মোঃ মেহেদী হাসান, গাইবান্ধাঃ
গাইবান্ধায় ধূমপায়ীদের সংখ্যা দিন দিন প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বেড়েই চলছে। বিশেষ করে তরুণদের মাঝে ধূমপান একটি ফ্যাশন বা স্মাটনেস অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। যেন তারুণ্য মানেই ধুমপান, তারুণ্য মানেই সিগারেট।
গাইবান্ধার বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ধূমপায়ীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এইসব ধূমপায়ীদের বেশিরভাগই স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী এদের মধ্যে ক্লাস বর্জনকারী শিক্ষার্থী বেশী। তাদের কাঁধে সাইড ব্যাগ, হাতে মোবাইল ফোন, পকেটে সিগারেট ও দিয়াশলাই।
দোকান থেকে সিগারেট কিনে নির্জন স্থানে গিয়ে ধূমপান করে তারা। তাদের বাচন ভংগী দেখে মনে হয় এটা একটা ফ্যাশন। প্রতিদিন সকাল বেলা স্কুল পালানো এসব শিক্ষার্থীদের গাইবান্ধার শহরে, বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জের বিভিন্ন নির্জন যায়গায় দেখা যায়। এদের অনেকেই মুরব্বীদের সম্মান না দেখিয়ে পাবলিক প্লেস ও খোলা জায়গায় ময় মুরব্বীদের সামনেই ধূমপান করে।
বিকালের আড্ডায়ও তাদের দেখা যায়। শিশুদের কাছে সিগারেট কিংবা বিড়ি বিক্রি করা আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও, সে আইন মানেন না দোকানীরা। এই কারণে ছোটরা খুব সহজে সিগারেট ও মাদক জাতীয় নেশা সংগ্রহ করতে পারে।
দোকান থেকে সিগারেট কিনে লাগানোর সময় তিন ধূমপায়ী স্কুল ছাত্রের সাথে কথা হয় শামীমা সুমীর। তাদের একজন জানায় বন্ধুদের সঙ্গে মজা করে সিগারেট খাচ্ছি। প্রতিদিন খাই না।
১৮ বছরের কম বয়সী কারো কাছে সিগারেট বিক্রি করা আইনত যে অপরাধ তা জানেন কিনা জানতে চাইলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজমতি মোড়ের সিগারেট বিক্রেতা নূর আলী বলেন- জানি, কিন্তু কেউ খাইতে চাইলে আমরা কি করমু? আইনে তো প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়াও নিষেধ। কয় জনে মানতাছে? আর এতো আইন দেখলে ব্যবসা হইবো না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে ৩ টাকা থেকে শুরু করে ১১ টাকার মধ্যে বিভিন্ন দেশি ব্র্যান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়। স্বল্পদাম এবং সহজলভ্য হওয়ায় এগুলোর ক্রেতা হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানায় সন্তানের সামনেই অনেক বাবা ধূমপান করেন। এতে ওই সন্তানও ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের মধ্যে ধূমপান সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। তবে আমরা সর্বদা ধূমপান থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দেই।
গাইবান্ধার সচেতন মহল মনে করেন ‘শিশু বয়স থেকে ধুমপান খুবই ভয়াবহ। এতে করে প্রথমেই বাঁধাগ্রস্থ হয় শিশুর মানসিক ও দৈহিক বিকাশ।এজন্য জনসচেতনতা, অভিভাবকদের বেশী দায়িত্বশীল হওয়া, তামাকজাত পন্য বিক্রেতাদের নৈতিক ভাবে সচেতন হওয়া ছাড়া শিশুদের এই পথ থেকে ফিরানোর বিকল্প নেই।
সেই সাথে দোকানী, অভিভাবক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাই যে যার অবস্থানে থেকে নৈতিক ভাবে দায়িত্ব পালন করলে ছোট ছেলে মেয়েদের নেশায় জাড়িয়ে পড়ার সুযোগগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে শ্রমজীবি অভিভাবকের অধিকাংশ শিশু সন্তানরা ১০ থেকে ১২ বছর বয়সে সিগারেট কিংবা বিড়ি সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। অভিভাবকদের আয় রোজগারের ধান্ধার কারণে ছোট সন্তানদের সারাদিনে খোঁজ নেয়ার সময় হয়ে ওঠে না। এ কারণে ওইসব শিশুরা খুব দ্রুত মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ে।