছে।
নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ক্ষেত্র খুঁজছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে পরাজয় আসন্ন দেখে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ক্ষেত্র খুঁজছে বিএনপি।
সোমবার বিকেলে ঢাকার খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন। কৃষক লীগের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর কৃষক লীগ আলোচনা সভাটির আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নির্বাচনের আগে হেরে যায়। বিএনপি কি জনমত দেখে আঁচ করতে পারছে যে, নির্বাচনে ভরাডুবি অনিবার্য? এ কারণে আগেভাগে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনার ক্ষেত্র তৈরি করছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গাজীপুরের মৌচাকে সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যদি বৈঠক করেন, তাতে অন্যায় কী? এটা সিটি করপোরেশন এলাকা নয়। এ জন্য বিএনপি আচরণবিধি লঙ্ঘনের ভুয়া অভিযোগ করছে। তিনি বলেন, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর সিটি করপোরেশনের মতো গাজীপুর ও খুলনায় নির্বাচন হবে।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারে, সেটি দেখাক। বিএনপি আচরণবিধি লঙ্ঘনের সেই প্রমাণ অভিযোগ আকারে নির্বাচন কমিশনের কাছে দিতে পারে। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগ করার কারণ কী? গাজীপুর ও খুলনার কোথাও আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে—এমন অভিযোগে যদি কাউকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করে, তাহলে সেটি কী ভীতি প্রদর্শনের মধ্যে পড়ে?
আলোচনা সভায় সাংবাদিকদের পাঠানো চিরকুটের জবাবে ওবায়দুল কাদের বিএনপি সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় বলতে গিয়ে বিএনপির সাত দফা বাতিলের বিষয়টি নিয়ে আসেন। এরপর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিজ পদে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এ সময় তিনি বলেন, এই দলকে মানুষ কেন নির্বাচিত করবে? এরা ক্ষমতায় এলে আবার দুর্নীতি করবে। হাওয়া ভবন খুলবে। সন্ত্রাস করবে।
কৃষক লীগের আলোচনা সভায় বিভিন্ন জায়গায় অহেতুক কমিটি দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, এখানে যাঁরা আছেন, তাঁরা কতজন কৃষক? এ সময় মিলনায়তনে থাকা অতিথিদের বেশির ভাগই হাত তুলে নিজেদের কৃষক দাবি করেন। তখন তিনি মাথা নেড়ে না-সূচক সাড়া দিয়ে বলেন, ঢাকায় বসে কৃষক! কৃষক লীগের ধানমন্ডি, গুলশান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, নিউ ইয়র্ক শাখার কী দরকার? যেসব জায়গায় ফোকাস দেওয়া দরকার, সেসব জায়গায় ফোকাস দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, তারেক রহমানের পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব থাকল কি না, তা নিয়ে দেশের জনগণের মাথাব্যথা নেই। বিদেশে বসে কলকাঠি নাড়ার স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তারেক রহমানকে তাঁর পাপের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর কৃষক লীগের সভাপতি মাকসুদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার শামসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মহানগর উত্তর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিম খান।
এর আগে রাজধানীর একটি হোটেলে মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের ৫ ও ৬ নম্বর প্যাকেজের জন্য চারটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলেন, গুলশান হামলার ঘটনা মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে দিয়েছিল। তবে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন পুরো প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ছয় মাস পিছিয়ে ছিলাম হোলি আর্টিজান ট্র্যাজেডির জন্য। তবে নির্মাণ কোম্পানিকে তা নিরুৎসাহিত করেনি। ছয় মাস আমরা কাভার করে ফেলেছি। ২০১৯ সালের মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত এবং ২০২০ সালের মধ্যে পুরো মেট্রোরেলের কাজ উত্তরা থার্ড ফেজ থেকে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত শেষ করে ফেলব। ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু জাপান আমাদের কোয়ালিটি কাজ দিচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করে দিচ্ছে। এটা একটা ভালো দিক।’
গুলশান হামলায় নিহত হন সাত জাপানি। তাদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও দুজন নারী ছিলেন। সাত জাপানির মধ্যে ছয়জনই মেট্রোরেল প্রকল্পের সমীক্ষাকাজে নিয়োজিত ছিলেন।
মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ আটটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। প্যাকেজ ৫ ও ৬-এর আওতায় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেনলাইন ও সাতটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে।
প্যাকেজ-৫-এর আওতায় আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার রুট হবে। এই রুটে তিনটি স্টেশন থাকবে।
প্যাকেজ-৬-এর আওতায় কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার রুট হবে। স্টেশন থাকবে চারটি।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দেবে জাপানের সংস্থা জাইকা। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা জোগাবে সরকার।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছে সরকার।
মেট্রোরেলের প্রস্তাবিত ১৬টি স্টেশন হচ্ছে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর–১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও হোটেল, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকা।
প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় চলাচল করবে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী। প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের কম।