দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন মোট ৮১ জন, যার মধ্যে মাত্র জুলাই মাসেই মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের— অর্থাৎ চলতি বছরের মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেকই ঘটেছে এই এক মাসে।
বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মারা গেছেন আরও দুজন। তারা দুজনই ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা।
আক্রান্ত ও ভর্তি
একই সময়ে সারা দেশে নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮৬ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭০২ জন।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কেবল হাসপাতালভিত্তিক তথ্য প্রকাশ করে। ডেঙ্গু পজিটিভ হলেও অনেকে ব্যক্তিগত চেম্বার বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন, যার হিসাব সরকারি পরিসংখ্যানে নেই। ফলে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
বিভাগভিত্তিক আক্রান্তের চিত্র
গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগভিত্তিক হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সংখ্যা:
বরিশাল (সিটির বাইরে): ১০৬ জন
চট্টগ্রাম (সিটির বাইরে): ৬৪ জন
ঢাকা বিভাগ (সিটির বাইরে): ৬২ জন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি: ৪৯ জন
ঢাকা উত্তর সিটি: ২৯ জন
রাজশাহী (সিটির বাইরে): ৪৫ জন
খুলনা (সিটির বাইরে): ২৩ জন
ময়মনসিংহ (সিটির বাইরে): ৫ জন
রংপুর (সিটির বাইরে): ৩ জন
একই সময়ে ৩৭৮ জন রোগী সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট ১৯ হাজার ৩২৯ জন রোগী চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
লিঙ্গভিত্তিক পরিসংখ্যান
৩০ জুলাই পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে:
পুরুষ: ৫৮.৭%
নারী: ৪১.৩%
আগের বছরের তুলনায় অবস্থা ভয়াবহ
২০২3 সালে মোট ৩,২১,১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ১,০১,২১৪ জন
২০২২ সালে: ৬২,৩৮২ জন
২০২১ সালে: ২৮,৪২৯ জন
২০২০ সালে: ১,৪০৫ জন
২০১৯ সালে: ১,০১,৩৫৪ জন
গত বছরের একই সময়ের তুলনায়:
আক্রান্ত বেড়েছে ২৩৭%
মৃত্যু বেড়েছে ৪৪%
বিশেষজ্ঞদের মত
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টি-পরবর্তী জমে থাকা পানি এবং পরিবেশে তাপমাত্রার বৃদ্ধিই মশার প্রজননের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। এ কারণে শুধু সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়— ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা এবং নিয়মিত বাসা ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি।