চুয়েট প্রতিবেদক
১৯ই নভেম্বর রাত। প্রতিদিনের মতো রাত ৯ টার চুয়েট বাসগুলো ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। অক্সিজেন মোড়ে যখন বাসগুলো পৌঁছায় তখন রাত ৯ টা ৪৫ বাজে। তিনটি বাসের মধ্যে ‘কর্ণফুলী’ সবার আগে ছিলো। বাস যখন ‘ হোটেল জামান’ এর কাছাকাছি আসে তখন স্থানীয় কাঁচাবাজারের কিছু সব্জি-ভ্যান এবং প্রাইভেট কার রাস্তার উপরে থাকায় হেল্পার তাদেরকে বাস চলাচলের পথ খালি করে দেয়ার কথা বলে। এতে লোকাল কিছু যুবক ক্ষীপ্ত হয়ে যায় এবং গালিগালাজ শুরু করে। হেল্পার এর প্রতিবাদ করলে ওই ‘স্থানীয় যুবকেরা’ বাসে উঠে হেল্পার কে চড়-থাপ্পর মারে, গলা চেপে ধরে এবং কলার ধরে নিচে নামায়। এতে বাসের ওই হেল্পারের গলায় আঙুলের ছাপ পড়ে যায়। এরই মধ্যে আরো কয়েকজন ‘উছৃংখল যুবক’ পাশের TIA FASHION থেকে স্ট্যাম্প-রড নিয়ে এসে শো-ডাউন দেয়। এতে বাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা আতংকিত হয়ে পড়ে। এই ঘটনা দেখে একজন শিক্ষার্থী হেল্পারকে বাঁচাতে বাস থেকে নেমে আসে এবং মারধরের শিকার হয়। ততসময়ে আরো দুইটি বাস ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। শিক্ষার্থী রা সেখান থেকে নেমে আসে। ততক্ষনে তারা পালিয়ে যায়। শিক্ষার্থী রা TIA FASHION এ গিয়ে উছৃংখল যুবকদের সাথে তাদের সম্পর্ক কি তা জানতে চায়। উল্লেখ্য, হামলাকারী দু’জন যুবকের একজন হলো TIA FASHION এর মালিক এর চাচাতো ভাই। তার নাম সাদেক (স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা) শিক্ষার্থী রা উত্তেজিত হয়ে প্রতিবাদ শুরু করলে স্থানীয় কয়েকজন নেতা, বায়েজিদ থানার এসআই ও কয়েকজন চুয়েটের শিক্ষার্থী মিলে ‘ হোটেল জামান’ এ মীমাংসা বৈঠকে বসে। ইতোমধ্যে চুয়েটের দুজন শিক্ষক সেখানে উপস্থিত হোন। তাদের নির্দেশনায় জনগনের দূর্দশা লাঘবে চুয়েটের শিক্ষার্থী রা যানজট স্বাভাবিক করে। শিক্ষার্থী দের উপর হামলায় পাশের থানায় জিডি করার জন্য যাওয়ার হয়।
রাত বেড়ে তখন ১২টা। টিউশনি ফেরত ক্লান্ত চুয়েটের শিক্ষার্থীরা তখনো বাসে বসা অপেক্ষমান। কিছুক্ষণ পর একজন মুরুব্বি (পড়ুন লেদু হাজী) লাঠিসোটা হাতে থাকা কিছু যুবককে নিয়ে চুয়েট বাসের সামনে দাঁড়ানো একজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলা শুরু করে। সে নিজেকে শ্রমিক দলের নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়। এতে ওই শিক্ষার্থী তাকে ভদ্রতাসূচক ‘সালাম’ জানায়। সালামের জবাবেই লেদু হাজী তাকে চড় মারে এবং তার সাংগপাংগরা তার উপর আক্রমণ করে। এতে আরো কিছু শিক্ষার্থী বাস থেকে নেমে আসে এবং তারাও এলোপাথাড়ি হামলার শিকার হয়। লেদু বাহিনীর পোষা সন্ত্রাসীরা চুয়েট স্টুডেন্টদের বাঁশ-স্ট্যাম্প-রডসহ আশেপাশে যা পায় তা দিয়েই মারতে শুরু করে। এতে করে কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয় যাদেরকে পরবর্তিতে চুয়েট এম্বুলেন্স দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়। এ ঘটনা আশেপাশে ছড়িয়ে পরলে বাসে থাকা শিক্ষার্থী রা আতংকিত হয়ে পড়ে। নিজেদের আত্মরক্ষার্থে সেখানে সবাই মিলে অবস্থান নেয়। ইতোমধ্যে শিক্ষকরা পুলিশকে নিয়ে সেখানে হাজির হলে ‘লেদু বাহিনীর’ সন্ত্রাসীরা পাশের কসাইপাড়া গলি দিয়ে পালিয়ে যায় এবং সেখান থেকে চুয়েট বাসের দিকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পরিস্থিতি আরো বাজে দিকে যেতে থাকে। সেখানে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা ‘মোটরসাইকেল শোডাউন’ শুরু করে। এমতাবস্থায় শিক্ষকদের নির্দেশনায় চুয়েট বাসগুলো ক্যাম্পাসের উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরু করে। তখন বাজে রাত একটা। এই খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয় এবং ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকে।
*গত পাঁচ মাস আগেও অক্সিজেন মোড়ে চুয়েট বাসে হামলা হয়। এতে একজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। বাসের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়।
*মিথ্যে অপপ্রচার হিসেবে অনলাইনে চুয়েটিয়ানদের ‘সন্ত্রাসী’ বলায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ।
দেশের শীর্ষ মেধাবীদের সম্মান এই সব মিথ্যে অপপ্রচারে নষ্ট হবেনা।
*ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে চুয়েটিয়ানদের অক্সিজেন মোড়ে গেলে হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে। যদিও কাপ্তাই রাস্তার মাথা-বহদ্দারহাট রাস্তা ভাঙা হওয়ায় কুয়াইশ-অক্সিজেন রোডে চুয়েট বাস ও শিক্ষার্থী রা নিয়মিত চলাফেরা করে।
*আজকে কুয়াইশের বিভিন্ন যায়গায় সিএঞ্জি তে তল্লাশি চালানো হয় ‘চুয়েটিয়ান’দের খোঁজে।
এই পরিস্থিতিতে চুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আতংকিত। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হোক। লেদু বাহিনীর বিচার চাই।