অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা একটি খোলা চিঠি প্রদান করেছেন। চিঠিতে আগামী ‘জুলাই চার্টার ২০২৫’-এ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তিনটি মূল উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
১ আগস্ট প্রকাশিত ওই খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, আজহারুল ইসলাম খান, অধ্যাপক নায়লা জামান খান, অধ্যাপক লিয়াকত আলী, আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “জাতির ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়কালে দায়িত্ব গ্রহণ করে আপনি একটি নতুন শাসনব্যবস্থার সূচনা করবেন, যা হবে স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং মানবিক।”
স্বাস্থ্য খাতকে একটি একক মন্ত্রণালয়ের সীমানা ছাড়িয়ে জাতীয় উন্নয়নের মূল স্তম্ভ হিসেবে অভিহিত করে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “মানবসম্পদ বিকাশ, সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সমঅধিকারের ভিত্তি গড়ে ওঠে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর। কার্যকর ও ন্যায়ভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ছাড়া জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।”
বিগত কয়েক দশকে স্বাস্থ্যখাতে অগ্রগতি সত্ত্বেও কাঠামোগত দুর্বলতা, শাসন ব্যবস্থায় বিচ্যুতি ও স্বচ্ছতার অভাব এ অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে উল্লেখ করে চিঠিতে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো ‘গভীর বাস্তবতার প্রতিফলন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই সুপারিশগুলোর মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের মৌলিক সমস্যা সমাধান, প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন এবং প্রশাসনিক জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
খোলা চিঠিতে প্রধান তিনটি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে:
১. স্থায়ী স্বাস্থ্য কমিশন গঠন:
স্বাধীন, গণজবাবদিহিমূলক ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করতে হবে, যা দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেবে। এটি হবে স্বাস্থ্য খাতের রূপান্তরের মূল চালিকাশক্তি।
২. সার্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা:
শহর ও গ্রামে বাধ্যতামূলক রেফারেল ব্যবস্থাসহ কার্যকর, মানসম্পন্ন ও বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে, যা নাগরিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তি হবে।
৩. উচ্চপর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটি গঠন:
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি সময়সীমাবদ্ধ ও দায়িত্বনির্ভর কমিটি গঠন করতে হবে, যা স্বাস্থ্য খাতে প্রস্তাবিত উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করবে এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সরাসরি তত্ত্বাবধান করবে।
স্বাস্থ্য খাতের স্থায়ী সংস্কার ও উন্নয়নে এই সুপারিশগুলো ‘জুলাই চার্টার ২০২৫’-এ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।