ইভান পাল
আজ দিন পঞ্জিকার পাতায় জুলাই মাসের ৪(চার) তারিখ। একটু যদি শুদ্ধতার সাথেই বলি তবে বলতে হয়, আজ ৪ঠা জুলাই।।
আজ কি? স্বভাবতই পাঠক মহলে এই প্রশ্ন জাগতেই পারে, আজ কি? কেনো ই বা এত্ত আলো ছড়িয়ে বলা এই ৪ জুলাইকে।
হুম্ম! সত্যি ই তো আজ কি?
আজ ৪ঠা জুলাই। আজ, ভারতবাসী তথা সমগ্র এই বিশ্বের মানুষের কাছে ১টা বিশেষ দিন।।
১৯০২ সালে ঠিক আজকের এই দিন টায় আমাদের এই ইহ জগত ছেড়ে পরলোক জগতের উদ্দেশ্যে পা বাড়ান ভারতবর্ষের ইতিহাসের এক যুগ পুরুষ, একজন হিন্দু সন্ন্যাসী তো বটেই! একজন অসামান্য দার্শনিক, লেখক, ধর্ম সংস্কারক ও সংগীতজ্ঞ — “স্বামী বিবেকানন্দ”।
যিনি এক আসনেই বসিয়েছিলেন মানুষ আর স্রষ্টাকে। যিনি ছিলেন সকল ধর্মের উর্দ্ধে, সকল জাত পাতের উর্দ্ধে।
কিন্তু, আমার প্রিয় পাঠক মহল তো প্রশ্ন করতেই পারে— তবে কি তিনি নাস্তিক ছিলেন?
একদম ই না প্রিয় পাঠকগণ। তা একেবারেই নয়। তিনি নাস্তিক ছিলেন না। তবে তিনি গোড়ামি তে অর্থাৎ অন্ধ কুসংস্কারকে কোন ভাবেই মেনে নেন নি।।
আজ স্বামীজির মৃত্যু দিবসে আমি তারঁ ই গল্প বলবো।
স্বামী বিবেকানন্দ—-
জন্মেছিলেন ১৮৬৩ সালের ১২ই জানুয়ারি কোলকাতা তে । তারঁ পিতা বিশ্বনাথ দত্ত। তিনি পেশায় ছিলেন কলকাতার একজন নামকরা আইনজীবী। আর তারঁ মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী।
বিশ্বনাথ আর ভুবনেশ্বরী দম্পতির কোন পুত্র সন্তান ছিলো না। তাই ভুবনেশ্বরী দেবীর নিত্য প্রার্থনা সৃষ্টিকর্তার কাছে — পুত্র সন্তানের জন্য।
আর অবশেষে, ১৮৬৩ সালের ১২ই জানুয়ারি উত্তর কলকাতার এই দত্ত দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম হলো— স্বামী বিবেকানন্দের। তবে, প্রথমেই তারঁ এই নাম ছিলো না। এযে তারঁ দীক্ষিত হওয়ার পরবর্তী নাম। যাক সে পরে বলছি। তার নাম দেওয়া হলো— শ্রীনরেন্দ্রনাথ দত্ত। যার ডাক নাম ছিলো বিলে।
বিলের পিতা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন ভীষণ উদার প্রকৃতির মানুষ। কোন ধর্মীয় কুসংস্কার কে তিনি প্রশ্রয় দিতেন না। বহু মুসলমান পরিবারের সাথে তারঁ ওঠাবসা ছিলো। পিতার উদার আর বন্ধুবৎসল প্রকৃতির এই স্বভাবগুলো ই যেনো ছুতেঁ পেরেছিলো ছোট্ট নরেন্দ্রনাথ কে।
একবার হয়েছিলো কি—
বিশ্বনাথ দত্ত যেহেতু ওকালতি করতেন, তাই তারঁ বাড়িতে বহু লোকের আনাগোনা। বহু লোক আসতো যেতো। হাজার জাত আর হাজার পাতের মানুষ এসে ভিড় জমাতো, পরামর্শ করতো তারঁ বাড়িতে। আমি আগেই বলেছি— বিশ্বনাথ দত্তের সাথে বহু জাত পাতের মানুষের ওঠা বসা ছিলো। তো, তাদেরঁ বাড়ির বৈঠকখানায় তামাক সেবনের জন্য ছিলো সবার জন্য আলাদা আলাদা হুকাঁ। প্রত্যেক টি হুকারঁ গায়ে আবার সবার নাম লেখা ছিলো। তো, একদিন নরেন্দ্রনাথ সব কটি হুকায় মুখ লাগাচ্ছিল। আর এমন সময় ইই পিতা বিশ্বনাথ দত্ত এসে পড়েন। আর দেখেই তিনি নরেন কে জিজ্ঞেস করলেন, “এ কি হচ্ছে, নরেন?” পিতার এই প্রশ্নের উত্তরে নরেন বলে– “আমি সব হুকাঁ টেনে দেখলাম, কই আমার তো জাত গেলো না।” পুত্রের মুখে এমন কথা শুনে হেসে উঠেছিলেন পিতা বিশ্বনাথ দত্ত। আবার খানিক আশ্চর্যান্বিত ও হয়েছিলেন । এই বাচ্চা বয়সে এত্ত উপলব্ধি!
ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। আর দুষ্টুমিতে কিন্তু সেরা ছিলেন। আর তারঁ প্রিয় খেলা ছিল ধ্যান ধ্যান খেলা।
ছিলেন সুঠাম স্বাথ্যের অধিকারী। ছেলেবেলা থেকেই নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন। তবে তিনি শুধু দুষ্টুমিতে নয়, খেলাধুলা তে ও ছিলেন অসাধারণ এক প্রতিভা। কুস্তি, ক্রিকেট, বক্সিং সব টাতেই তিনি ইই সেরা।
নিজেই বলেছিলেন,— “গীতা পাঠ করার চেয়ে ফুটবল খেলা বেশি উপকারি”।
তবে তিনি প্রাচীন দার্শনিক গ্রন্থ, হিন্দুধর্মের প্রধান গ্রন্থ গীতা কে অবহেলা কিংবা অবমাননা করে কথাখানা বলেন নি।
স্বামীজি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, জীবনে চলার জন্য দরকার নীরোগ আর সতেজ সুস্বাস্থ্য। তিনি ও এই বাংলার বহু সাহিত্যিকের মতো ই দেখেছিলেন, বাঙ্গালির রোগ কখনো ই শরীরে হয় না, হয় মনে। আবার বয়সের ছাপ তাদের বয়সে ধরা দেয় না। দেয় মনে।
তাই ই তিনি একথা বলেছিলেন।
এবার তারঁ পড়াশুনার কথায় আসি একটু।
ছেলেবেলায় বিলে ছিলো প্রচন্ড রকম মেধাবী। সকল বিষয়ে ছিলো তারঁ অদম্য কৌতূহল। নাহ তাকেঁ সব জান্তেই হবে — এমন একটা ভাব।
বাড়িতে হাতেখড়ি হয় মা ভুবনেশ্বরী দেবীর কাছেই। তারপর গুরুমহাশয় এর কাছে প্রাথমিক টা শেষ করেই ভর্তি হন মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশনে। সেখানে কিছুকাল পড়াশুনা করেন।
এরপর ১৮৭৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নরেন্দ্রনাথ এফ, এ পড়তে ভর্তি হলেন জেনারেল এসেম্বলি ইন্সটিটিউশন এ যেটি বর্তমানে অধুনা স্কটিশ চার্চ কলেজ হিসেবে পরিচিত।
ইংরেজ পন্ডিত উইলিয়াম হেস্টি ছিলেন এখানকার অধ্যক্ষ। নরেন্দ্রনাথ দর্শনশাত্রে এতখানি বুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন যে, হেস্টি সাহেব তারঁ সম্পর্কে বলেছিলেন— “নরেন্দ্র সত্যিকারের মেধাবী। আমি বহু দেশি বিদেশি দেখেছি, কিন্তু তার মতো প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় ছাত্র দেখিনি; তার মতো এমন মেধা এমনকি জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দর্শন ছাত্রদের মধ্যেও ছিল না।” কয়েকটি স্মৃতিকথায় নরেন্দ্রনাথকে ‘শ্রুতিধর’ (অদ্ভুত স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি) হিসেবে উল্লেখ করতেও দেখা যায়।( সূত্র: উইকিপিডিয়া)
পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও দর্শন চর্চা করতে গিয়ে তিনি প্রচন্ড রকম চিন্তায় আছন্ন হয়ে পড়লেন।কারণ, একদিকে ভারতবর্ষের প্রাচীন ধর্ম বিশ্বাস যার সাথে যুক্ত ছিলো অন্ধ কুসংস্কার আর আবার অন্যদিকে আধুনিকতার ছোয়াঁ। যেখানে আবার মিশে আছে বিজ্ঞানের সত্যতা। তাহলে কোন টি সত্য?
আর সত্য কে অনুভব করতে উপলব্ধি করতে তিনি ব্রাম্মসমাজে পা বাড়ালেন।
কিন্তু কি এ ব্রাম্মসমাজ?
