চট্টগ্রামে মাদক মামলায় প্রকৃত আসামির পরিবর্তে স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যাওয়া এক যুবককে এবার প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। তাঁর নাম মো. রাকিব।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাকিবকে গ্রেপ্তার (শো-কজ অ্যারেস্ট) দেখানোর আদেশ দেন।
কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে ১ জুলাই আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন রাকিব। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন জানান, কোতোয়ালি থানা-পুলিশ প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে রাকিবকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আসামির রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
মামলার পটভূমি
২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় র্যাব এক অভিযানে একটি পিকআপ ভ্যান থেকে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে। ঘটনায় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে আটক করা হলেও তাঁর সহকারী মো. সুমন পালিয়ে যান। পরবর্তীতে র্যাব বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মামলা করে।
পুলিশ তদন্ত শেষে ২০২৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়, যাতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। এরপর আদালত পলাতক সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
সুমন গ্রেপ্তার এড়াতে নিজ জেলার নোয়াখালীর যুবক মো. রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করান। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে রাকিবকে কারাগারে পাঠান। তাঁর পক্ষে আদালতে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ওয়াহিদ মুরাদ।
ধরা পড়ে কারাগারে
আদালতে আত্মসমর্পণের সময় বিষয়টি ধরা না পড়লেও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ে রাকিবের আসল পরিচয় বেরিয়ে আসে। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৩ সাল থেকে কারাগারে ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম’ চালু রয়েছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, কারাগারে আসা প্রত্যেক বন্দির আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। সুমনের হয়ে আসা রাকিব তখন স্বীকার করেন, তিনি ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে মাদক মামলায় আসামি হিসেবে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁকে বলা হয়েছিল, দ্রুত জামিনে মুক্ত করে দেওয়া হবে।
পরবর্তীতে কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আদালতকে চিঠি দিয়ে জানায়। এরপর চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান মামলা করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত।
এই ঘটনায় আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় রাকিব ও মূল আসামি সুমন—উভয়কে আসামি করা হয়েছে। তবে সুমন এখনো পলাতক রয়েছেন।