আন্দোলনে গতি ফেরে, শিক্ষার্থীদের জামিনে মুক্তি, ন্যায়বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি
রংপুরে কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২০২৪ সালের ২ আগস্ট এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে রাস্তায় নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এর প্রভাবে সরকারের ওপর চাপ বাড়ে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল দুর্বল হয় এবং গণগ্রেফতার অভিযান থেকে সরে আসে প্রশাসন। আদালত থেকে একে একে মুক্তি পেতে থাকেন গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীরা।
এই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১ আগস্ট জামিনে মুক্তি পান রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র আলফি শাহরিয়ার মাহিম (১৬)। শহীদ শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে পরিকল্পিতভাবে তাকে আসামি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে। পরদিন আরও ৯ শিক্ষার্থী জামিনে মুক্তি পান, যাদের মধ্যে দুইজন ছিলেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
শিক্ষক-অভিভাবকদের সমন্বয়ে ২ আগস্ট সকাল ১১টায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে শুরু হয় প্রতিবাদ কর্মসূচি। ব্যানার হাতে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল ও পদযাত্রা করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকরা সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং আন্দোলনের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান। তারা আবু সাঈদসহ নিহতদের হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জবাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সরকারদলীয় সংগঠনগুলো ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়েছে। পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সম্মিলিত আক্রমণে তারা মারধর, গ্রেপ্তার এমনকি গুলির শিকার হয়েছেন।
শিক্ষকদের পক্ষে অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, “আবু সাঈদের লাশ রাতারাতি দাফন করার যে চেষ্টা করা হয়েছে, তা পাকিস্তানি শাসনামলের বর্বরতা মনে করিয়ে দেয়।” তিনি বিচার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী জনগণের অর্থে চলে, অথচ তা এখন জনগণের বিপক্ষে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এদিকে, ১ আগস্ট বিকেলে বেরোবি ক্যাম্পাসে শিক্ষকেরা নীরব মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এতে অন্তত ৪৫ জন শিক্ষক অংশ নেন। তারা ন্যায্য দাবি আদায়ে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এবং বলেন, নিরাপদ, সহনশীল ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
প্রতিবাদে অংশ নেওয়া অভিভাবকরা বলেন, “আমাদের সন্তানরা যখন রাস্তায়, তখন আমরাও ঘরে থাকতে পারি না। আমরা তাদের পাশে আছি, থাকবো।”
সমাবেশ শেষে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও পার্কমোড় থেকে শুরু হয় মিছিল। শহরের প্রধান সড়কজুড়ে প্রতিধ্বনিত হয় বিক্ষোভ, প্রতিরোধ আর আশার স্লোগান।