যেখানে কোন স্রষ্টার ইই সাকার রুপ অর্থাৎ মুর্তি পুজো হয় না। শুদ্ধ জ্ঞানের চর্চা হয়। আর প্রার্থনার সময় সকল ধর্মের ধর্মীয়গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়।।
তো, নরেন্দ্রনাথ জীবনের এই পরম সত্যকে জানতে যোগ দেন ব্রাম্মসমাজে। তিনি ব্রাম্মদের এই নিরাকার উপাসনা পদ্ধতিকে খুব যৌক্তিক ভাবেই সমর্থন করতেন।
আর এর বাইরে ব্রাম্মদের এই যে সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, নারীদের প্রতি মর্যাদা অর্থাৎ এগুলো নরেন্দ্রনাথ কে খুব আকৃষ্ট করে। কিন্তু ব্রাম্মদের অত্যধিক ভাবাবেগ তারঁ ভালো লাগেনি।
একদিন তিনি রবিঠাকুরের পিতা ব্রাহ্মনেতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি ঈশ্বরকে দেখেছেন?” এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দেবেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “তোমার চোখদুটি যোগীর ন্যায়।”
(সূত্র: উইকিপিডিয়া)
কিন্তু তিনি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে তার এ প্রশ্নের যথার্থ উত্তর পেলেন না। দর্শন সম্পর্কে তাঁর জ্ঞানে সন্তুষ হতে না পেরে নরেন্দ্রনাথ ভাবতে থাকেন, ঈশ্বর ও ধর্ম সত্যিই কি মানুষের ক্রমবর্ধমান অভিজ্ঞতার অংশ? তিনি এই নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন।।
যাকেই দেখেন তাকেই জিজ্ঞেস করে বসেন– আপনি কি ঈশ্বর দর্শন করেছেন?
কিন্তু কারো উত্তরে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেন নি।
যাক, দিন পঞ্জিকার পাতাতে সালটা ১৮৮০। কোল্কাতার সিমুলিয়াতে সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের বাড়িতে গান গাইছেন নরেন্দ্রনাথ।
“ মন চল নিজ নিকেতনে
সংসার বিদেশে বিদেশীর বেশে
ভ্রম কেন অকারণে”।
আর গান টি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলেন ভারতবর্ষের ইই আরেকজন মহা দার্শনিক শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। আর নরেন এর গান শুনেই তিনি নরেন কে দক্ষিণেশ্বর যাবার আমন্ত্রণ জানান।
কিন্তু নরেন যখন বিএ পাস করেন। তখন ই তারঁ পিতৃবিয়োগ ঘটে। পরিবারের ভভরণপোষণ আর অর্থকষ্ট দূর করতে বিভিন্ন জায়গাতে চাকরির সন্ধান করতে লাগ্লেন। আর অবশেষে কোল্কতার এ্যাটর্ণি অফিসে একটা কাজ নেন। আর এসবের মাঝে রামকৃষ্ণের কথা নরেন্দ্রনাথের মন থেকে একেবারেই মুছে গিয়েছিল। তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন।
আচ্ছা পাঠক মহলে তো প্রশ্ন জাগতেই পারে, কে এই রামকৃষ্ণ?
খুব ছোট্ট করে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের গল্প
বলছি।
রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব:
এই বিংশ শতাব্দীর যুগে আমরা শুধু শুনি ধর্ম নিয়ে মারামারি কিংবা হানাহানির গল্প। আহা! প্রাণের ধর্ম।কিন্তু রহস্য না জেনেই যে একে অন্যকে আক্রমণ করা।
আর সেই ধর্ম নিয়েই বলেছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব — “ আন্তরিক হলে সব ধর্মের ভেতর দিয়েই ঈশ্বর কে পাওয়া যায়। ঈশ্বরের কাছে নানা পথ দিয়ে পৌছানো যায়। যত মত তত পথ”।
কিংবা বলেছিলেন, ছাদের উপর উঠতে হলে মই, বাশঁ, সিড়িঁ ইত্যাদি নানা উপায়ে যেমন ওঠা যায় তেমনি এক ঈশ্বরের কাছে যাবার অনেক উপায় আছে। প্রত্যেক ধর্ম ই এক এক টি উপায়। প্রত্যেক টি ধর্ম ই সত্য।
এসব বলবার কারণ একটি ই। আমরা সব সময় বলি, কিংবা বলতে শোনা যায়— আমার ধর্ম ই সেরা। আমার ধর্ম ই সত্য। পৃথিবী তে প্রতিটি ধর্ম ই সত্য। প্রতিটি ধর্ম ই মানুষের সুখ আর মঙ্গলের কথা বলে। তারঁ মতে, কোন ধর্ম ই মিথ্যে নয়।
যিনি মিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন মানুষ আর স্রষ্টার। যার কাছে ছিলো না কোন জাত পাত কোন কিছুই তিনি ই রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। ভারতের আরেকজন বিখ্যাত মনিষি, পন্ডিত আর দার্শনিক। আর ইনি ই হলেন “স্বামী বিবেকানন্দের গুরু”।
১৮৩৬ সালের ১৭ ই ফেব্রুয়ারি তিনি জন্মেছিলেন ভারতের হুগলি জেলার কামারপুকুরে। আর গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৮৮৬ সালের ১৫ ই আগষ্ট মারা যান।
যাক সেদিকে যাবো না। অনেক দেরি হয়ে যাবে। কারণ, আমাদের নরেনের জীবনের আরো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে।
যাক তো যা বলছিলাম, একদিন কয়েকজন বন্ধু সহ নরেন্দ্রনাথ যান রামকৃষ্ণের কাছে। রামকৃষ্ণ কে ও নরেন্দ্রনাথ সরলতার বশে জিজ্ঞেস করেন, আপনি ঈশ্বর দর্শন করেছেন?
