মহিবুল ইসলাম বাঁধন
বারো মাসে তের পার্বণ – প্রচলিত এই কথার সাথে মিশে আছে বাংলার আবহমান কালের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির দর্শন। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে ঋতুর পরিবর্তন তেমন লক্ষণীয়ভাবে আমাদের স্পর্শ না করলেও বর্ষার বারিধারার পরেই শরতের আগমনী বার্তা আমাদের ছুঁয়ে যায়। ঢাক আর কাসের শব্দ যত বেশি উচ্চকিত হয়, দুর্গেশনন্দিনী দুর্গার আগমন ততই ঘনিয়ে আসে। গ্রাম বাংলা্র নানা আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পূজা মণ্ডপ নতুন ধাঁচে সেজে ওঠে। সন্ধ্যার আরতিতে মুখর হয়ে ওঠে সবাই। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী নয়,সমগ্র বাঙালির অনন্য এক উৎসবে পরিণত হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। বাঙালির যেসব উৎসব অসাম্প্রদায়িকতার নিদর্শন তুলে ধরে, শারদীয় এই উৎসব তার মধ্যে অন্যতম। অসাম্প্রদায়িকতার প্রেরণা নিয়ে দুর্গেশনন্দিনীর আগমন ঘটে। ষষ্ঠী,সপ্তমী,অষ্টমী কিংবা নবমীতে পূজার আনন্দের পর দশমীতে দেবীর বিসর্জনে নতুন প্রেরণা বিরাজ করে। দুর্গাপূজার মুল বিষয় প্রতিমা।
আর এই প্রতিমা যখন তৈরি করেন মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা, তখন স্বাভাবিক ভাবেই অসাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি মানুষের মনে নাড়া দিয়ে যায়। আর এসবের মধ্যে দিয়েই সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়। বাছ বিচার লুপ্ত হয়। প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের পদচারনায় পূজা প্রাঙ্গণ মুখর হয়। কেউ আসে দর্শন করতে, কেউ বা নিমন্ত্রণ রাখতে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গোত্র বৈষম্য সৃষ্টিলগ্ন থেকেই অত্যন্ত কঠোর। বামুন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র – এই যে জাত পাতের ভেদ, এই ভেদাভেদ বাঙালির অসাম্প্রদায়িকতার পরিপন্থী। আর দেবী দুর্গা অল্প কিছুদিনের জন্য হলেও এই ভেদাভেদ ভুলে অসাম্প্রদায়িক মনোভাব আর নতুন শুরুর প্রেরণা নিয়েই আগমন করেন। দুর্গাপূজাকে বহুকাল ধরেই সর্বজনীন উৎসব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আর এই উৎসব যে প্রকৃতই সর্বজনীন উৎসবের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে তা এর আয়োজন দেখলেই স্পষ্ট ফুটে ওঠে। মানুষ প্রতিনিয়তই নানা ধরনের প্রতিকূলতা থেকে মুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় লিপ্ত থাকে। এক ধরনের আধাত্নিকতা তার প্রয়োজন হয়। আর তাই আবির্ভাব ঘটে দেবী দুর্গার।
অসাম্প্রদায়িক চেতনা দিয়ে দেবীর আগমন ঘটে। মর্ত্যে অবস্থগা পুজাকে তিনি সাম্প্রদায়িকতার কথা বলেন। দুর্গাপূজা থেকে প্রেরণা নিয়ে নজরুলের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে অসাম্প্রদায়িকতার চেতনায় সুর দেই আমরা – ” নাই দেশ কাল পাত্রের ভেদ অভেদ ধর্ম জাতি সব দেশে সব কালে ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।”