ইভান পাল
গত ২৭শে জুলাই, শনিবার চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্যদল উত্তরাধিকার’র পরিবেশনায় ” ফুলকুমারী ” নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে।
“ফুলকুমারী ” একটি গীতিনাট্য। বাংলা নাট্যের হাজার বছরের ইতিহাসে গীতি একটি প্রধান উপাদান। শুধুমাত্র নাট্যই নয়, গীতি আমাদের সংস্কৃতির একটি অন্যতম মাধ্যম হিসাবে টিকে আছে বঙ্গের বহতায়। এই গীতি কখনও তৈরি হয়েছে কোন সময়কে ঘিরে, কখনওবা কোন স্থানকে কেন্দ্র করে, আবার কখনও কোন গোষ্ঠী, কোনো গ্রাম কিংবা নদীকে আশ্রয় করে। নদীমাতৃক এই বাংলার নদীর সরল রৈখিক গতির সঙ্গে মানুষের জীবনের রৈখিক টানা পোড়নে ঘটেছে নানান গীতি, কথা, সুর ও তালের সংমিশ্রণের হাজারো গল্প ও কাহিনী।
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার একটি গীতি কাহিনী এই ফুলকুমারী। এক সময়ের স্রোতস্বীনি বংশাই নদীর উপকূলবর্তী নর-নারীর প্রণয়োপাখ্যান নিয়ে তৈরি এই কাহিনী। ফুলকুমারী কাজেম পাটনীর একমাত্র কন্যা। নদীর ঘাটে প্রথম দেখায় ভালোবাসা সম্পর্ক গড়ে ওঠে ফুলকুমারী ও জমিদার পুত্র সোনা মিয়ার মধ্যে। কিন্তু তাদের এই সম্পর্কের মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সোনা মিয়ার মা। তার বিয়ে ঠিক করে ভাটির দেশের জমিদার কন্যা রোশনার সাথে। কিন্তু সোনা মিয়া মায়ের এ সিদ্ধান্ত মানতে পারে না। মাকে ছেড়ে চলে যায়। খুঁজে ফেরে ফুলকুমারীকে। অবশেষে এক বিরান ভূমিতে তাদের দেখা হয়। তাদের এই সাক্ষাতে হয় শোক গাঁথার করুণ পরিণতি।
আমিনুর রহমান মুকুলের রচনায় এবং মোসলেম উদ্দিন সিকদারের নির্দেশনায় নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে ফুলকুমারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইসরাত নুর মৌ, জমিদার পুত্র সোনা মিয়া চরিত্রে অভিনয় করেছেন গৌতম চৌধুরী, জমিদার চরিত্রে অভিনয় করেছেন রহিমা খাতুন লুনা, নায়েব চরিত্রে রাজিউল হাসান, মোস্তাক চরিত্রে বিটু ভৌমিক, কাজেম পাটনী চরিত্রে শেখ নিয়াজ বাবু, মহিব চরিত্রে মাহমুদ রাসেল, সূত্রধরে ছিলেন মঈন উদ্দিন কোহেল, পরিতোষ দাশ বিমল, গৌরি নন্দিতা এবং অন্যান্য চরিত্রে ছিল সুনয়ন দেবনাথ, জাহিদুল ইসলাম সবুজ, তমা রাউত, রোকন উদ্দিন, গুলশান আরা বহ্নি।।
নাটকটির নির্দেশক মোসলেম উদ্দিন সিকদার বলেন,
“নারীর ত্যাগ শ্বাসত, চিরকালই তার সৃষ্টির পর থেকেই নারী ত্যাগ করেছে নিজের জীবন, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও পূর্ণতাকে, তারই কথা বলা হয়েছে এই গীতিকায়। বংশাই নদীর মাঝিদের মুখে মুখে ফেরে এই গীতিকা। মাঝিরা তাদের জীবনের সঙ্গে ফুলকুমারী গীতিকাকে সম্পৃক্ত করেছে সুরের আবেগে। আমাদের হাজার বছরের নাট্য আঙ্গিকের ন্যায় এই বংশাই নদীও আজ লুকিয়ে গেছে, তলিয়ে যাচ্ছে ভূমিতে। সেই নদীর গীতি কাহিনির মাধ্যমে এই নাট্যে আমাদের লোক নাট্য আঙ্গিকের ব্যবহার করবার চেষ্টা করা হয়েছে প্রতিনিয়ত।”
১ ঘন্টা ১৫ মিনিটের এই নাটকটি প্রথম মঞ্চায়িত হয় গত ১২ই জুলাই এবং ২য় ও ৩য় মঞ্চায়ন হয় ২৬ ও ২৭ শে জুলাই চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের চলমান গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের সহযাত্রী সংগঠন হিসেবে চট্টগ্রামে নাট্যদল উত্তরাধিকার আত্মপ্রকাশ। প্রাণবন্ত বোধের শিল্পীত উদ্ভাস সৃষ্টির উন্মাদনায় শুরু হয় এর এক প্রত্যয়দীপ্ত সাংগঠনিক অভিযাত্রা। নাটকের শিল্পীত উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি ও সমাজের নানামুখী সংকট সম্ভাবনাকে মঞ্চালোকে উন্মোচন করাই এই নাট্যদলের প্রধান লক্ষ্য। আবহমান বাংলার লোকজীবনের সৌন্দর্য ও অনুসন্ধান করে মঞ্চে তার শিল্পীত রূপকল্প নির্মাণে উত্তরাধিকার বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে।