Home বাংলাদেশ জেলা কাহালুর টেম্পু চালক এখন সফল মৎস্য চাষি

কাহালুর টেম্পু চালক এখন সফল মৎস্য চাষি

0

মোঃ ফাহিম আহম্মেদ রিয়াদ – (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ

কাহালুর ভালশুন গ্রামের মৃত আঃ কাদেরের পুত্র শহিদুল ইসলাম বাদল ছিলেন একজন সামান্য টেম্পু চালক। টেম্পু চালিয়ে তার ঠিকমত সংসারই চলতোনা। তার উপর যখন বিভিন্ন সড়কে সিএনজি চলাচল শুরু হয় তখন যাত্রীরা আর টেম্পুতে তেমন উঠতো না। তখন আরো অভাব অনটনের মধ্যে পড়েন বাদল। ২০০০ সালের পর থেকে অত্র উপজেলায় মাছ চাষের ব্যপক প্রসার ঘটে।

সেই সময় বাদল টেম্পু দিয়ে অন্যের মাছ বহন করে সংসার চালাতেন। স্থানীয় মাছচাষিদের উন্নতি দেখে বাদল মাছ চাষের ভাবনা মাথায় আনেন। অনেক কষ্টে তিনি জোগার করেন ১৬ হাজার টাকা। এরপর ২০০৩ সালের দিকে অল্প পুঁজি নিয়ে অন্যদের সাথে মাত্র ১৬ হাজার টাকা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন বাদল। এই ১৬ হাজার টাকা পুঁজি থেকে ৩ বছরের মাথায় তার পুঁজি হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। তার তহবিল আস্তে আস্তে বড় অঙ্কে রূপ নেয়। তখন নিজে একাএকায় মাছ চাষ শুরু করেন। যখন একায় মাছ চাষ শুরু করেন তখন কিছু লোক তার প্রতি ঈর্শান্বীত হয়ে রাতের আধারে পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন করে। এ সময় ব্যাপক লোকসানের মুখে পরেন এই মাছ চাষী।

এই দুঃসময়ে বাদলের পাশে দাঁড়ায় ফিড ব্যবসায়ী রুহুল আমিন। রুহুল আমিনের সহযোগীতায় ও তার কঠোর পরিশ্রম তাকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে। ধীরে ধীরে ছোট পুকুর থেকে বড় পুকুর নিয়ে পুরোদমে মাছচাষ শুরু করেন। বাড়াতে থাকে মাছ চাষের পুকুর সংখ্যা। সকল অভাব-অনটন দুর করে বাদল পৌছে যায় উন্নতির শিখরে। এরপর আস্তে আস্তে মাছ চাষের লভ্যংশ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যায়ে নিজস্ব বাড়ি নির্মাণ করেন। জমি কিনেন প্রায় ৫ বিঘা। মুরগী খামার করার জন্য দামী ২০ শতক জায়গা কিনে রেখেছেন। মাছ চাষের পাশাপাশি তিনি আগামীতে আরো উন্নতির লক্ষ নিয়ে মুরগী খামার করার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন। বর্তমানে বাদল ছোট বড় প্রায় ১৪ টি পুকুরে পুরোদমে মাছের চাষ করছেন।

এছাড়াও হ্যাচারী থেকে ডিম সংগ্রহ করে ছোট ছোট জলাশয়ে মাছের পোনাও উৎপাদন করছেন। নিজের চাহিদা পুরুন করে তিনি অন্য মাছচাষিদের কাছেও পোনা বিক্রি করছেন। স্থানীয় লোকজনের মতে ভালশুন ও তার আশে-পাশের এলাকায় মাছচাষী ছিলোনা বললেই চলে। বাদলে উন্নতি দেখে এবং তার পরামর্শ নিয়ে ঐ এলাকায় এখন প্রায় ৩০ জন মাছ করছেন। স্থানীয় মাছচাষিরা যাতে দক্ষ চাষি হিসেবে আরো উন্নতি করতে পারে সে জন্য বাদল ময়মনসিংহ থেকে প্রশিক্ষক এনে এলাকার মাছচাষিদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থাও করেছিলেন। বাদল নিজেও বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষন নিয়ে এখন দক্ষ ও সফল একজন মাছচাষি। স্থানীয় একাধীক মাছচাষিরা জানান, ভালো মাছচাষির তালিকায় বাদলের নাম অনেক আগেই যোগ হয়েছে।

জানা গেছে বর্তমানে বাদল কই, মাগুর, শিং, পাবদা, গলসা, মনোসেক্স, তেলাপিয়া, ব্রিগেড. রুই, কাতলা, মৃগেল ও নদীর মাছ আখলা চাষ করছেন। উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্র জানায় বাদল দু-বছর আগে উপজেলার শ্রেষ্ট মাছচাষির পুরুস্কার পেয়েছেন। সুত্রমতে কাহালুর দক্ষিনাঞ্চলের মাছচাষিদের মধ্যে বাদল এখন অনেক ভালো অবস্থানে আছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, বাদলের বেশী লেখাপড়া না থাকলেও ছেলে মেয়েকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য অনেক টাকা পয়সা খরচ করছে। জানা গেছে মাছ চাষ করে স্বয়-সম্পত্তি কেনার পরও বাদল বর্তমানে পুকুর লীজ ও মাছ চাষে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো নিজস্ব পূঁজি খাটাচ্ছেন। বাদল জানান, আমি মাত্র ১৬ হাজার টাকার পুঁজি দিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। সেই টাকা থেকে মাছ চাষ করেই আমি এতদূর পর্যন্ত এগিয়েছি। উপজেলা সিনিয়ার মৎস্য অফিসার এস. এম. আবুল বাশার জানান, বাদল মাছ চাষ করে এখন মোটামুটি ভালো পর্যায়েই রয়েছে। মাঝে মাঝে আমরা তাকে চাষাবাদ বিষয়ে পরামর্শও দিয়ে থাকি।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version