‘সোনালী কাবিন’-এর কবি আল মাহমুদ আর নেই।ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এই কবি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ১৫ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে আল মাহমুদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন কবির পারিবারিক বন্ধু আবিদ আজম। তিনি জানান, রাত ১০টার দিকে কবিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। পরে ১১টা ৫ মিনিটের দিকে লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়। এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি, শনিবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ডাক্তারদের পরামর্শে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
আল মাহমুদ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তির পর কবিকে প্রথমে সিসিইউ ও পরে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
বিংশ শতকের বিখ্যাত কবি আল মাহমুদ। তার পুরো নাম মীর আবদুশ শুকুর আল মাহমুদ। জন্ম ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন এই কবি। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা চলে আসেন এবং লেখালেখি শুরু করেন। দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছেন আল মাহমুদ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আল মাহমুদ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ভাষা আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। তিনি একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, সংগঠক ও শিশুসাহিত্যিক ছিলেন। আল মাহমুদ তার সাহিত্যকর্মের জন্য ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়াও পেয়েছেন জয়বাংলা পুরস্কার (১৯৭২), হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৪), জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পুরষ্কার (১৯৭৪), সুফী মোতাহের হোসেন সাহিত্য স্বর্ণপদক (১৯৭৬), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৭),নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯০), সমান্তরাল (ভারত) কর্তৃক ভানুসিংহ সম্মাননা পদক- ২০০৪, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার প্রভৃতি।
একনজরে আল মাহমুদ:
জন্ম ও পরিবার: ১১ জুলাই, ১৯৩৬, মোল্লাবাড়ি, মৌড়াইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বাবা: আব্দুর রব মীর, মা: রৌশন আরা বেগম। স্ত্রী: সৈয়দা নাদিরা বেগম। সন্তান: পাঁচ পুত্র, তিন কন্যা। পেশা : অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, প্রহরান্তরের পাশ ফেরা, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, মিথ্যেবাদী রাখাল, আমি দূরগামী, বখতিয়ারের ঘোড়া, দ্বিতীয় ভাঙন, নদীর ভেতরে নদী, উড়াল কাব্য, বিরামপুরের যাত্রী, না কোনো শূন্যতা মানি না প্রভৃতি।
ছোটগল্প: পান কৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, গন্ধবনিক, ময়ূরীর মুখ প্রভৃতি।
উপন্যাস: কাবিলের বোন, উপমহাদেশ, পুরুষ সুন্দর, চেহারার চতুরঙ্গ, আগুনের মেয়ে, নিশিন্দা নারী প্রভৃতি।
শিশুতোষ: পাখির কাছে ফুলের কাছে।
প্রবন্ধ: কবির আত্মবিশ্বাস, কবির সৃজন বেদন., আল মাহমুদের প্রবন্ধ সমগ্র।
ভ্রমণ: কবিতার জন্য বহুদূর, কবিতার জন্য সাত সমুদ্র প্রভৃতি৷
এ ছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে আল মাহমুদ রচনাবলী।
জাকিয়া সুলতানা প্রীতি