খুলনায় পুলিশ কমিশনারকে অপসারণের দাবিতে মহানগর পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে খুলনার সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে এই কর্মসূচি শুরু হয়।
বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে দিতে কেএমপি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সড়কের দুই পাশ অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘বাঁচতে হলে লড়তে হবে’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আস্ত একটা স্বৈরাচার’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
বিক্ষোভে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিই ছিল বেশি। আন্দোলনকারীরা বলেন, খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সাধারণ মানুষ এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁরা ‘অদক্ষ’ পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি চান।
বিক্ষোভ শুরুর কিছুক্ষণ পর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়, পরে তা মুষলধারায় রূপ নেয়। তবু আন্দোলনকারীরা ভিজে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তাঁদের অনেকেই আশপাশের নিরাপদ স্থানে সরে যান।
এর আগেও গত বৃহস্পতিবার নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে একই দাবিতে বিক্ষোভ হয়। সচেতন ছাত্র-জনতার ব্যানারে ওই কর্মসূচি পালিত হয়।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কেএমপি কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারসহ কয়েকজন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে সুকান্ত দাস নামের একজন এসআইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দাবি, পুলিশ কমিশনার অপরাধীদের আশ্রয় দিয়ে খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছেন।
এসআই সুকান্তর বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর খুলনা সদর থানায় একটি মামলা হয়, যেখানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া বিএনপির খুলনা মহানগর সভাপতি শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুরসহ আরও দুটি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসআই সুকান্তকে সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
চলতি আন্দোলনের সূত্রপাত ২৫ জুন। সেদিন থেকে কেএমপি কমিশনারের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। দুই দিনের কর্মসূচি শেষে আন্দোলনকারীরা ২৬ জুন রাতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পর ২৮ জুন তাঁরা আবার কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন। ওই দিন সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম খুলনা প্রেসক্লাবে এলে আন্দোলনকারীরা ক্লাবের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন। পরে তাঁর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আলোচনা হয়। ওই রাতেই আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ কমিশনারকে অপসারণ না করা হলে খুলনার আটটি থানা, দুই উপকমিশনারের কার্যালয় ও কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও করে শহর অচল করে দেওয়া হবে।
পরদিন ৩০ জুন, আন্দোলনকারীরা আবার কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেন। সেখান থেকেই ঘোষণা আসে, ১ জুলাই রূপসা সেতুর টোল প্লাজায় ‘ব্লকেড’ দেওয়া হবে। ঘোষণা অনুযায়ী, ১ জুলাই সকালে আন্দোলনকারীরা রূপসা সেতুর টোল প্লাজার সামনে অবস্থান নেন। এতে সেতুর ওপর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেতুর দুই পাশে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কারসহ শত শত যানবাহন আটকে পড়ে। সেদিনও তাঁরা পুলিশ কমিশনার অপসারণের দাবিতে আইজিপিকে আলটিমেটাম দেন।