তখন রামকৃষ্ণ হাসতে হাসতে উত্তর দিয়েছিলেন— “হ্যাঁ, দেখেছি। যেমন তোকে দেখছি। চাইলে তোকে ও দেখাতে পারি”।
নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণের সরলতায় মুগ্ধ হলেও তাকেঁ কোন ভাবেই পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেন নি। উপলব্ধি করতে পারেন নি। আর তাই তিনি দক্ষিণেশ্বর গিয়েছিলেন বহুবার। কিন্তু দীর্ঘদিন নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণ কে তারঁ গুরু হিসেবে মেনে নেন নি।
কারণ, বিজ্ঞান চর্চায় ব্রতী আর কুসংস্কার মুক্ত এই সহজ সরল প্রকৃতির যুবক টি কোন ভাবেই ভাবাবেগ দ্বারা পরিচালিত হতে চান নি। পরে অবশ্য যখন নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণের যে আদর্শ, যে চেতনা সেটিকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তখন ই তিনি তারঁ কাছে নিজেকে সমর্পন করেছিলেন। নিয়েছিলেন সন্ন্যাসী জীবনের দীক্ষা। আর হয়েছিলেন— “ স্বামী বিবেকানন্দ”।।
রামকৃষ্ণ তারঁ আঠারো জন শিষ্য কে সন্ন্যাস হবার দীক্ষা প্রদান করলেন। আর রামকৃষ্ণের প্রধান শিষ্য ছিলেন “স্বামী বিবেকানন্দ”। আর রামকৃষ্ণ নিজের হাতে তুলে দিয়েছিলেন গৈরিক বস্ত্র। আর বলেছিলেন, “তোরা সম্পূর্ণ নিরভিমান হয়ে ভিক্ষার ঝুলি কাধেঁ নিয়ে রাজপথে ভিক্ষা করতে পারবি কি?”।
ব্যাস, গুরুর এই আদেশে তারঁ দীক্ষিত শিষ্য রা বেরিয়ে পড়লেন রাজপথে। তবে তা ভিক্ষা বলতে আমরা আমাদের সমাজে যে ভিক্ষাবৃত্তি দেখি — ভোগের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি। তা কিন্তু একেবারেই নয়। সন্ন্যাসী রা ভিক্ষাবৃত্তি করেন, ভোগের জন্য নয় ত্যাগের জন্য। মানুষের মঙ্গলের জন্য ই এই পথ। মানুষের কষ্ট নিবারণের জন্য ই পথে পা বাড়ানো। সেখানে পৃথিবীর সকল মিনিষির ই এক কথা — ভোগে সুখ নেই। ত্যাগেই সুখ।
১৮৮৬ সালে স্বামীজি গিয়েছিলেন বুদ্ধ গয়ায়। বুদ্ধের যে আদর্শ — মানুষ কে সকল যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথ দেখানো। এই আদর্শ তাকেঁ আরো ঘিরে ধরে। তিনি ধ্যানস্থ হন বুদ্ধের মন্দিরে। তিন দিন ধ্যান করে আবার ফিরলেন গুরুর কাছে।
আর গুরু রামকৃষ্ণ তাকেঁ তারঁ মনের ভাব জানতে জিজ্ঞেস করেছিলেন— “ নরেন, তুই কি চাস?” তখন নরেন্দ্রনাথ গুরুর উত্তর করেছিলেন, “ শুকদেবের মতো সর্বদা নির্বিকল্পসমাধি যোগে সচ্চিদানন্দ সাগরে ডুবে থাকতে চাই”।

তখন গুরু রামকৃষ্ণ ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, “ ঐ কথা বলতে তোর লজ্জা করে না? কোথায় তুই বটগাছের মতো বেড়ে উঠে শত শত লোককে শান্তির ছায়া দিবি তা না করে তুই নিজের মুক্তির জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছিস? এত ক্ষুদ্র আদর্শ তোর?”
গুরুর কথায় তন্ময় ঘটে স্বামী বিবেকানন্দের। আর নিজের ভুলে লজ্জিত হয়েছিলেন স্বামীজি। আর তখন তিনি চিৎকার করে বলে উঠে ছিলেন এই পুরো বিশ্ব কে — “বহুজন হিতায় বহুজন সুখায় সন্ন্যাসীর জন্ম। যে সন্ন্যাসীর মনে অপরের কল্যাণ করার ইচ্ছে নেই সে সন্ন্যাসী ই নয়। পরের জন্য প্রাণ দিতে, জীবের গগনভেদী ক্রন্দন নিবারণ করতে, সকলের ঐহিক ও পারমার্থিক মঙ্গল করতে এবং জ্ঞানালোক দিয়ে সকলের মধ্যে ব্রম্মসিংহ কে জাগরিত করতে সন্ন্যাসীর জন্ম হয়েছে”।
আগেই বলেছি ১৮৮৬ সালে ১৫ ই আগষ্ট শেষ নি:স্বাস ত্যাগ করলেন গুরু রামকৃষ্ণ। গুরু রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর কাশীপুরের উদ্যান বাটি ছেড়ে দিতে হলো।
তো তখন স্বামীজি প্রত্যক্ষ করলেন এই অবস্থায় যদি তরূণ সন্ন্যাসী রা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে তবে সব এলোমেলো হয়ে যাবে। তিনি উদ্যাগ নিলেন সক্কলকে এক করে রাখার। একটি ভাড়া বাড়িতে মাত্র তিন টে ঘরে সক্কলে কোন রকমে থাকতেন। কখনো খাবার জুটতো, তো কখনো জুটতো না। আর খাবার তাও কি— তেলাকুচো পাতা, লাউপাতা কিংবা কচুপাতা সেদ্ধ আর ভাত।
এই যে এত দু:খ এর মাঝে ও সব্বাইকে হাসি আর আনন্দে সকল্কে এক করে রেখেছিলেন।
আর এর কিছুদিন পর ই সব্বাই বেরিয়ে পড়লেন। গুরুর আদেশ ছিলো যে। পরিব্রাজক জীবন আর সত্যকে জানা। ভারত কে জানা। ভারত ক্স বোঝা। আর জাত পাতের উপরে গিয়ে সকলের কল্যাণ।
একবার এক রাজার অতিথি স্বামীজি। সন্ধ্যে বেলায় বাঈজীর গানের আসর বসেছে। আর আসরে বাঈজী গান ধরতেই স্বামী বিবেকানন্দ উঠে পড়লেন।বললেন, সন্ন্যাসী দের এরকম স্থানে থাকা অনুচিত। সাথে সাথে বাঈজী দু:খ পেয়ে গান ধরলেন– “প্রভু তুমি আমার নাম দোষ নিও না। তোমার নাম সমদর্শী, আমাকে উদ্ধার করো”। স্বামীজি বুঝতে পেরেছিলেন তারঁ ভুল টুকু। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন — ঈশ্বর সকল জীবে বিরাজমান।।
তাই ই বলেছিলেন — “
দরিদ্রদেবো ভব মুর্খ দেবো ভবো
অর্থাৎ,
দরিদ্র, মুর্খ, অজ্ঞান, কাতর — এরাই তোমার দেবতা হোক, এদের সেবাই পরম ধর্ম বলে জানবে।”
আবার স্বামী রামকৃষ্ণনন্দ কে এক চিঠি তে লেখেন— “ বেশ্যারা যদি দক্ষিণেশ্বরের মতো মহাতীর্থে যেতে না পারে, তবে যাবে কোথায়? পাপীদের জন্য স্রষ্টার যত প্রকাশ পূণ্যবান দের জন্য কিন্তু তত টা নয়। হ্যাঁ, ভেদাভেদ সংসারে আছে, থাকবে, থাকুক না। কিন্তু তীর্থ তে ও যদি এরকম ভেদাভেদ হয় তবে তীর্থ আর নরকে ভেদ টা কি? যারা ঠাকুর ঘরে গিয়ে ও অই বেশ্যা, ঐ নীচ জাতি, ঐ গরীব, ঐ ছোট লোক ভাবে তাদের সংখ্যা যত কম হবে তত ই মঙ্গল। যারা ভক্তের জাতি দেখে বা ব্যবসায় দেখে তারা আমাদের ঠাকুর কে কিভাবে বুঝবে? প্রভুর কাছে প্রার্থনা তে শত শত বেশ্যা আসুক তারঁ পায়ে মাথা নোয়াতে। আর এরজন্য যদি একজন ভদ্রলোক ও না আসে তবে নাই আসুক”।
১৮৯৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকা তে অনুষ্টিত হয় বিশ্বধর্ম সন্মেলন। স্বামীজি বহু কষ্টে পৌছুলেন আমেরিকা তে সে সন্মেলনে যোগ দিতে। নির্ভীক আর দীপ্ত কন্ঠে বক্তৃতা করলেন। বললেন, হিন্দুধর্ম পৃথিবী র সকল ধর্মকে সত্য বলে মনে করে। সব ধর্মের লক্ষ্য ই এক আর তা হচ্ছে — স্রষ্টা কে লাভ করা। তাই বিবাদ কিংবা সহিংসতা নয়। বিনাশ নয়। একে অন্যের ভাব গ্রহণ, সমন্বয় আর শান্তি।”
