Tuesday, July 29, 2025
27.1 C
Dhaka

আবদুল্লাহ কাফির গল্প ‘জাদুর শহর’

জাদুর শহর
আবদুল্লাহ কাফি

বিকেল৷ পশ্চিম আকাশে সূর্য নেমে যাচ্ছে৷ সূর্যের আলো পড়েছে পানিতে৷ মনে হচ্ছে দু’টো সূর্য৷ আকাশে আর পানিতে৷ লোক সমাগম বাড়ছে৷ বিকেলে হাতিরঝিলে মানুষের ভালোই চাপ পড়ে৷ হাঁটতে বেড়াতে আসে৷ আবদ্ধ জীবনে একটু সতেজ নিঃশ্বাসের খোঁজে৷ আজ শুক্রবার৷ চাপ একটু বেশিই পড়বে৷ ছুটির দিন বলে কথা৷

সাইফ নিতুর সাথে শেষবার এখানে এসেছিলো সপ্তাহ দুই আগে৷ মঙ্গলবার বিকেলে৷ ওরা যতবার এসেছে, সোম মঙ্গলবারেই৷ সপ্তাহ’র মাঝে৷ সপ্তাহ’র মাঝে এদিকে চাপ কম থাকে৷ জটলা পছন্দ না নিতুর৷ কম মানুষের গোছানো পরিবেশ চাই তার৷ না হয় আজ ওকে ডাকতে পারতো সাইফ৷ বিকেলটা উপভোগ করতে পারতো৷

সাইফ৷ সাইফ উদ্দিন৷ গ্রামের পাঁচটা ছেলের মতোই একজন৷ সহজ৷ সরল৷ মালিবাগ একটা কলেজে পড়ে৷ বছর খানেক হলো ভর্তি হয়েছে৷ ঢাকায় আত্মীয় বলতে কাকা ছাড়া কেউ নেই৷ আপন না৷ একই গ্রামে বাড়ি, তাই৷ সাভার থাকে৷ চাকরী করে৷ ঢাকায় নতুন এসে একবার বেড়াতে গিয়েছিলো সাইফ৷ তারপর আর যায়নি৷ চাচীর চেহারা মনে পড়লেই বেড়ানোর ইচ্ছে চুকে যায়৷

বেকারের দুই বিপদ৷ তাড়াতাড়ি ক্ষুধা লাগা আর সময় না কাটা৷ সাইফ বিকেল থেকেই বেকার৷ সময় একেবারেই কাটছে না তার৷ বসে থেকে থেকে পিঠ ধরে গেছে৷ সময় কাটাবার জন্য সে একটু হাঁটে৷ বসে৷ আবার উঠে৷ হাঁটে৷ বসে৷ বিকেল থেকে এই একই কাজ করছে৷ হেঁটে হেঁটে আশপাশ দেখতে খারাপ লাগে না সাইফের৷ কিন্তু ক্ষুধা সে সুযোগ দেয় না৷ ক্লান্তি লাগে৷ দুপুর থেকে কিচ্ছু পড়েনি পেটে৷ সকালে হোস্টেলে খিচুরী খেয়ছিলো৷ বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পেরুলো৷ রাত হচ্ছে৷ আকাশে চাঁদ উঠেছে৷ থালার মতো৷ সাইফ চাঁদকে ঝলসানো রুটি ভেবে ভুল করে৷ জোছনার আলোয় পানি দেখে তৃষ্ণা বেড়ে যায়৷ তৃষ্ণার চূড়ান্ত হয় রাস্তার পাশে ডিপ ফ্রিজ দেখে৷ পানির ঠান্ডা বোতল আর আইসক্রিম দেখে৷ ফ্রিজওয়ালার কাছে পানি চাইতে গেছিলো একবার৷ চায়নি৷ সাইফ ফ্রিজের পাশে দাড়িয়েছে৷ আট নয় বছরের একটা মেয়ে দৌড়ে এলো৷ ভাংতির জন্য৷ পঞ্চাশ টাকার নোট৷ ওজন মাপার একটা মেশিন নিয়ে ফুটপাতে বসে মেয়েটা৷ ভাংতির জন্য নোট এগিয়ে দিতেই দোকানি খপ করে মেয়ের হাতটা ধরে ফেললো৷ ‘বলো৷ তোমার নাম বলো৷ নাম বললেই ভাংতি দেবো৷’ কাচুমাচু হয়ে যায় সে৷ লজ্জায় লাল হয়ে উঠে চেহারা৷ বলে, ছাড়েন৷ হাত ছাড়েন৷ আমার ভাংতি লাগবো না৷
হ্যাচকা টানে হাত ছাড়িয়ে চলে যায়৷ রাগে, ঘৃণায় সাইফের মুখে থু থু এসে যায়৷ কার কাছে সে পানি চাইতে এসেছে!

