গত ১৯ই মার্চ সকাল ৭ টা ১৫ মিনিটে, প্রগতি সরণি রোড এ চলন্ত দুটি সুপ্রভাত বাসের মধ্যে চাঁপা পড়ে নিহত হয় রাজধানির বিইউপি (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস) তে পাঠরত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। রাস্তা পারাপারে তার কোন দোষ ছিল না। ট্রাফিক সপ্তাহ চলছে, নাগরিকরা রাস্তা পারাপারের জন্য ওভারব্রিজ এর অভাবে জেব্রাক্রসিং দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছিল, কিন্তু জেব্রাক্রসিং এও এই দেশের জনগণ নিরাপদ নয়। জেব্রাক্রসিং এ যদি প্রাণ দিতে হয় যানবাহনের ধাক্কায়, তবে এ দেশের নাগরিক রাস্তা পারাপারে নিরাপদ কোথায়?
আবরার আহমেদ চৌধুরী, শত স্বপ্ন নিয়ে সবেমাত্র জীবনটি শুরু করল, নানা আকাঙ্ক্ষা, নানা স্বপ্ন, শুধু যে মেধা রয়েছে তার তা নয়, গেল বছর নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনেও বিশেষ অবদান ছিল তার। কিন্তু আবারো, আবারো পাশাপাশি দুটি বাসের আগে যাওয়ার তুমুল এবং তুচ্ছ প্রতিযোগিতায় তাকে তার মূল্যবান প্রাণটি দিতে হল। গত ১ জানুয়ারি রাজধানীর মালিবাগে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের চাপায় নাহিদ পারভীন পলি (২২) ও মিম নামে দুই পোশাক শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। ওই ঘটনার পর মালিবাগে আবুল হোটেলের সামনে বাসচালকের শাস্তির দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে রাখে। ওই ঘটনার পর বাস ও বাসের চালককে আটক করেছিল হাতিরঝিল থানা-পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুপ্রভাতের একজন বাসচালক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আশরাফ উদ্দিন দায়িত্বে থাকার সময় যাত্রীরা টিকিট কেটে বাস উঠত। সব আয় একসঙ্গে জমা হতো। চাঁদাসহ সড়কের সব খরচ মালিক দিতেন। চালক, হেলপার ও সুপারভাইজরদের দেওয়া হতো নির্দিষ্ট বেতন। তাই চালকদের যাত্রী ধরার তাড়া ছিল না। কিন্তু খন্দকার এনায়েত উল্লাহ দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই প্রথা বাতিল করেন। এখন চুক্তির ভিত্তিতে বাস চালাতে হয় চালকদের। মালিকের দৈনিক জমা চার হাজার, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিকে চাঁদা দিতে হয় এক হাজার ৩০ টাকা, পাঁচ জায়গায় ওয়েবিল চেক হয়। চেকারদের দিতে হয় ১০ টাকা করে ৫০ টাকা। জ্বালানি লাগে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার। সার্জেন্ট, পুলিশ ও অন্যান্য খরচ হয় আরো ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এসব খরচ বাদ দেওয়ার পর হেলপার ও সুপারভাইজরকে ২০০ করে ৪০০ টাকা দেওয়ার পর যদি কিছু থাকে তা নেয় চালক।’
তিনি জানান, দিনে দুই ট্রিপ দিলে ওই সব খরচের পর আর কিছু থাকে না। আবার পুলিশ প্রায়ই মামলা দেয়। তাই তিন ট্রিপ ধরার জন্য দ্রুতগতিতে চলতে বাধ্য হয় চালকরা। “প্রতিটি বাসের তলে লেগে আছে লাল রক্তের দাগ। তবে এই রক্তের দাগ লাগাতে সুপ্রভাত পরিবহন যেন মরণ রেস লাগায়। প্যাসেঞ্জার এর সংখ্যার অভাব নেই, তবুও দ্রুত গিয়ে বেশি অর্থ লাভ করতে চায় বাস ড্রাইভাররা। “এ রক্তের দাগ মুছবে কবে?” চিন্তা সকল মানুষের। “প্রতিটি সড়কে চাই ফুট ওভারব্রিজ” দাবি সকল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। “ছোটকাল থেকে পড়ে এসেছি, ট্রাফিক আইন এ দেখে এসেছি যে রাস্তা পারাপারের সময় ফুট ওভারব্রিজ না থাকলে জেব্রাক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হতে হয়। তাহলে নিরাপদে রাস্তা পার হওয়া যাবে, আজ কোথায় গেল সেই নিরাপদ জেব্রাক্রসিং কোথায় গেল আবরারের জীবন? কেন আজ তাহলে জেব্রাক্রসিং রক্তে লাল হয়ে আছে?” প্রশ্ন সকল নাগরিকের।
ট্রাফিক সপ্তাহ চলছে, তাহলে এখন কেন রাস্তায় লাইসেন্সবিহিন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি দেখা যায়? কেন জেব্রাক্রসিং এই একজনকে প্রাণ দিতে হল? কেন আবারো ছাত্রদের আন্দোলন করতে হচ্ছে? কিছু প্রশ্ন শুধু প্রশ্নই রয়ে গেল, উত্তর আর পাওয়া গেল না। তবুও সরকারের কাছে শেষ প্রশ্ন, আর কত রক্ত দিতে হবে? আর কত প্রাণ দিলে আমরা নিরাপদে থাকতে পারব?