তারঁ পান্ডিত্যে, তারঁ দর্শনে উপস্থিত সকলে মুগ্ধ হয়ে যান। করতালি তে মুখরিত হয় চারদিক।
আইরিশ কন্যা মার্গারেট এলিজাবেথ এর সাথে পরিচয় ঘটে ইংল্যান্ডে। যিনি ই পরবর্তীকালে হন সিস্টার নিবেদিতা। স্বামীজির কাছে দীক্ষা নেন। আর ভারতে এসে স্বামীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করেন মানব সেবা তথা জীব সেবা। জাত পাতকে ভুলে গিয়ে সমর্পণ করেন নিজেকে ভারতের সকল মানুষের কাছে। ভুলে যান কোন ধর্ম, কিসের সেবা, কার সেবা এইসব শব্দ গুলো।। তিনি শুধু জানতেন প্রতিটা মানুষের মধ্যেই স্রষ্টা অবস্থান করেন।

শুধু পাশ্চাত্যের ইউরোপ না পৃথিবী র বহু প্রান্তের, বহু ধর্মের লোক আসেন স্বামিজীর সান্নিধ্যে। শেখেন অনেক কিছু। আর আপন আলোয় আলোকিত হয়ে তারাও কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাস কে পেছনে ফেলে স্বামীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যে যার দিক থেকে পারেন করে যান মানব সেবা।
আচ্ছা আমরা আমাদের এই আজকাল কার সমাজে কিছু শব্দ শুনি। যেমন — অমুক হচ্ছেন যুব সমাজের কান্ডারি, তমুক হচ্ছেন যুব সমাজের বস! এরকম কিছু।
কিন্তু আমরা এক বারের জন্য ও মুখ দিয়ে বলি না — স্যার এপি যে আব্দুল কালামের নাম কিংবা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলামের নাম কিংবা স্বামী বিবেকানন্দের নাম।।
পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতেই এনাদের নাম কেনো বলবো?
কারণ, যুব সমাজ কে হাত ধরে হাটতে শেখান এই মানুষগুলো কিংবা মহা মনিষি গুলো। তাদের ধর্ম দর্শন, জীবন দর্শন দ্বারা। কিন্তু আমরা না তাদেরঁ জীবনী কিংবা তাদের দর্শন চিন্তা অনুভব না করেই বলি, উনারা তো আল্লাহ কিংবা ঈশ্বর। উনাদের সাথে আমাদের হয় না।না উনারা আল্লাহ কিংবা ঈশ্বর নন। উনারা আপনার আমাদের মতোই সাধারণ মানুষ। উনারা উনাদের জীবন দর্শন করেই জীবনের প্রকৃত সত্যকে উপললব্ধি করেই মানুষের ইই কথা বলেছেন। আর উনারাই এই যুব সমাজের প্রকৃত কাণ্ডারি। যাদেরঁ মূল্যবান উপদেশ আর দর্শনে প্রতিদিন, প্রতিটা সেকেন্ডে যুব সমাজ প্রাণ ফিরে পায়। পায় প্রতিটি দিনে নতুন ভাবে পথ চলার অনুপ্রেরণা।
আর আমেরিকা থেকে ফিরে এসে এই যুব সমাজ কে আহবান করে স্বামীজি বলেছিলেন, “আমি তোমাদের নিকট এই গরীব, অজ্ঞ অত্যাচারপিড়ীতদের জন্য সহানুভূতি, এই প্রাণপণ চেষ্টা দায়স্বরুপ অর্পণ করছি। তোমরা সারাজীবন এই ত্রিশ কোটি ভারতবাসীর উদ্ধারের ব্রত গ্রহণ কর। আমি সূচনা করেছি, তোমরা তা সম্পূর্ণ করো”।
এবার একটু রামকৃষ্ণ মিশন বা বেলুড় নিয়ে বলবো:
হুম্ম, বেলুড় টা কি? বেলুড় ১টা তীর্থস্থান। হিন্দু ধর্মালম্বীদের একটা মন্দির। তবে শুধু হিন্দুদের জন্য ই নয় এটা পুরো বিশ্বের সকল মানুষের জন্য ই নির্মিত। এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আসেন আর স্বামীজির দর্শন কে জানেন, জানেন ভারত বর্ষ আর হিন্দুধর্মকে।
আর স্বামী বিবেকানন্দ তো একার কোন ধর্মের নন। তিনি সকল মানুষের, সকল ধর্মের, সকল বর্ণের।।
বলেছিলেন—
“ বহুরুপে সন্মুখে তোমার ছাড়ি, কোথা খুজিঁছ ঈশ্বর?
জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর”।
দিন পঞ্জির পাতায় যখন সাল টা ১৮৯৭। তখন ই স্বামীজি অনুভব করলেন, “সংঘ ছাড়া কোন বড় কাজ হতে পারে না।” তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, সংঘ হবে।
প্রতিষ্ঠিত হলো — “বেলুর মঠ” যাকে বলা হয় “রামকৃষ্ণ আশ্রম”।।
ভারতবর্ষের প্রাচীনতম নদী গঙ্গার তীরে বেলুড়ের জন্য জমি কেনা হল। স্বামীজি র ভক্ত মিসেস হেনরিয়েটা মূলার আর ওলি বুলের অর্থেই জমি কেনা হল এ মঠ প্রতিষ্ঠার জন্য।
আধুনিক ধর্মস্থান বেলুড় মঠ মন্দির,
মসজিদ ও গির্জার স্থাপত্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণে নির্মিত। কারণ, রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলনের বিশ্বাস অনুসারে বিশ্বধর্মের আদর্শকে তুলে ধরার জন্য একাধিক ধর্মের স্থাপত্য ও প্রতীকতত্ত্ব থেকে মন্দিরের এই স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য সংকলিত হয়েছে। ধর্মের রূপতাত্ত্বিক দিকটিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন এই মন্দির। ( বেলুড়: উইকিপিডিয়া)
রামকৃষ্ণ পরমহংস, সারদা দেবী, স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম ও প্রয়াণতিথি, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও বড়দিন উৎসব উদযাপন করে এই কেন্দ্র।
দুর্গাপূজা , বিশেষত মহাষ্টমীর
কুমারীপূজা দেখতে এখানে প্রতি বছর প্রচুর জনসমাগম হয়।
এই রামকৃষ্ণ মিশনের প্রথমবার কুমারী পুজো হতে চলেছে। তাই নিয়ে ছোট্ট ১টি ঘটনা :
আচ্ছা, এই কুমারী পুজো কি?
কুমারি পুজো হচ্ছে–
হিন্দুধর্মে দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে বাচ্চা মেয়েদের কুমারি রুপে পুজো করা হয়। তবে সব্বাইকে বা সক্কলকে নয়। নিয়মানুযায়ী এ পুজো। তো এ পুজোর ক্ষেত্রে মনে করা হয়,দেবী দুর্গা কুমারী রুপে আমাদের মাঝে অবস্থান করেন। তবে এ পুজোর প্রচলন করেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।
রামকৃষ্ণ মিশনে প্রথম বার কুমারি পুজো। পুজো করবেন স্বামীজি স্বয়ং।
কাশ্মীর প্রদেশের এক মুসলমান কন্যাকে স্বামীজি কুমারি রুপে পুজো করেন। যদি ও এ পুজোয় যারা কুমারি রুপে পুজিতা হন তাদের প্রত্যেকেই ব্রাম্মণ ঘরের কন্যা হতে হয়।

আর স্বামীজি মুসলমান কন্যা কে পুজো করে সক্কল কে জানান দিতে চেয়েছেন, মা দুর্গা সকল জীবে অবস্থান করেন। সে হোক হিন্দু, মুসলমান কিংবা বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান।
সব মেয়ে ই এক। মায়ের ই জাত।
সবশেষে স্বামীজি কে নিয়ে এক ছোট্ট মজার গল্প বলছি:—
সেই সুদুর আমেরিকা থেকে স্বামীজির কাছে বিয়ের প্রস্তাব আসে। প্রস্তাব পাঠান এক ইংরেজ মহিলা। শুনে স্বামীজি কিছুটা আশ্চাযান্বিত হয়ে ওঠেন। তখন স্বামী বিবেকানন্দ জানতে চান, কেনো তার এই ইচ্ছে?তিনি কি এমন স্বামীজির মধ্যে দেখেছিলেন যে তিনি বিয়ের প্রস্তাব দিলেন?
