ইভান পাল
ও ও ও আয়রে ছুটে আয় পুজোর গন্ধ এসেছে।।
ঢ্যাং কুর-কুর কুর-কুর বাদ্যি বেজেছে।।
গাছে শিউলি ফুটেছে, কালো ভোমরা জুটেছে।।
সত্যিই তাই।।
চারদিকে পুজোর গন্ধে ম ম করছে সবকিছু।। আর বাঙালির পুজো মানেই ঢাক ঢোল বাদ্যি তো থাকছেই।। আবার গাছে গাছে শিউলি ফুটেছে মানেই, শারদীয়ার একেবারে যে দ্বারপ্রান্তে আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি তা কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না।। আরে সত্যি রাখছে না। একেবারে পুজোর দ্বারপ্রান্তেই আমরা, মানে বাঙালিরা।। কারণ—
আজ মহাষষ্ঠী।।
ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা আজ থেকে শুরু হচ্ছে।
শরত মানেই নদীর তীরে কাশফুল,সাদা মেঘ। আর শরত মানেই বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।। তাইতো বলা হয়ে থাকে, শারদীয়া দূর্গাৎসব।
জগতের মঙ্গল কামনায় এবার দেবীর আগমন ঘটছে ঘোড়ায় চড়ে। আবার, আগামী ৮ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গা বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে।
সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতিবার এইসময়ে দেবী দূর্গা শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে বাপের বাড়ি বেড়াতে মর্ত্যলোকে আসেন।
পুরাণ বলা হয়েছে, অসুর শক্তির কাছে যখন পরাভূত হয়ে দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হয়েছিলেন তখন এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্রিত হন দেবতারা। অসুর শক্তির বিনাশ করতে এক মহাশক্তির আবির্ভাব ঘটলো। দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন মঙলময়ী অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা।
গতকাল বৃহস্পতিবার গোধূলি লগ্নে মন্দিরগুলোতে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
পঞ্জিকা মতে, আজ শুক্রবার ষষ্ঠীপূজা।
এদিকে দেশের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে মন্দিরগুলোর পাশাপাশি সারা দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
গতকাল ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শনে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশ্বস্ত করে বলেন, পূজার সময়ে কোনো ধরনের হামলা বা সহিংসতার আশঙ্কা নেই। তার পরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পুলিশের কন্ট্রোল রুমসহ সব জায়গায় আলাদা ফোর্স থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সারা দেশে মণ্ডপগুলোতে ৫ অক্টোবর থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে তিন লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। নারী স্বেচ্ছাসেবক দল, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশও উপস্থিত থাকবে তাতে।।
এ ছাড়া মণ্ডপে সিসিটিভি, আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। পূজামণ্ডপে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকবেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
রাজধানীর মন্দিরগুলোতে পূজার প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি। গতকাল ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য মহানগর এলাকার মন্দিরগুলোর প্রতি কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পূজামণ্ডপে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা পথ, প্রতিটি পূজা মণ্ডপে কমপক্ষে ১০ জন নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকের ২৪ ঘণ্টা তদারকি ও পাহারার ব্যবস্থা, আতশবাজি ও পটকা না ফোটানো, ৮ অক্টোবর রাত ১০টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন, পূজার মন্দির ও সমগ্র এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দুধর্মাবলম্বীদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বাণীতে বাংলাদেশের চিরাচরিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রেখে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেন, “দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি আজ সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।”
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও এলাকাভিত্তিক পূজা কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এবার সারাদেশে ৩১ হাজার ১০০টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীতে ২৩৭টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা, যা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৮ সালে সারাদেশে ৩১ হাজার ২৭২টি মণ্ডপে ও ২০১৭ সালে সারাদেশে ২৯ হাজার ৭৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও রাজধানীতে ২০১৮ তে ২৩৪টি ও ২০১৭ সালে ২২৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
চ্যানেল আগামীর পক্ষ থেকে — সবাইকে জানায় শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা ।।
ছবিঃসংগৃহীত