মোঃ ফাহিম আহম্মেদ রিয়াদ (বগুড়া)ঃ
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার মাঠে শোভা পাচ্ছে গ্লাডিওলাস জাতীয় সুন্দর সুন্দর ফুল। ফুল বিক্রি করে অনেক বেকার শিক্ষিত যুবক ও কৃষক সংসারের বাড়তি আয় করে জীবনযাত্রা কাটাচ্ছেন। বাণিজ্যিক ভাবে এ ফুল চাষ করে ভাগ্য বদলে গেছে অনেকের। এদেরই একজন সোনাতলা পৌর এলাকার চমরগাছা গ্রামের মোন্তেজার রহমান। তিনি ধান, পাট, লাউ, কুমড়া, আদাসহ বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি ফুল চাষ করে সংসারে অভাবনীয় সাফল্য এনেছেন। স্বচ্ছলতা এনেছেন। তিনি মনে করেন ফুল চাষ করা লাভজনক। বর্তমানে বাজারে ফুলের অনেক চাহিদা।
সব ধরণের মাটিতে গ্লাডিওলাস চাষাবাদ করা যায়। তবে দোআঁশ মাটি উত্তম। করম লাগানোর ৭৫-৯০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে। তিনি জানান দীর্ঘদিন আগে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমাকে ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ ও পরামর্শ দেন। সেই মোতাবেক ২০১৩ সালে বাড়ির পাশে চার শতক জমিতে একহাজার টাকা ব্যয় করে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করে সেখান থেকে ১৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করি। ফুল চাষে লাভ হওয়ায় পরবর্তীতে ফুল চাষের পরিধি বৃদ্ধি করি। ২০১৭ সালে এক বিঘা জমিতে দশহাজার টাকা ব্যয়ে ফুল চাষ করে সেখান থেকে দুই লক্ষাধিক টাকার ফুল বিক্রি করি।
এ বছরে তিনি এ পর্যন্ত প্রায় একলাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। আরো কয়েক হাজার টাকার ফুল বিক্রি করবেন। ফুল ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে নগদ টাকায় ফুল ক্রয় করেন। তিনি ফুল বিক্রির টাকায় কয়েক শতক জমি ক্রয়, দুই মেয়ের বিয়ে,আধাপাকা ঘর-বাড়ি নির্মাণ,ছেলেকে লেখাপড়া করানো ও ভাল খাবার খেতে পারছি। গতকাল সরেজমিনে মোন্তেজার রহমানের ফুলের জমিতে গিয়ে দেখা যায় ফুল চাষে স্ত্রী ফাতেমা বেগম তাকে সর্বাত্মক ভাবে সাহায্য করছেন। সংসারের কাজের পাশাপাশি তিনি ফুল উৎপাদনের সাথে জড়িয়ে গেছেন।
তিনি বলেন ফুল চাষ করে এলাকার নান্দনিক সৌন্দর্য্য একদিকে যেমন বাড়ানো যায়, অন্যদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সালাহ উদ্দীন সরদার ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান চমরগাছা গ্রামের মোন্তেজার রহমান ও সুজাইতপুর গ্রামের মোঃ শাকিলকে ২য় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় ফুলের প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। তাদেরকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কারিগরি সহায়তা ও যথাযথ সুপরামর্শ দিয়ে আসছি।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফুল বিভাগে যোগাযোগ করে বিনামূল্যে গ্লাডিওলাস ফুলের বীজ দেয়া হয়েছে। যখন তাদের জমিতে ফুল ফোটে তখন প্রস্ফুটিত নানা রঙের ফুল দেখে আনন্দে মন ভরে ওঠে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফুল বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.কবিতা আনজু-মান-আরা ও বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকসহ অনেকে মোন্তেজার রহমানের ফুলের প্রদর্শনী দেখে প্রশংসা করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে সম্প্রতি যশোর থেকে বিভিন্ন ফুলের বীজ সংগ্রহ করে মোন্তেজার রহমানকে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.কবিতা আনজু-মান-আরা ফুল বিভাগ থেকে সরবরাহকৃত গ্লাডিওলাস ফুলের করম থেকে মানসম্পন্ন ফুলের উৎপাদন দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তিনি পলি ছাউনি চাষাবাদের মাধ্যমে সারাবছর ব্যাপী জারবেরা চাষের প্রতিও সোনাতলার ফুল চাষীদের উদুুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। ফুল বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.কবিতা আনজু-মান-আরা জানিয়েছেন গ্লাডিওলাস সারাবছর চাষ করা যায়। বর্ষাকালে পলি ছাউনি ব্যবহার করে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করলে ফুলের চাহিদা যোগানের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে আরও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি আরো জানান বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে গ্লাডিওলাস ফুলের জুড়ি নেই। বর্তমানে এ ফুল চাষ একটি উৎপাদনমুখী লাভজনক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত উন্নত জাতের বারি গ্লাডিওলাস-৩, বারি গ্লাডিওলাস-৪ ও বারি গ্লাডিওলাস-৫ ফুল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। অতি শ্রীঘ্র ফুল চাষের উন্নত কলাকৌশলের উপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। ভবিষ্যতে ফুল ফসলের ব্যাপক চাষাবাদের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন ও নারীদের কাজের সম্পৃক্ততার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।