ইভান পাল
পহেলা বৈশাখ বাংলা ও বাঙ্গালিদের প্রাণের উৎসব। আবহমান বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতি এই বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ।
প্রাণের উৎসব বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই থাকে নানান আয়োজন। আর বাংলাদেশের প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী শহর চাঁটগাতেও থাকে বৈশাখ বরণের হাজারো প্রস্তুতি।
প্রতিবছরের মতো এবছরও ভোর থেকেই চট্টগ্রামের উৎসবের স্থানগুলোতে ছিল বৈশাখের আবাহন। প্রাণের উৎসব সেই বৈশাখের আবাহনে নতুনকে সাদরে বরণ করে নিতে গান, কবিতা আবৃত্তি, কথামালা আর বাদ্যযন্তের সুরে সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে ছিল চট্টলাবাসী আর চট্টলার শিল্পী সমাজ।।
চারুকলার শিল্পীদের রং তুলির আচঁড়ে দেওয়া আলপনায় সুসজ্জিত ছিল বন্দরনগরীর ডিসি হিলের বৈশাখী আমেজের আঁচ লাগা সড়কটি।
আর নগরীর ডিসি হিলে শ্রুতি-অঙ্গনের ভৈরবী রাগে ধ্রুপদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে “সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ” এর উদ্যোগে৪১তম বর্ষবরণের শুভ সূচনা হয়।
প্রতিবারের মতো এবারও তাদের স্লোগান ছিল “পহেলা বৈশাখ বাঙালির উৎসব, সবার যোগে জয়যুক্ত হোক”।
ছেলেরা বৈশাখের রং লাল সাদা পাঞ্জাবি কিংবা মেয়েরা লাল পাড়ের সাদা শাড়ির কারুকাজের ঢঙয়ে নগরীর প্রতিটি স্থান ছিল উৎসবের আমেজে লোকে লোকারণ্য। প্রাণের উৎসব বৈশাখ বরণে ছিল শুধু মানুষ আর মানুষ।
এবছর বাংলাদেশের এবং চট্টগ্রামের বিখ্যাত আবৃত্তি সংগঠন বোধন আবৃত্তি পরিষদ তাদের বর্ষবরণ করেছে বাংলাদেশের বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী এবং সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত রণজিৎ রক্ষিতকে স্মরণের মধ্য দিয়ে।
এদিন সকাল আটটায় নগরীর নন্দন কাননস্থ ভূমি অফিসের সম্মুখ চত্বরে বোধন আবৃত্তি পরিষদ এক পথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করে।
যেখানে শিল্পীরা নাচ গান, ঢোল আর তবলায় সুরের মুর্ছনা ছড়ায়। সেই সাথে এই পথ অনুষ্ঠান থেকেই বোধন আবৃত্তি পরিষদের আবৃত্তিশিল্পীরা সুর, তাল, লয়ে শ্রুতিমধুর আবৃত্তি পরিবেশন করেন।
এরপরে বোধনের আবৃত্তিশিল্পীরা একে একে আবৃত্তি পরিবেশন করেন নগরীর জামালখানে ডা: খাস্তগির সরকারি বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিশুমেলার বর্ষবরণ আয়োজনে, চট্টগ্রাম রেড ক্রিসেন্টের আয়োজনে, সিআরবি শিরীষতলা, কলেজিয়েট স্কুল এবং সবশেষে আবারো নন্দন কাননস্থ নগরীর ডিসি হিলে আবৃত্তিশিল্পী সঞ্জয় পালের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় চাটঁগাইয়া ছড়া পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বোধন আবৃত্তি পরিষদ এবছরের মতো তাদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উৎসবমুখর পরিবেশে সফলভাবে সম্পন্ন করেন।
বোধন ছাড়াও চট্টগ্রামের অন্যান্য যে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো রয়েছে — প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, নটরাজ নৃত্যাঙ্গন, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, ওড়িশি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স, সংগীত ভবন, রক্তকরবী, জয়ন্তী, ছন্দানন্দ, গুরুকুল, সুর-সাধনা, সৃজামি, গীতধ্বনি, রাগেশ্রী, বংশী, খেলাঘর, প্রীতিলতা ও সপ্তডিঙা শিল্পাঙ্গন, গুরুকুল, ঘুঙুর, সঞ্চারী, চারুতা, দি স্কুল অব ক্লাসিক্যাল অ্যান্ড ফোক ডান্স, নৃত্য নিকেতন ও কৃত্তিকা নৃত্যালয় প্রভৃতি সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোর মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় মুখর ছিল ডিসি হিল থেকে সিআরবি, শিল্পকলা একাডেমী কিংবা চট্টগ্রামের প্রতিটি উৎসব অংগন।
এছাড়াও প্রতিবছরের মতো এবছর ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। সরকারি সিটি কলেজ, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, চটগ্রামের চারুকলা ইন্সটিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তো আছেই। বাংলা বছরকে বরণ করে নিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যেন এক প্রাণের আয়োজন, নানা রঙে রঙ্ধনুর আয়োজন।
আবহমান বাঙলার এই সাংস্কৃতিক উৎসবগুলো এভাবেই যুগ যুগ ধরে বেচেঁ থাকুক বাঙ্গালির প্রতিটি হৃদস্পন্দনে, হৃদমাঝারে আর চাঁটগাবাসী এভাবেই প্রতিটি বছরের নববর্ষকে স্বাগত জানাক, প্রাণ খুলে বৈশাখ বন্দনায় মাতুক এটাই প্রার্থনা।