এবার গরমের ছুটিতে যখন গ্রামে যাব তখন মা বলল,তুই তো সাইকেল চালাতে পারিস না। এবার গ্রামে যাওয়ার পর সাইকেল চালানো শিখে নিস।
আমি বললাম,সাইকেল কার আছে? নানু বাড়িতে তো সাইকেল নেই।
মা বলল আরে তোর মামার একটা পুরোনো সাইকেল আছে সেটাই চালাবি।
পরের দিন সকালে নানু বাড়ির উদ্যেশে রওনা দিলাম।ট্রেনে করে নানু বাড়িতে যাওয়ার প্ল্যান ছিল।তো স্টেশনে যেয়ে ট্রেনে উঠলাম।
আমি যেই সিটে বসলাম তার পাশের সিটে এক বয়স্ক লোক বসে আছে। কিছুক্ষণ পরেই ট্রেন ছেড়ে দিল কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে।
একটু পর বাবা ফোন করে জিজ্ঞেস করল যে ঠিকমত উঠেছি কিনা। আর বলল যাওয়ার পর ফোন দেয়ার জন্য।
কিছুক্ষণ পর ফোনে কিছু প্রকৃতির ছবি তুলতে লাগলাম।আমার ছবি তোলার শখ সেই অনেক আগে থেকেই।
ক্লাস এইটে পড়ার সময় ছবি তোলার প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলাম।
হঠাৎ পাশে বসে থাকা সেই লোকটি জিজ্ঞেস করল বাবা তুমি আমার একটা ছবি তুলে দিবে?আমি প্রথমে একটু ভেবে বললাম,আমি তো প্রকৃতির ছবি তুলি।মানুষের ছবি তুলিনা।লোকটা একটু মন খারাপ করে বলল, আসলে আমার ছেলে বিদেশে থাকে। সে গতকাল বলেছিল তাকে একটা ছবি পাঠিয়ে দেই। কিন্তু আমার তো ক্যামেরা নেই। আর আমার আপনজন বলতে আর কেও ই নেই। আমি তখন বললাম,সামনের স্টেশনে থামার সময় তুলে দেব।
বয়স্ক লোকটি এবার ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে আমার হাতে দিল। কাগজে তার ছেলের ইমেইল এর ঠিকানা দেয়া আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনার ছেলে কবে বিদেশে গেছে? সে বলল, এক সপ্তাহ আগে।
কিছুক্ষণ পরেই একটা স্টেশন এ ট্রেন থামল তখন আমি তার ছবি তুলে ছেলের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলাম।লোকটি খুব খুসি হল।
এরপরে আমি একটা দোকান থেকে চিপস আর বিস্কিট কিনে খেতে লাগলাম।
ট্রেনে উঠে আবার ছবি তুলা শুরু করলাম।একটু পর নানু ফোন করে জিজ্ঞেস করল কোথায় আছি।
নানু বললেন তিনি নাকি আমার জন্য সাইকেল পরিষ্কার করে রেখেছে। আমি বললাম, বাহ বেশ তো আমার আসতে আর মাত্র এক ঘন্টা লাগবে। কথা বলার পর দেখি কামরায় একটি কবুতর উড়ে এসেছে আমি একটা ছবি তুলে সেটিকে ছেড়ে দিলাম বাহিরে।
কিছুক্ষণ পরেই গ্রামে পৌঁছেগেলাম। স্টেশন এ এসে দেখি নানু অপেক্ষা করছে। ট্রেন থেকে ব্যাগ নামিয়ে ইঞ্জিন চালিত ভ্যানে উঠলাম। নানু জিজ্ঞেস করল “তা অভি তুই এবার একা এলি কেন?”
আমি বললাম, তুমি তো জানোই তোমার মেয়ে জামাই দুজন ই ব্যাংকার আর এবার তারা ছুটি ম্যানেজ করতে পারেনি। তাই আমাকে একাই পাঠিয়ে দিল।নানু তখন বলল, এবার তোকে সাইকেল চালানো শিখিয়ে দেব। গল্প করতে করতে নানু বাড়িতে চলে এসেছি।গেটে শৈলী,কারু, মাসফিয়া, মাহি, আকিব, অনন্যা, একসাথে বলে উঠল হুররে অভি ভাইয়া এসেছে। আমি বুঝতে পারলাম অনেকদিন পর আসার জন্য ওরা অনেক খুশি হয়েছে। শৈলী,মাহি আর অনন্যা ক্লাস এইটে পড়ে এবং মাসফিয়া, কারু ও আকিব ক্লাস নাইনে এ। আমাকে দেখে অনন্যা বলে উঠল অভি ভাইয়া এবার কিন্তু বেশিদিন থাকতে হবে। পাশ থেকে আকিব বলল আরে ভাইয়ার তো পরীক্ষা দিয়ে আসেনি যে ছুটি বেশিদিন। আমি বললাম আচ্ছা আমি বেশিদিন ই থাকব। একটু পরে মাসফিয়া ফিশ ফিশ করে বলল ওকে শান্তনা দিচ্ছো তাই না?
