ফেরদোস আলম(মুক্তাগাছা)-
পথ দেখালে প্রতিবন্ধী শিশুরাও পারবে সব এমনই একজন মুক্তাগাছার সুজন প্রথম দিকে ঠিকঠাকই ছিল সুজন। যদিও এখনও তার হাত-পা-শরীর দূর্বল ও অপুষ্ট। তবে তার কথা-বার্তা স্বাভাবিক, কিন্তু ছবিটা পাল্টাতে শুরু করল ওর বয়স দু’বছর পেরোনোর পর থেকেই, কিছু বললে শান্ত হয়ে মায়ের পানে চায় ।
আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীরা বোঝান, একদিন ভালো হয়ে যাবে হয়তো কিছুটা দেরি হবে এমন তো কতই হয়! আশায় আশায় পেরিয়ে যায় বেশ কয়েকটি বছর। এ দিকে, সমস্যা কমা তো দূরের কথা, বরং বেড়েই চলে।
শারীরিক সমস্যা জুড়ে বসে সুজনের। তার বয়সী অন্য বাচ্চারা যখন হইহই করে স্কুলে যায়, খেলা করে। তাকে দিয়ে কিছু করানো তো দূরস্ত , এক জায়গায় বসিয়ে রাখাটাই যেন একটা যুদ্ধ। ছেলেকে নিয়ে ওর মাবা- মা শেষ পর্যন্ত ছুটলেন মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ।
সেখানে ডাক্তাররা বোঝালেন, এটি এক ধরনের বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা। সুজনের বাবা-মার মনের মধ্যে তখন ঝড় উঠে। তিনি ভাবছেন, ছেলে কি কোনও দিনও সুস্থ হবে না? ছেলে স্বাবলম্বী না হলে আমাদের অবর্তমানে ও কী করবে? কে দেখবে ওকে? এসব ভেবে এবং সচেতনতার অভাবে একপর্যায়ে অবহেলায় বাড়ির পাশে একাকী বসে থাকার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় সুজনকে ।
সুজনের জীবনের অন্ধকারের মধ্যে আশার আলো হয়ে আসেন, মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সুবর্ণা সরকার, জানা যায়, গত ১১ এপ্রিল ইউএনও সুবর্ণা সরকার সরকারি কাজে উপজেলার শুকপাটুলী গ্রামের পথ ধরে যাচ্ছিলেন ।
ঐদিনই তার নজরে পড়ে সুজন । দেখতে পান, শুকপাটুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় গাছের ছায়ায় সুজনকে তার ছোট ভাই হুইল চেয়ার ঠেলে এনে বসিয়ে রেখে গেছে। সুজন সামনের স্কুলের দিকে তাকিয়ে আছে। বিদ্যালয়ের পাশের গ্রামে তার বাড়ি। ইউএনও জানান, ওর মায়ের সাথে কথা বলে জানা গেলো তার ৪ ছেলেমেয়ের মধ্যে সুজন ২য়। সুবর্ণ নাগরিক কার্ড রয়েছে তার, সে সমাজকল্যান মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধী ভাতা পায়।
সুজনের মাকে বলা হলো প্রতিদিন যেন তাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যায়। সে পড়া শিখতে পারবে বলে মনে হয়। শুকপাটুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানালেন। পরিবার ও সমাজের সকলের সহযোগীতায় সুজন স্বাভাবিক জীবন লাভ করুক। যাবতীয় বাধার গিরি লঙ্ঘনের শক্তি সুজনের মধ্যেও আছে, সেটা জানান দিলো সুজন ।
সেও পারে একমাত্র শিক্ষা।ওর প্রতি সহানুভূতিশীল ইউএনও’র মত কেউ যদি থাকেন । এরই মাঝে সুজনের বাবা- মায়ের গর্বিত মুখ দেখা গেলো । প্রতিবন্ধী এই শিশুর প্রতি ইউএনওর সচেতনতা ও আগ্রহকে ধারাবাহিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দেখে । ইউএনও সুবর্ণা সরকার জানান, গত ১২ জুলাই সুজন এসেছিলো বাবা মায়ের সাথে উপজেলা পরিষদে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রেরিত ৬টি হুইল চেয়ারের একটি সুজন পেয়েছে। শুকপাটুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাকে জানালেন, সুজন নিয়মিত স্কুলে আসে। কী কী শিখেছে জানতে চাইলে মুখে একগাল হাসি নিয়ে সুজন বললো যে সে অ আ শিখে ফেলেছে। ইউএনও তাকে আশির্বাদ করলেন । বললেন, সকলের ভালবাসা আর সহযোগিতায় মসৃণ হোক সুজনদের পথচলা।