অনলাইন ডেস্ক:
ইভান পাল
গতকাল ৬ই মার্চ বুধবার গণমাধ্যমে প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ~ চেয়ারম্যানের বক্তব্যকে সম্পূর্ণরুপে অমূলক ও বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল ৬ই মার্চ বুধবার টিআইবির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মনজুর-ই-আলম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বলছে—
“ দুদক কর্তৃপক্ষ টিআইবির কর্মপরিধি ও কার্যক্রম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বলেই ধারণা করতো টিআইবি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্যে তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। টিআইবি কোনোভাবেই ‘একচোখা’ নয় বরং টিআইবির সব অবস্থান, প্রতিবেদন ও বক্তব্য সম্পূর্ণ বস্তুনিষ্ঠ এবং বৈজ্ঞানিকপন্থায় প্রণীত গবেষণা প্রসূত ও নিরপেক্ষ।
বিবৃতিটিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন,
“ টিআইবি শুধুমাত্র বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও খাতের সুশাসনের ঘাটতি এবং দুর্নীতি-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের ওপর নির্ভর করে ঘাটতিই চিহ্নিত করে না বরং প্রতিটি ক্ষেত্রেই সমস্যা উত্তরণে সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালাও প্রদান করে। এছাড়া টিআইবি প্রণীত প্রতিটি গবেষণা প্রতিবেদনেই সংশ্লিষ্ট খাতের বা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি ইতিবাচক অর্জন অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করা হয়।
এসময় প্রতিবেদনটিতে ড. ইফতেখার আরো বলেন, ” টিআইবির গবেষণালব্ধ সুপারিশ ও অধিপরামর্শমূলক কাজের ফলশ্রুতিতে যে দুদকের সৃষ্টি হয়েছে, তা যদি দুদক ভুলে যায়, তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক। অধিকন্তু, বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব উল্লেখযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক, আইনি ও নীতিগত সংস্কার এবং ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তার প্রায় সবক্ষেত্রেই টিআইবির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে।
আগ্রহী যে কারো জন্য টিআইবির আয়-ব্যয়ের হিসাব-সংক্রান্ত নথিপত্র সর্বদা উন্মুক্ত। দুদক যদি টিআইবির আর্থিক প্রতিবেদনসহ সার্বিক কার্যক্রমের ব্যাপারে কোনোরূপ সন্দেহ প্রকাশ করে, তাহলে দুদক সহজেই টিআইবি সম্পর্কে তদন্ত করে দেখতে পারে। আমরা দুদককে এ ব্যাপারে পূর্ণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত। ”
ড.জামান এই বিবৃতিতে আরো বলেন, “দুদকসহ যে কোন প্রতিষ্ঠান বা বিষয়ে যে কোন ধরনের মন্তব্য বা বক্তব্য প্রদান করার ক্ষেত্রে টিআইবি সর্বদা বস্তুনিষ্ঠভাবে বিদ্যমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে থাকে। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলছি, টিআইবি সরকার অনুমোদিত কর্ম-পরিধির মধ্যে থেকেই সরকার তথা দুদকের সহায়ক শক্তি হিসেবে দেশে সুশাসন নিশ্চিত এবং দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমসহ অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর তাই, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের সহযোদ্ধা হিসেবে দুদকের যেকোন গঠনমূলক পরামর্শকে টিআইবি স্বাগত জানায়।।
প্রতিটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়নের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য প্রক্রিয়ায়, প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি উভয় প্রকার তথ্যের ওপর নির্ভর করে টিআইবি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণাপদ্ধতি ও সর্বোচ্চ মানদন্ড অনুসরণ করে থাকে। প্রতিটি গবেষণা প্রতিবেদনের শুরুতেই কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সর্বমহলে টিআইবির গ্রহণযোগ্যতা অটুট থাকার অন্যতম কারণ হল এর গবেষণাপদ্ধতি, যার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সময়ে যখন প্রয়োজন হয়েছে, টিআইবি তার গবেষণা প্রাপ্ত ফলাফলকে সঠিক প্রমাণে সক্ষম হয়েছে।
গবেষণা কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা নতুন কিছু নয়, এটা এখন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়েছে। তবে, দুদকের মত একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, যার আইনগতভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষথাকার কথা, যখন একই সংস্কৃতির প্রভাবে প্রভাবিত হয়, তখন তা সতিই দুঃখজনক। টিআইবি বিশ^াস করে, সমালোচনা সহ্য করার মত সৎসাহস দুদক অর্জন করবে। আর যা-ই হোক দুদক কোন রাজনৈতিক বা সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়”।।
মূলত: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বা টিআই বিশ্বের সর্বত্র পরিচিত একটি বেসরকারী এবং অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান । এই সংস্থাটির কাজ হচ্ছে— আন্তর্জাতিক উন্নয়নে বিভিন্ন সংস্থা ও রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত দূর্নীতি পর্যবেক্ষণপূর্বক সাধারণের কাছে তুলে ধরা।।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ৭০টিরও বেশি দেশে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও সংস্থাটির তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
আর গত ৫ই মার্চ মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক আলোচনা পর্বের অংশ হিসেবে এই সংস্থাটি( ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল) কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “টিআইবি’র ( ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ) অবস্থান একচোখা হলে চলবে না, দুচোখা হতে হবে।।”
টিআইবি’র যে চলমান কার্যক্রম তা মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল নিরূপণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি), সুইডিশ ও ড্যানিশ দূতাবাসের সহায়তায় জেনেভাভিত্তিক নীতি ও কৌশল বিশেষজ্ঞ ম্যাথিয়াস বসের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান টিআইবিকে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থার সমালোচনা করতে হলে আগে তাদের দেশের সমসাময়িক বাস্তবতা, পরিস্থিতি এবং সংস্কৃতিকে অনুধাবন করার কথা বলেন।
সেই সাথে এ প্রসঙে দুদক চেয়ারম্যান আরো বলেন, “সমালোচনার সঙ্গে পরিত্রাণের উপায়ও বলতে হবে। সরকার বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল কোনো ভালো কাজ করলে তার প্রশংসাও করা উচিত।”
আর দুদক চেয়ারম্যানের এধরনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ই মূলত টিআইবি এই বিবৃতিটি প্রকাশ করে।।