রাত বাড়ার সাথে সাথে হাতিরঝিলের চেহারা পাল্টে যাচ্ছে৷ মানুষ কমতে শুরু করেছে৷ সন্ধ্যায় গিটার নিয়ে গান করা দলগুলোও উঠে যাচ্ছে৷ বাড়ি ফিরছে৷ পানিতে ভাসতে থাকা বোটগুলো নেই৷ সব পাড়ে বাঁধা৷ অথচ, সন্ধ্যায় এগুলো এখানে সেখানে ভাসছিলো৷ চলছিলো৷ প্রেমিকার হাত ধরে দূরে ভাসিয়ে নিচ্ছিলো প্রেমিক৷ স্ত্রীর পাশে স্বামী৷ সাইফ বুঝতে পারছে না, এখন তার কি করা উচিত৷ রাতটা হাতিরঝিলেই কাটিয়ে দেবে নাকি অন্য কোথাও? ভেবেছিলো, একটাই তো রাত৷ হাতিরঝিলে হেঁটে বসে কাটিয়ে দেবে৷ হাতিরঝিল এমন খালি হয়ে যাবে, সে ভাবেই নি৷ হাতিরঝিল ছাড়া যাবেই বা কোথায়? ঢাকায় সে নতুন৷ চিনে খুব কম জায়গা৷ চিন্তা হচ্ছে ওর৷ ওর চিন্তায় ছেদ পড়ে এক মহিলার প্রশ্নে৷
—কি মামা? লাগবো নাকি?
সাইফ সহজ করে উত্তর দেয়,
—লগবো মানে? আমার কিছু লাগবে না৷
মহিলাটা কেমন ভেংচি কেটে চলে যায়৷ সাইফ বুঝে না, কি এমন বললো সে!

জুমার নামাজ পড়ে হোস্টেলে এসেছে সাইফ৷ একটু পরেই জনি দাঁড়িয়ে তার দরজায়৷ সাইফ খানিক অবাক হয়৷ জনি উপর ক্লাসের ছাত্র৷ রাজনীতি করে৷ কলেজে তার ভালোই দাপট৷ সাইফকে ডেকেই দিলো এক থাপ্পড়৷ তারপর অকথ্য গালি৷ জনির সাথে আরো কয়েকজন৷ তারই সাঙ্গোপাঙ্গো৷ রুমেল জনির খাস লোক৷ সবাই বলে ডান হাত৷ রুমেল এগিয়ে এসে বলে, তোরে ওয়ার্নিং দিছিলাম না? কইছিলাম না ভাবীর সাথে না মিশতে৷ নিতু প্রেম করলে একমাত্র ভায়ের সাথেই করবে৷ যা শালা৷ ভাগ৷ তোরে হোস্টেলেই থাকতে দিমু না৷ দেখি তোর কোন বাপে কি করে!
আরেকজন সাইফের ফোন কেড়ে নেয়৷ আছড়ে ভেঙ্গে ফেলে৷ সাইফ আকুতি-মিনতি করে৷ জনির পায়ে পড়ে৷ কাঁদে৷ কে শোনে কার কথা৷ জনিরা আরো চটে যায়৷ সাইফকে মারধর করে৷ বের করে দেয় হোস্টেল থেকে৷ বলে দেয়, হোস্টেলের ত্রিসীমানায় আর যেনো না দেখে৷

হাতিরঝিল জনমানব শূন্য৷ সাইফের সাথে ঘড়ি নেই৷ চাঁদ মধ্য আকাশে৷ লোকজন নেই৷ মাঝে মাঝে দু’য়েকজনকে দেখা যায় খুব দ্রুত হেঁটে যেতে৷ এর মানে অনেক রাত৷ যে দু’য়েকজনকে দেখা যায়, এরা হয়তো কোনো কাজে আটকে গিয়েছিলো৷ নয়তো কোনো কাজে বেরুচ্ছে৷ বিকেলের গল্পে মেতে উঠা, আড্ডাবাজ মানুষগুলোকে সাইফ মনে মনে খুঁজে৷ কেউ নেই৷ কোথাও নেই৷ সাইফ একা৷ ভয় ভয় লাগে৷ ক্ষুধা বাড়ছে৷ এক লোক বিশ টাকায় তাকে ‘পুটলা’ সেধেছিলো৷ সে টাকা নেই বলে বিদেয় করে দিয়েছে৷ এখন ‘পুটলা’র কথা মনে পড়লেই সাইফের ক্ষুধা বেড়ে যাচ্ছে৷ বিশ টাকা থাকলেই হতো৷ এক পুটলায় কিছু না হোক, পেটের জ্বালা একটু তো কমতো!

