নিজস্ব প্রতিবেদক
রংপুর, ২৯ জুলাই ২০২৫
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলদাদপুর গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারগুলোর উপর সাম্প্রতিক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি, আটকও করা হয়নি কাউকে। তবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়িগুলোর মেরামত কাজ চলছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা ঘরগুলোর টিনের বেড়া খুলে নতুন টিন বসানো হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য পরেশ চন্দ্র জানান, গতকাল রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল ও পুলিশ সুপার আবু সাঈম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাঁদের নির্দেশে আজ সকাল থেকে কাঠ ও টিনসহ মেরামতের উপকরণ সরবরাহ করা হয় এবং প্রায় ৩০ জন কাঠমিস্ত্রি কাজ শুরু করেন।
হামলার পেছনের কারণ ও পরিস্থিতি
প্রসঙ্গত, গত শনিবার ওই গ্রামের এক কিশোর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছে—এমন অভিযোগে পুলিশ তাকে আটক করে। পরবর্তীতে সাইবার সুরক্ষা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিশোরকে আটক করার পর উত্তেজিত জনতা প্রথমে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং পরে কিশোরের পরিবারের ঘরে হামলা চালায়। এরপর রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আরও একদফা হামলা হয়, যেখানে ১৫টি বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এতে পুলিশের এক কনস্টেবল আহত হন।
অবস্থানের মধ্যে সেনা ও পুলিশ বাহিনী
আলদাদপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও আলদাদপুর নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে এই হামলা সংঘটিত হওয়ায় বিদ্যালয় দুটি এখন বন্ধ রয়েছে। দুই বিদ্যালয়ের সামনে সেনা সদস্য ও পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।
প্রধান শিক্ষক কালী রঞ্জন রায় জানান, আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের আতঙ্ক ও অভাবের চিত্র
ঘরবাড়ি হারিয়ে আতঙ্কে আছেন অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবার। হিরনবালা রানী বলেন, “কাপড়চোপড়, জিনিসপত্র সব গেছে, কিচ্ছু নাই ঘরে। এখন ঘরের বেড়া ঠিক করলেই কী হবে?”
অন্যদিকে আজো বালা বলেন, “আতঙ্কে কাজ করবার পাই নাই। ঘুমানোরও সুযোগ হয় না। মেয়ে দুটোকে নিয়ে ভয়ে আছি।”
মামলা না হওয়া নিয়ে ক্ষোভ
গঙ্গাচড়া থানার ওসি আল এমরান জানান, “ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনো মামলা করতে আসেনি, সময় নিচ্ছে। প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে আছে।”
তবে গঙ্গাচড়া উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক তপন কুমার বলেন, “এটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা। প্রশাসন আপাতত যা করছে, তাতে আমরা আস্থা রাখছি। তবে আমাদের লোকজন যারা পালিয়ে আছেন, তাদের ফেরত এনে আলোচনার মাধ্যমে মামলা করব।”
আবারও উত্তেজনার চেষ্টা
গতকাল রাত ১০টার দিকে পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা চেকপোস্ট এলাকা থেকে আবারও একটি মিছিল আনার চেষ্টা হয়। তবে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তা প্রতিহত করে। এ বিষয়ে ওসি আল এমরান বলেন, “প্রশাসন যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ প্রস্তুত আছে।