তখন সেই মহিলা টি বললেন, আমি আপনার বুদ্ধী আর তেজ শক্তি তে প্রভাবিত হয়েছি। আমি আপনার ই মতো বুদ্ধিমান আর তেজস্বী পুত্র চাই। আর তাই সেই ভিন দেশি মহিলাটি স্বামীজি কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যাতে করে বিয়ের পর স্বামীজী র মতো ই এক তেজস্বী আর বুদ্ধীদীপ্ত পুত্র সন্তান পান।
তখন সব শুনে স্বামীজি বললেন, আমি আপনার কথা বুজতে পেরেছি। কিন্তু বিয়ে করে পুত্র সন্তান প্রাপ্তিতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে। আর বিয়ে করলেই যে পুত্র সন্তান হবে তার ও কোনও রুপ আশা নেই। কিন্তু এই অবস্থায় আমি আপনার এই ইচ্ছে কে এখন ই পূরণ করে দিচ্ছি।
আজ থেকে আপনি আমাকে আপনার পুত্র হিসেবে মেনে নিন। আর আমি আপনাকে আমার মা মেনে নিলাম। আর আমাকে পুত্র মেনে নিলে আপনার মনের ইচ্ছে ও পূরণ হয়ে যাবে।
স্বামী বিবেকানন্দের এক মা তো ভুবনেশ্বরী দেবী। কিন্তু তারঁ আরেক মা ছিলেন। যাকে তিনি বলতেন, “জ্যান্ত দুর্গা”। আর তিনি হলেন তারঁ ই গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সহধর্মীনি। স্বামীজী সব সময় গুরুর অবর্তমানে তারঁ এই আরেক মা জ্যান্ত দুর্গার সেবা করা আর সকল পরামর্শ ও করতেন মায়ের সাথে।। যেনো স্বামীজির সকল সমস্যার সমাধান ঘর এই মা সারদা। তারঁ মা — জ্যান্ত দুর্গা।

যাক অনেক কথা হলো, এবার ইতি টানার পালা। ১৯০২ সালের ৩রা জুলাই স্বামীজি তারঁ ভক্ত শিষ্যদের খাওয়ার পর নিজ হাতে হাত ধুয়ে দিলেন। ঠিক যেভাবে আমাদের বাবা আমাদের ছোটবেলায় হাত ধুয়ে দিতেন অনেকটাই এরকম। তখন একজন জিজ্ঞেস করল, আমরা কি আপনার সেবা গ্রহণ করতে পারি। স্বামীজি উত্তরে বলেছিলেন, “কেন পারো না। যীশু ও কিন্তু তারঁ শিষ্যদের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন”।
আর এর পরদিন ই অর্থাৎ ১৯০২সালের ৪ঠা জুলাই, আজকের এই দিনে দেশ বিদেশের অসংখ্য ভক্ত আর শিষ্য কে কাদিয়ে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে চির বিদায় নেন ভারতবর্ষের ইতিহাসে গৈরিক বসন পরিহিতা এক সূর্য পুরুষ, অন্যতম শ্রেষ্ট এক দার্শনিক, পন্ডিত, সংগীতজ্ঞ, ধর্ম সংস্কারক স্বামী বিবেকানন্দ। যিনি একি সুরে কিংবা একি ফ্রেমে যাই ই বলিনা কেনো একই বাধনে বেধেছিলেন ঈশ্বর প্রেম, মানব প্রেম আর স্বদেশ প্রেম কে।।
পরিশেষে বলবো, প্রিয় পাঠক আমি এই প্রবন্ধে কোন ভাবেই কোন একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মনিষি কে ইই শ্রেষ্টত্বের স্থান দেয় নি।কিংবা দেওয়ার জন্য লিখিনি। নি:সন্দেহে আমাদের এই পৃথিবী তে যে ক’জন শ্রেষ্ট দার্শনিক রয়েছেন তাদের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ অন্যতম। তারঁ আদর্শ, তারঁ মহামূল্যবান বাণী পৃথিবীর প্রতিটা যুবকদের জন্য,যুব সমাজের জন্য এক অনন্য অসাধারণ নিদর্শন। বলা চলে,তিনি এই বিশ্বের যুব সমাজের জন্য অন্যতম একজন অনুপ্রেরণা মূলক মানব। তবে তিনি শুধু আজ ভারতবাসীর নয়। তিনি পুরো বিশ্বের পুরো জগতের। তিনি ইই স্বামী বিবেকানন্দ, তিনি ইইই বিশ্ব বিবেকানন্দ।
তারঁ তিরোভাব দিনে রইল বিনম্র প্রণাম আর শ্রদ্ধার্ঘ্য।