দুপুরে হোস্টেলের দ্বায়িত্বশীল কেউ ছিলো না৷ কারো কাছে নালিশ করেতে পারেনি৷ সাইফের দু’জন বন্ধু আছে৷ ঢাকার বাসিন্দা৷ ফোন থাকলে ওদের সাথে যোগাযোগ করতে পারতো৷ বসায় যেতে পারতো৷ হোস্টেল থেকে সোজা হাতিরঝিলে চলে এসেছে সে৷ জায়গাটা তার চেনা৷ আগে এসেছে কয়েকবার৷ কিন্তু রাতের এই ভয়ানক নির্জন, গা ছমছমে পরিবেশের সাথে পরিচিত না সে৷ সে দেখেছে গানের দল, বন্ধুদের দৌড় ঝাপ আর প্রেমিকদের হাতে হাত৷ ঘুরতে আসা পরিবার, বিকট শব্দ করে দৌড়ানো বাইক আর হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সর্ভিসের বাসে ঝুলতে থাকা যাত্রী৷ বাদাম, পানি আর সিগারেট বিক্রেতা৷ তার টেনশন বাড়ছে৷ একা একা কি না কি হয়! জোছনায় চারপাশ ঝলসে যাচ্ছে৷ পুকুরের পানি চিকচিক করছে৷ আকাশে ফুটেছে তারকারাজি৷ ভয়, ক্ষুধা আর টেনশনের ভেতরও সাইফ ভাবে, নিতু থাকলে খারপ হতো না৷ জোছনা বিলাস বলে কিছু থাকলে, এটাই প্রকৃত সময়৷ শুনশান পরিবেশ৷ নিরব নির্জন৷ দশ আঙুলকে পাঁচ আঙুল করে প্রেমের গল্প৷ চাঁদ, তারা আর আকাশের গল্প৷ ভাবতেই ভালো লাগে৷

রাস্তার পাশে বসে আছে সাইফ৷ সবুজ ঘাসে৷ ভাবছে শুয়ে পড়বে কিনা৷ ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখ৷ গাছ থেকে কয়েকটা পাতা ছিঁড়ে নিলে ভালো হয়৷ গায়ে ময়লা লাগার চান্স থাকবে না৷ রাতটা কাটলেই হয়৷ এটা হবে সাইফের জীবনের সেরা রাত৷ নিতুর সাথে গল্প করা যাবে৷ নিতু অবাক হয়ে বলবে, তারপর? চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেলে? আমার কথা একবারও মনে পড়লো না? সাইফ নিতুর কপালের এলোমেলো চুল সরাতে সরাতে বলবে, মনে পড়েছে৷ খুব মনে পড়েছে৷ ভরা জোছনায় তোমায় সব সময়ই মনে পড়ে৷ এসব ভাবতে ভাবতে গাড়ির ব্রেক কষার শব্দে পেছনে তাকালো সে৷ একটা গাড়ি থেমেছে ওপাশে৷ এতো রাতে এখানে গাড়ি থামার কথা না৷ সেই কখন থেকে রাস্তায় গাড়িই নেই৷ যাও দু’য়েকটা আসে, শাঁই শাঁই করে বেরিয়ে যায়৷ গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেলো নাকি! দু’জন লোক গাড়ি থেকে নেমে তার দিকে এগুচ্ছে৷ সাইফ ওদের খেয়াল করছে৷ কাছে আসার পর বুঝলো, দু’জন পুলিশ৷ খাকি পোষাক পরা৷ তাহলে ওটা পুলিশ ভ্যান৷ সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না৷ পুলিশ তার কাছে কেনো আসবে!
—কিরে! এতো রাতে এখানে কি করস? কিছু খাইছস নাকি ধান্দা করস, হ্যা? চল, স্যারের কাছে চল৷
পুলিশ দু’জন সাইফকে টেনে তুলে৷ অবাক হয়ে বলে সাইফ, কিসের ধান্দা স্যার? কোনো ধান্দা না৷ এমনি বসে আছি৷
—চোপ শালা৷ মুখে মুখে কথা? চল, স্যারের কাছে চল৷
সাইফকে পুলিশ দু’জন টেনে নিয়ে যায় গাড়ির কাছে৷ মনে মনে ভাবে সাইফ, সে আবার কিসের ধান্দা করবে? খাবেই বা কি? সেই দুপুর থেকে তো কিছুই খায়নি৷ একটু পানিও না৷
—স্যার! গাছতালায় একা একা বসে ছিলো৷ ব্যাবসা ট্যাবসা করে মনে হয়৷ পুলিশ দু’জন তাদের স্যারের কাছে বলে৷ ভ্যানের সামনে ড্রাইভারের সাথে বসা মোটা মতোন পুলিশটা এবার মুখ খোলে৷
—কিসের ব্যাবসা করস?
—কোনো ব্যাবসা করি না স্যার৷
—তাইলে এতো রাতে এখানে কি করস?
—কিছু করি না৷ এমনি বসে আছি স্যার৷
—এমনি? থানায় চল৷ ডান্ডার বারি পড়লে ঠিকই বলবি৷
সাইফকে পুলিশ দু’জন ধরে রেখেছে৷ কিছুটা ভড়কে যায় সাইফ৷ ফ্যাকাসে চেহেরা নিয়ে কি বলবে ভেবে পায় না৷ কিসের ব্যাবসা? কিসের থানা? ডান্ডাই বা কেনো মারবে? সাইফ মিনতির সুরে বলে, আমি কিছু করিনি স্যার৷ বিকাল থেকে এমনি বসে আছি৷ থাকার জায়গা নেই স্যার৷ অফিসার এবার রেগে উঠে৷ পুলিশ দু’জনকে ধমক দিয়ে বলে, যাও৷ গাড়িতে তুলো৷ শালারে থানায় নিয়া বানানি দিলেই সব বের হবে৷ শালা৷ বিকাল থেকে বসে আসে৷

