ফিদা আল মুগনি
এখনও কেউ হিমু সাজার কথা ভাবে, কেউ রুপা হয়ে জোৎস্না ছুঁতে চায়, মিসির আলীর মত কল্পনার সাগরে ভেসে বেড়ায়, কেউ হয়ে উঠতে চায় শুভ্র, চাঁদের আলোয় নীল হাতি শুড় দুলিয়ে ঝোপ হতে বের হয়ে আসে।
সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকে মৃত্যু অবধি হুমায়ুন আহমেদ লিখে গিয়েছেন কালজয়ী সকল লেখা। তৈরি করে গেছেন অসাধারণ সকল চরিত্র। বাংলা সাহিত্যে হুমায়ুন আহমেদ ছিলেন সংলাপপ্রধান নতুন গদ্য শৈলীর জনক। আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞানের পথিকৃৎও তিনি। একাধারে সাহিত্যিক, নাট্যকার, ছোটগল্পকার। ছিলেন গীতিকার। নন্দিত নরক দিয়ে শুরু করেছিলেন। তারপর উপহার দিয়ে গিয়েছেন শুধু পাঠকদের। পুলিশ কর্মকতা ফয়জুর রহমান সন্তানদের চাহিদা বুঝতেন, তাদের মত ভাবতেন। নিজেও সাহিত্য সচেতন ছিলেন। ফয়জুর রহমান নিজের নামের সাথে মিল রেখে বড় ছেলের নাম শামসুর রহমান রাখলেও পরবর্তীতে নিজেই নাম বদলে হুমায়ুন আহমেদ রাখেন। প্রায় তিনশ এর বেশি বই লিখেছেন, তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র। তার তৈরি হিমু থেকে রুপা যেমন এক ভাবে ভাবায়, তখন মিসির আলী চলে আসেন রহস্য ভরা বাক্স হাতে নিয়ে, শুভ্র চলে আসে মোটা লেন্সের চশমায় পৃথিবী দেখতে।
প্রতিটা চরিত্রে তিনি পাঠককে নতুন করে ভাবিয়েছেন। নতুন করে দেখিয়েছেন। শুধু বড়দের জন্যই না, ছোটদের জন্য রয়েছে বোতল ভুত, পিপলী বেগম, নীল হাতি সহ আরো অনেক চরিত্র।
হুমায়ুন আহমেদ নতুন প্রজন্মকে ভাবতে শিখিয়েছেন। নতুন করে দেখতে শিখিয়েছেন। বইয়ের ভেতর ঢুকে পড়ে খেলা করতে শিখিয়েছেন। তাঁর ভাষায় ‘একজন মানুষকে সত্যিকারভাবে জানার উপায় হচ্ছে তার স্বপ্নটা জানা। রসিক ছিলেন তিনি। হাসাতেও পারতেন সবাইকে।
জাদুকর এসেছিলেন সবার জন্য নীলপদ্ম নিয়ে, ভালোবাসা নিয়ে। অপেক্ষা করতে শিখিয়েছিলেন তিনি। হাজার হাজার হিমু-রুপাদের শিখিয়েছিলেন ভালোবাসা। তিনি ছিলেন ম্যাজিশিয়ান। তার সম্মোহনী ক্ষমতার অধিকারী তিনি। হুমায়ুন আহমেদ আসলে আছেন আমাদের সাথেই। আশে-পাশেই বসে আছেন। হয়ত চাঁদনী পসর রাতগুলোয় তিনি একলা বসে থাকেন। অনন্ত নক্ষত্রবিথী লক্ষ করেন ভক্তের উম্মাদনা।