কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের সাথে সরকারের সমঝোতার পর ছাত্রদের একাংশ তা প্রত্যাখ্যান করার পটভূমিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। সোমবার বিকেলে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রনেতাদের সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা যে সমঝোতায় পৌঁছান, সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমায়েত হওয়া বিক্ষোভকারীদের একাংশ মানতে অস্বীকৃতি জানান।
ফলে স্পষ্টতই আন্দোলনকারীদের মধ্যে একটা বিভক্তি দেখা দেয়। সোমবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে সচিবালয় থেকে পরিষদের ১৯ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসেন। এ সময় সেখানে সাধারণ আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানোর পর ‘ভুয়া মানি না মানব না’ স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধ সাধারণ আন্দোলনকারীরা।
এতে পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, ‘আপনারা যদি আমাদের সিদ্ধান্ত না মানেন তাহলে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সরে যাব। এক মাসে প্রধানমন্ত্রী দুইবার দেশের বাইরে থাকবেন, ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আলোচনাটা দেরি হবে বিধায় এক মাস পেছানো হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে দাবি আদায়ে কার্যকরী সিদ্ধান্ত না হলে প্রয়োজনে আগামী ৭ মে ফের আন্দোলন।’
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘একমাস নয়। আজ অথবা আগামীকালের মধ্যেই দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।’ তারা জানান, এক মাস পর রোজা ও অনেকেরই পরীক্ষা সেক্ষেত্রে। আমরা এতো সময় অপেক্ষা করা যাবে না। অনেকেই বিষয়টিকে সরকারের টালবাহানা বলেও দাবি করেন।
তারা আরও জানান, আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়নি। আন্দোলন চলছে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এদের মধ্য থেকে বিপাশা চৌধুরী নামে এক শিক্ষার্থী সাহসিকতার সাথে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য সামনের কাতারে এসে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তিনি অবশ্য এই কর্মসূচি সকলের সম্মতিতেই নেয়া হয়েছে।
সোমবার (৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের যে কমিটি ছিল। তারা আমাদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই আন্দোলন স্থগিত করেছেন। আমরা এই সিদ্ধান্ত মানি না। আন্দোলন চলবে। আমি অনুরোধ করবো পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে।
সূত্র বলছে, ‘নিরাপত্তাহীনতায় টিএসসি ছেড়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা ১৬ এপ্রিল চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি, মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় ফের অবস্থান, প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন অব্যাহতের ঘোষণা করেছে। ’
তিনি দাবি না মানা পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীদের ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, যদি ১৫ এপ্রিলের মধ্যে কোটা সংস্কারের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না জানানো হয় তাহলে আগামী ১৬ তারিখ চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি পালন করা হবে। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজধানীতে চলে আসবে।
বিপাশা সোমবার রাতে বলেন, আমরা নিজেদের এখানে নিরাপদ বোধ করছি না। কর্মসূচি আজকের মতো শেষ। আজকে কর্মসূচি স্থগিত। কাল সকাল ১১টায় ফের রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হবে লাগাতার ধর্মঘট ও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি।