-সাবা সিদ্দিকা সুপ্ত
মাটির ময়না; এই ইতিহাসমন্ডিত চলচিত্রের কথা শুনলে এক বাক্যেই যার নাম মনে পড়ে তিনি হলেন কালজয়ী চলচিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ। আলোকচিত্র ও চলচিত্রে তাঁর অসামান্য অবদান এবং নিপুণতা বাংলাদেশের শিল্পজগতে এক অসাধারণ ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে।
তারেক মাসুদ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ফরিদপুর জেলায় ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম নুরুন নাহার মাসুদ এবং বাবার নাম মশিউর রহমান মাসুন। ফরিদপুরের ভাঙা ঈদগাহ মাদ্রাসায় তাঁর প্রাথমিক পড়াশোনার চৌকাঠের সূচনা ঘটে। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ছ’মাস চালিয়ে যাবার পর নটরডেম কলেজে পুনরায় লেখাপড়া শুরু করেন। পরপবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে তিনি স্নাতকোত্তর অর্জন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময় থেকেই বাংলাদেশ চলচিত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং তখন থেকেই আলোকচিত্র গ্রহণের চর্চা করেছেন। ১৯৮২ সালে ‘বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ’ থেকে ফিল্ম এপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করে তিনি দেশের বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনীর ওপর ডকুমেন্টারি চলচিত্র নির্মাণ করেন যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সারা ফেলে।
২০০২ সালে তারেক মাসুদের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচিত্র “মাটির ময়না” মুক্তি পায়। চলচিত্রটি ‘কান’ উৎসবে প্রদর্শিত হলে উভয় দেশে এটি নানা পুরস্কার অর্জন করে। তাঁর প্রথম সল্পদৈর্ঘ্য চলচিত্র ‘সোনার বেড়ি’ (১৯৮৫) এবং প্রথম পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচিত্র ‘রানওয়ে’ মুক্তি পায় ২০১০ সালে। চলচিত্র জগতে তাঁর অসামান্য অবদানের কারণে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে ‘একুশে পদক’ প্রদান করে।
তাঁ স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ এবং এক পুত্র ‘বিংহাম পুত্রা মাসুদ নিসাদ’।
‘কাগজের ফুল’ নামক একটি চলচিত্রের শ্যূটিং এর লোকেশন দেখে ফিরে আসার পথে বিপরীত দিক থেকে আসা এক মাইক্রোবাসের ধাক্কায় তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর সহ আরো তিনজন নিহত হন। তাঁর দেহত্যাগের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটেছে এদেশের উজ্জ্বল চলচিত্র অঙ্গণের। তাঁর জন্মদিবসকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর আলোকচিত্র প্রদর্শন এবং বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা হয়।