পদ্মার ভাঙনে জাজিরার নাওডোবায় বিলীন ১৯ স্থাপনা, আতঙ্কে শতাধিক পরিবার
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা মাঝিরঘাট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ১৯টি স্থাপনা মুহূর্তেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
সোমবার (৭ জুলাই) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ করে বাঁধে ধস নামতে শুরু করে। বিকেল ৪টার পর ভাঙনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছয়টি পরিবারের বসতবাড়ি এবং ১৩টি দোকানপাট পদ্মায় তলিয়ে যায়। এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো মাঝিকান্দি-নাওডোবা এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, কয়েক মিনিটের ব্যবধানে একের পর এক স্থাপনা নদীতে তলিয়ে যায়। পদ্মার প্রবল স্রোতের কারণে আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি এবং ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামের অন্তত ৬০০ পরিবার এখন সরাসরি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। অনেকেই রাতের আঁধারে ঘরবাড়ি ও ব্যবসার মালামাল সরিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সেতুর পূর্ব পাশে প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে গত বছর নভেম্বর, চলতি বছরের ৮ জুন এবং সর্বশেষ সোমবারের ভাঙনে ওই এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, একাধিকবার ভাঙনের পূর্বাভাস দেওয়ার পরও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা স্থায়ী ও টেকসই রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জোর দাবি জানান, নতুবা পুরো জাজিরা নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, “দুপুরে দেখি বাঁধের মাটি সরতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পরেই একে একে দোকান আর বাড়িগুলো নদীতে তলিয়ে যায়। আমরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। এখনই স্থায়ী বাঁধ না হলে সব শেষ হয়ে যাবে।”
ইউপি সদস্য মো. জলিল সরদার বলেন, “নদীতে কয়েক দিন ধরেই তীব্র স্রোত দেখা গেছে। বাঁধে ফাটলও ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা গুরুত্ব দেয়নি। এ অবহেলার ফলেই আজকের ভয়াবহ বিপর্যয়।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, “ভাঙন রোধে প্রশাসন জরুরি ব্যবস্থা নিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া, ত্রাণ সহায়তা দেওয়া এবং ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে।”
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান জানান, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভাঙনের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০ মিটার। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) এখানে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করেছিল। ভাঙন ঠেকাতে তাৎক্ষণিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।