-মুহতাসিম ফাহাদ মাহিন
মাতবর সাহেব তার ছোট ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুলিশের সাথে কথা বলছেন। এ ব্যাপারে একটা সমাধান করতেই হবে। “কালু কেবল যুবক। একটু অসৎ সঙ্গ পাইয়া নেশার জগতে প্রবেশ করছে। এ বয়সে টুকটাক এমন হয়ই, বুঝেন তো সবই বয়সের দোষ।” পুলিশকে এভাবে পাঁচ সাত বুঝিয়ে হঠাৎ কানের কাছে গিয়ে আস্তে বলে উঠলেন, “৩০,০০০ হাজার টাকা দিমুনি। কালু আমার বড় পোলা, ওরে থানায় দেখলে এলাকায় আমার সুনাম নষ্ট হইবো, দেখেন না পুলিশ সাহেব কিছু করা যায় কিনা। আপনি চাইলে অংকের পরিমান না হয় একটু বাড়ায়া দিবো! ওসি সাহেব হাত চুলকিয়ে বললেন, “৫০ এর নিচে এরকম কেস সমাধান করা যায় নাকি? নেশা করতে যেয়ে সরাসরি ধরা পড়েছে, একটু খরচা তো আপনার করতেই হবে” মাতবর সাহেব মনে হয় আর কথা বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছেন না। বাচ্চা কে কোল থেকে নামিয়ে পুলিশের সাথে হাল মিলিয়ে বললেন, “কালুরে পাঠায়া দেন, সময়মতো পঞ্চাশ চলে যাইবো।”
পেছন থেকে মাতবর সাহেবের ছেলে লুঙ্গি টান দিয়ে ধরে বায়না শুরু করলো, “বাবা পাপড় ভাজা খাবো।” পুলিশের সামনে ছেলেকে না করতেও পারছেন না উনি, আবার ছেলেও বেজায় কঠোর, আজকে কিনে দিতেই হবে। মাতবর সাহেব পাপড় ওয়ালাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, “কতো রে?” “জ্বি কাকা দশ টাকা প্যাকেট!” “কস কি! দুইটা দে”
দুই প্যাকেট পাপড় ভাজা নিয়ে মাতবর সাহেব পকেট থেকে পনের টাকা বের করে বিক্রেতার হাতে দিলেন। ” কাকা দুই প্যাকেট তো বিশ টাকা।” “ধুর বেটা! পনের টাকা দিসি এইডা তোর ভাগ্য! আরো চাস কেন? সারাদিন তো বিক্রিই করতে পারতিনা, পনের টাকা পাইছোস তবুও খুশি না?”
পাপড় ওয়ালা মাথা নিচু করে চলে গেলো, সে জানে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। মাতবরের ছেলে পাপড়ের প্যাকেট খুলে খেতে শুরু করলো, পুলিশও কথা সব পাকা করে চলে গেলো! বিকেলেই কালু ছাড়া পাবে। কালু থানা থেকে কথাটা শুনে খুব খুশি। ভাবছে রাতে আবার শিমুলদের ডেকে নেশার আসর বসাবে সে। মাতবর তার চেক বইয়ে সাক্ষর করে ৫০,০০০ টাকা পাঠিয়ে দিলো।
আর পাপড় ওয়ালা দিনশেষে পঁয়ত্রিশ টাকা নিয়ে ঘরে ফিরলো! আজও কেরোসিন কেনা হলোনা! চাল এখন পঞ্চাশ টাকা কেজি। হাফ কেজি চাল আর দুই টা আলু নিয়ে বাসায় ফিরলো পাপড় ওয়ালা। তার ছেলের মন খারাপ। আজ রাতেও পড়া হবেনা। বাতিও জ্বালাতে পারবেনা। পাপড় ওয়ালা চিন্তিত পরবর্তী দিন নিয়ে। কালু একচিত্তে ধুয়া টেনেই যাচ্ছে। মাতবর তো নাক ডেকে ঘুম। ভোর হওয়ার পথে।। কারো জন্য আসছে নতুন সকাল, কারো জন্য পরিচিত সেই কষ্টে মাখা চিন্তিত আরেকটি দিন। আগামী রাতে বাবা কেরোসিন নিয়ে আসবে তো?