আমি বললাম আরে ছোটদের তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু শান্তনা দেয়াই লাগে হাহাহা।
কিছুক্ষন পরে বিকালে সব মামাতো ভাই বোনদের সাথে আশেপাশে ঘুরে দেখলাম।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নানু বাড়ির উঠানে সাইকেল চালানোর জন্য রেডি করে রেখেছে।
আমি প্রথমে পিছনের সিটে বসে চালাতে লাগলাম কারন পরে গেলে তো পা খুব সহজেই নামানো যাবে।
এভাবে কিছুদিন চালানোর পর আস্তে আস্তে উপরের সিটে বসে চালানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।
এভাবে দুদিন পরেই সাইকেল চালানো শিখে গেলাম। তো একদিন বিকালে সাইকেল চালানোর পরে যখন সাইকেল তালা দিতে যাব তখন হুট করে সাইকেলের বেল একাই বেজে উঠল আমি প্রথমে ভাবলাম মনের ভুল।তাই সাইকেল তালা দিয়ে চলে এলাম।সন্ধার সময় আমরা সবাই গল্প, আড্ডা দেয়া শুরু করলাম।
এরপরের দিন সকালে আমি একাই সাইকেল নিয়ে ঘুরতে গেলাম। যখন চালাচ্ছি মনে হচ্ছে পিছনে কেও বুঝি বসে আছে।কিন্তু পিছে তো কেও নেই। কিছুক্ষণ পর সাইকেল চালানো বন্ধ করে গাছের পাশে রেখে সাইকেল রেখেদিলাম। হুট করে খেয়াল করলাম বেল বাজছে। তখন আসে পাশে কেও ছিল না। কিছুক্ষণ পর একাই থেমে গেল। তখন আমি আবার সাইকেল চালানো শুরু করলাম। এবার মনে হচ্ছে না যে পিছে কেউ বসে আছে। তখন আমি অনেক জরে সাইকেল চালিয়ে বাসায় আসলাম।
বাসায় আসার পর আকিব জিজ্ঞেস করল অভি ভাইয়া তা নতুন চাইকেল চালানো শিখে কেমন লাগছে??
তখন বললাম সেই ভালো। একটু পর মাহি এসে আবদার করল যে তাকে চাইকেলে ঘুরে বেরাতে হবে।আমি বললাম আগে নিজে ভালো করে শিখে নেই।তখন মাহি একটু মন খারাপ করল।ভাবলাম বেচারাকে মন খারাপ না করিয়ে বরং ঘুরতে নিয়ে গেলেই ভালো হয়।কিছুক্ষণ পরে দুইজন একসাথে বের হলাম। মাহি পিছে উঠল।
কিন্তু যখন চালাচ্ছি মনে হচ্ছে পিছে কেউ নেই। আমি জিজ্ঞেস করলাম মাহি আছিস তো? মাহি বলল হু অভি ভাইয়া খুব মজা লাগছে। আমি তখন ভাবলাম এটা মনের ভুল হবে।বিকালের পর ২জন বাসায় আসলাম।সন্ধ্যার সময় যখন সাইকেল পরিষ্কার করে রুম এ ঢোকাব তখন খেয়াল করলাম দুই চাকার হাওয়া একেবারেই শেষ। তখন ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগল। কারন গতকাল ই ত চাকায় হাওয়া দেয়া হল।তখন আমি রুমে সাইকেল রেখে নিজের ঘরে এসে ঘুমিয়ে গেলাম।
খুব ভরে ঘুম ভেঙে গেল। সাইকেল এর কাছে গিয়ে দেখি ছোট্ট একটা চিরকুট তাতে লেখা-
আমি তো প্রথমে অবাক এরপরে সকালের নাস্তা করার জন্য যখন ডাইনিং এ আসলাম তখন নানু একটা বাচ্চা মেয়ের কথা বলেছে।মেয়েটি দুইমাস আগে সাইকেল চালাতে যেয়ে রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে মারা গিয়েছিল। সে খুব পছন্দ করত সাইকেল চালাতে।
তখন বুঝলাম ওর আত্মা আমার কাছে এসেছিল।
ভাবলাম বিষয়টা নানুকে বলব কিন্তু আর বলতে ইচ্ছে হল না।
দেখতে দেখতে ঢাকায় ফিরে যাওয়ার দিন চলে এলো। নানু বলল আবার যখন ছুটি পাবি তখন সাঁতার শেখাব।
আমি আর নানু একসাথে ট্রেন স্টেশনে গেলাম।আমি ট্রেনে উঠার কিছুক্ষণ পরেই ছেড়ে দিল ট্রেন।