নাম:মো:আল জোবায়ের আলিম
দিনটা ছিল সোমবার, তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৭।
কোচিং এর উদ্দেশ্যে রওয়া দিলাম সকাল ৭.৩৫ । শীতের সকাল বলে একটু রকটু ঠাণ্ডা ও পড়তেছিল। যাইহোক, আগ্রাবাদ থেকে টেম্পু পেতে প্রতিদিনের মতো খুব বেশি দেরী হলো না। উঠে পড়লাম তখন টেম্পুতে আমি সহ সাতজন ছিলাম। কিন্তু আশ্চর্যকর কথা হলো আমি ছাড়া বাকি ছয় জন ই মেয়ে ছিল। যেখানে প্রতিদিন বারো জনের মধ্যে গুটিকয়েক জনের চেয়ে বেশি মহিলা থাকত না।
কিছুক্ষন পর আরো দুইজন ছেলে তিনজন মেয়ে উঠল।
প্রায় সবার ব্যাগ ছিল বলে সহজেই বুঝা যাচ্ছে, আমার মতোই সবায় প্রাইভেট / কোচিং পড়তে যাচ্ছে।
যাহোক, অনেক্ষন ধরে বাহিরে তাকিয়ে ভোরের প্রকৃতি দেখছিলাম, হঠাৎ আশ্চর্য হলাম ডানপাশে সামনের সারির দিকে ছোখ পড়তেই।দেখলাম হলুদ জামা পড়া, ওড়না দিয়ে সুন্দর করে ঘোমটা পরা একটা মেয়ে চুপ করে বসে আছে এক কোনে, যেখানে বাকি সব মেয়েগুলোর মুখে কথার ফুলঝুরি ফুটছিলো।
এভাবেই পৌছে গেলাম চকবাজার।
আশ্চর্যতো আমি তখন ই হলাম, যখন কোচিং থেকে ফিরার পথে টেম্পুর জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় সেই মেয়েটিকে আবারো দেখলাম। অবশ্য একজন বান্ধবী ছিল ওর সাথে। কিছুক্ষণ পর একটা প্রায় খালি টেম্পু আসলেও ভিড় ঠেলে আর উঠা সম্ভব হলো না।
আরেকটা টেম্পু আসা মাত্রই উঠে পড়লাম, একেবারে বাম পার্শের (দরজার সাথের) সিটে বসলাম। তৃতীয়বারের মতো আমি চমকে গেলাম তখনি, যখন ঐ মেয়েটি ও টেম্পুতে উঠে আমার মুখোমুখি সিটে বসল।
এবার মেয়েটি অনেক কথা বলছিল কিন্তু খুবই নিচু কণ্ঠস্বরে, যা আমার কান অব্দি এসে পৌছায় নি, মেয়েটির বান্ধবী আর মেয়েটি হাসছিল প্রচুর। অদ্ভুতভাবে বারবার ওর দিকে তাকাতে মন চাইলেও তাকানোর পক্ষে মন শাঁই দেয় নি। কিছুরাস্তা যাওয়ার পর মেয়েটির বান্ধবী নেমে গেল।
আবারও একাকীত্ব বোধ করতে দেখলাম মেয়েটিকে, মুখের হাসি নিমিশেই চলে গিয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেল। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে চলে এলাম আগ্রাবাদ, ঠিক যখন নেমে যাচ্ছিলাম, তখন আমি চতুর্থবারের মতো আশ্চর্য হলাম। আমার সাথে মেয়েটি ও নেমে গেল। আর যখন ভাড়া দিতে আসলাম, তখন দেখি, ”ভাড়া রাখুন” বলে উঠল পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি।
আমি ও ভাড়া দিয়ে চলে আসছিলাম, যাওয়ার পথে পিছন ফিরে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল, পিছন ফিরতেই দেখি রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি।
আর সময় নষ্ট না করে বাসায় ফিরে আসলাম।
আর বার বার ঐ একটা শব্দই কানে বাজে, “ভাড়া রাখুন”।
পৃথিবী গোলাকার, সেই শর্তে হয়ত আবার দেখা হয়ে যাবে সেই অপরিচিতার সাথে- অন্য কোন স্থানে, অন্য কোন ভাবে, অন্য কোন সময়ে।
হয়ত কেউ কাউকে চিনতে পারব না। হয়তবা আবার আশ্চর্যজনকভাবে আশ্চর্য হবো।
অবশেষে দিনলিপি হিসেবে লিখে রাখলাম।