এম. এস. রিয়াদ (বরগুনা):
খালেদা আক্তার বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলাধীন পাথরঘাটা ইউনিয়নের চরলাঠিমারা গ্রামের মৃত মো: আইয়ুব আলীর ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে চতুর্থ নম্বরে খালেদা। শত দুঃখ আর মনে ব্যথা নিয়েও থেমে থাকেন নি খালেদা। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েই বাবাকে হারাতে হয়েছে তাঁকে। মা মোসা: ছাহেরা বেগম ও অন্য ভাই বোনদের নিয়ে এগিয়ে চলেন স্বপ্নের সোপান ছুঁতে। দ্বাদশ উত্তীর্ণের পরপরই বরগুনা শহরের পশ্চিম বরগুনার মো: মিজানুর রহমান (মনু) এর সাথে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয় তাঁকে। অল্প বয়সে বিয়ে হলেও ঝড়ে পড়তে হয়নি পড়াশুনা ও নিজের সুন্দর একটি ক্যারিয়ার গড়া থেকে। স্বামী মনু মিয়ার অনুপ্রেরণা পেয়ে এগিয়ে চলেন দুর্বার গতিতে। ইচ্ছে শক্তি নিয়ে যাতে যেতে পারেন উচ্চ আশার দ্বারপ্রান্তে।
এমন মনোবল নিয়ে ছুটে চলা শুরু হয় নতুনভাবে। খালেদা আক্তার ৩১ নং চরলাঠিমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে প্রাথমিক, হাড়িটানা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে মাধ্যমিক, পাথরঘাটা মহাবিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ২০১০ সালে ইংরেজি নিয়ে সম্মান ও বরিশাল (ব্রজমোহন) বি.এম কলেজ থেকে ২০১৩ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপরই শুরু হয় বাংলাদেশ কর্ম কমিশন (বিসিএস) টার্গেট পূরণের দৌঁড়-ঝাপ। তবে ইতোমধ্যে খালেদা এক কন্যা সন্তানের জননী হয়ে গেছেন। কন্যা সন্তানের পরে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেয় খালেদা। বরিশাল কনফিডেন্স এ বিসিএস কোচিং করতে গিয়েও মেয়ে মৌমিতার খাবারের রুটিনে ছিলেন খালেদা।
ছেলে ছোট থাকায় ডিস্টার্ব হলেও মেয়ের কারণে তা মনে হয়নি। খালেদার ছেলে মাকে বলত তুমি পড়াশোনা চালিয়ে যাও। আমি বাবুকে দেখব। আজ মেয়ে মৌমিতা ৫ম শ্রেণি ও ছেলে আরিফিন নার্সারিতে অধ্যায়ন করছে। শিক্ষক প্রফেসর প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসকে এখনও শ্রদ্ধার উচ্চাসীনেই রাখেন। বলা চলে খালেদার মাথার তাজ তিনি। শত বাধা উপেক্ষা করে আজ তিনি একজন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার। ৩৫ তম বিসিএস এ প্রথম চয়েজ এডমিন থাকলেও শিক্ষা ক্যাডারই পেতে হয়েছে তাঁকে। বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বিপিএম, পিপিএম এর পক্ষ থেকে সংবর্ধনাও পেয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজে (প্রভাষক ইংরেজি) কর্মরত রয়েছেন খালেদা। কঠোর অধ্যবসায়ই পারে জীবনের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে। এমন কথাই ব্যক্ত করলেন খালেদা আক্তার।