নাম পাল্টে ফেলেছে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। নয়া নামেই ভারতে তৎপর হয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। জেএমবি এখন জামাতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়া (জেএমআই) নামে ভারতে তৎপর হয়েছে। সংগঠনটি এই নামেই সম্প্রতি ভারতের বুদ্ধগয়ায় তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামার সফরকে কেন্দ্র করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। গোয়েন্দারা বলছেন, এত দিন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বর্ধমানসহ ঝাড়খণ্ডের পাকুর ছিল জেএমবির শক্ত ঘাঁটি। দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটি কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়। সবচেয়ে বেশি মুর্শিদাবাদে। জেএমবি ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে মাইন তৈরি করার সময় বিস্ফোরণে দু’জনের প্রাণহানি হয়। এরপরই পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির বিষয়ে জানতে পারে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এএনআই)। খাগড়াগড়ের ঘটনায় ২০ জনের বেশি ধরা পড়লেও বোমা মিজান এখনও পলাতক।
এরপরই বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি নাম পাল্টে ফেলে। ভারতে কাজ চালানোর জন্য তারা নাম রেখেছে জামাতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়া (জেএমআই)। এই নামেই সংগঠনটি জঙ্গি তৎপরতা শুরু করেছে। জেএমআইয়ের প্রধান হয়েছেন কওসর ওরফে ‘বোমা মিজান’। সম্প্রতি বিহারের বুদ্ধগয়ায় তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামার আগমনকে কেন্দ্র করে সেখানে এই সংগঠনই বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। সেই কথা স্বীকারও করেছে এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার পাঁচজন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের আগস্ট মাসে জেএমবির শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিনের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে কওসরের এক বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভারতে কাজ চালানোর জন্য জেএমবির নাম পাল্টে জেএমআই করার। ওই সভায় জেএমআইয়ের প্রধান করা হয় বোমা মিজানকে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিস ভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবির জঙ্গিরা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। জেএমবির এই জঙ্গি বোমা মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে কওসরই বাংলাদেশে বহু নাশকতার হোতা।
তাঁকে শীর্ষে রেখে জেএমআইয়ের ২২ সদস্যের একটি কোর কমিটিও গঠন করা হয়। এই ২২ জনকে তিন ভাগ করে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য পাঠানো হয় ভারতের চেন্নাইতে। পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির ওপর পুলিশের নজরদারি অব্যাহত থাকায় নিরাপদ জায়গা হিসেবে তারা বেছে নেয় চেন্নাইকে। আর চেন্নাই থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা যুবকদের অপারেশনের জন্য প্রথম পাঠানো হয় বুদ্ধগয়ায়। নিজেদের তৈরি আইইডি বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য।
আরও জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের এই জেএমবির যে শাখা রয়েছে, সেই শাখা মূলত পাকুরে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। পাকুর থেকে বিস্ফোরক ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে। সেখান থেকে আইইডি তৈরি করে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় বুদ্ধগয়ায় জঙ্গিদের হাতে। সালাউদ্দিনের সংগঠনের সঙ্গে আল-কায়েদা এশিয়া শাখার যোগাযোগ রয়েছে।
ভারতের বিহার রাজ্যের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পবিত্র তীর্থভূমি বুদ্ধগয়ায় তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামাকে হত্যার চক্রান্ত করার সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার নিউ ফারাক্কা স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আহম্মদ আলী ওরফে কালু নামের এক ‘জঙ্গি’কে। তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদের শামসেরগঞ্জ থানার রতনপুর গ্রামে। এই গ্রাম থেকে একই দিন গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরেক সন্দেহভাজন ‘জঙ্গি’কে। তাঁর নাম রুবেল শেখ ওরফে আজহার হোসেন। এর আগে প্রথম দফায় গ্রেপ্তার করা হয় শেখ পয়গম্বর ও শেখ জামিরুলকে। তারপর তাদের জেরা করে আরেক ‘জঙ্গি’ শিস মহম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়।