হাসান আল সাকিব
স্বপ্ন ছিল একটি সুখের সংসার গড়ার। যেখানে হাজার অভাব-অনটনেও স্বামী-সন্তান নিয়ে রচিত হবে নিজস্ব একটি পৃথিবী। ফুটফুটে সন্তান ঠিকই হয়েছে, কিন্তুু সুখের সংসার গড়া হয়নি তার। এমনি একজন হতভাগ্য গৃহবধূ রংপুরের ফতেপুর ভুরারঘাট এলাকার দিনমজুর সাইদুল ইসলামের মেয়ে শারমিন। বর্তমানে স্বামী ও শ্বশুড়বাড়ির চাহিদা মোতাবেক যৌতুক দিতে না পারায় ৫ মাস বয়সের প্রতিবন্ধি শিশুসন্তান নিয়ে নিঃস্ব বাবার মাথায় বোঝা হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন শারমিন। স্বামী, শাশুড়ি ও ননদের হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতনের কথা মনে হলে মাঝে-মধ্যেই আঁৎকে ওঠেন। তবুও প্রতিবন্ধি বাচ্চাটিকে সাথী করে স্বামীর ঘরে ফেরার আশা ছাড়েননি তিনি। মানবিক এ ব্যাপারটি নিয়ে এলাকার সচেতনমহল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ ও সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
নির্যাতিতা শারমিন আক্তার এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ২০১৫ সালের ২২ আগষ্ট পারিবারিকভাবে রংপুর নগরীর ৩১ নং ওয়ার্ডের নাজিরদিগর বনগ্রামের মাকড়িভিটা এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলামের সাথে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে যেতে না যেতেই যৌতুক দাবী শুরু হয়ে যায়। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে গরীব বাবা ও ভাইয়েরা ধারদেনা করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা যৌতুক দেন। এ ছাড়াও ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র তৈরী করে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এমনতস্থায় কয়েক মাসের ভিতর বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আবারও ১ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করেন পরলোভি রবিউল। কিন্তুু শারমিন আক্তার গরীব বাবার কাছ থেকে যৌতুক নিয়ে আসতে অপরগতা প্রকাশ করলে তার উপর নেমে আসে কালবৈশাখী ঝড়। সে সময় সন্তান সম্ভাবা হলেও মার ডাং ও মানুষিক নির্যাতন যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঐ অবস্থায় একদিন অমানুষিক নির্যাতন করে এক কাপড়ে স্বামীর বাড়ি থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়। নির্বিকার শারমিন কোন কুলকিনারা খুঁজে না পেয়ে গরীব বাবার বাড়িতে চলে আসেন। কোন রকমে চলতে থাকে দিন। এ অবস্থায় ঘটনার দিন গত ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর শারমিন আক্তারের পেটে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হলে ৮/৯ মাসের অন্তঃস্বত্তা শারমিনকে রংপুরের একটি কিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। নিরুপায় ডাক্তার অপারেশনের (সিজার) মাধ্যমে ঐ কিনিকে প্রতিবন্ধি বাচ্চাটি হয়। এ ব্যাপারে স্থানিয় প্রশাসনসহ সকল মানবাধিকার সংস্থার হস্তক্ষেপসহ ন্যায়বিচার চেয়েছেন গৃহবধু শারমিন।