সাইফকে পুলিশ ভ্যানে তোলা হচ্ছে৷ ‘কিছু করিনি, কিছু করিনি’ বলে কাকুতি-মিনতি করছে সাইফ৷ দূর থেকে ভেসে আসছে গানের সুর৷ ‘ঢাকার শহর, জাদুর শহর৷

Hot this week

নীল শাড়ি রূপা আর এক হিমালয়ের হিমু

সেদিন হিমালয় থেকে হিমু এসেছিল। মো. মোস্তফা মুশফিক তালুকদার। মাথার উপর...

সিজিপিএ বনাম অভিজ্ঞতা — মাহফুজা সুলতানা

বন্ধু, তোমার সিজিপিএ আমায় ধার দিও। বিনিময়ে,আমার থেকে অভিজ্ঞতা নিও।...

‘দেবী’কথনঃ একটু খোলামেলাই!

জুবায়ের ইবনে কামাল আপনি কি দেবী সিনেমা নিয়ে আমার মতই...

শরৎকাল: কাশের দেশে যখন প্রকৃতি হাসে !

ইভান পাল || আজ কবিগুরুর একটা গান ভীষণ মনে পড়ছে--- "আজি...

মাওঃ সাদ সাহেবের যত ভ্রান্ত উক্তি

বেশ কিছুদিন যাবৎ মাওঃ সাদ সাহেবকে কেন্দ্র করে তাবলীগ...

আজ “পানিতে ডুবে মৃত্যু পরিহার দিবস” আর একটি শিশুর প্রাণও যেন হারিয়ে না যায়

বদরুল ইসলাম (বরগুনা) আজ ২৫ জুলাই—বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ...

আলেমদের গালি দেওয়া নয়, সম্মান করাই আমাদের করণীয়

বদরুল ইসলাম যে জাতি আলেমদের অবমাননা করে, তারা ধ্বংস হয়ে...

আগুনে পুড়ে মৃত্যু: শাহাদাতের মর্যাদা

বদরুল ইসলাম (বরগুনা) আমরা প্রায়ই খবরের কাগজে, টেলিভিশনে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায়...

বরগুনায় ডেঙ্গুতে আরও এক নারীর মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৪ হাজার

বদরুল ইসলাম (বরগুনা) বরগুনা জেলার ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন আরও...

স্বামীকে হত্যা করে বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখলেন স্ত্রী, আসামে চাঞ্চল্য

ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে এক নারীর হাতে স্বামী হত্যার...

সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করা হোক: একটি বাস্তবমুখী ও মানবিক দাবি

বদরুল ইসলাম বাংলাদেশের কোটি কোটি তরুণ শিক্ষিত হচ্ছেন, স্বপ্ন দেখছেন...

গাজায় পানির খোঁজে গিয়ে ৬ শিশুসহ ১০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েল

গাজায় পানির তীব্র সংকটের মধ্যেও থেমে নেই ইসরায়েলের হামলা।...

সাভারে মাদকের ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ, ছুরিকাঘাতে শিশু হত্যা

ঢাকার সাভারে মাদক সেবনের সময় ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জেরে...
spot_img

Related Articles

Popular Categories

spot_imgspot_img