সালমান সাদ
“আমার হৃদয়ের আগুন থেকেই আলো দিচ্ছে আমার কবিতা, আমি যা লিখছি তাতে একটি আঙ্গুল দেয়ার সাধ্য নেই কারো৷”
-মির্জা গালিব।
মনুষ্য তৈরি রচনার ওপর পৃথিবীর সবচে স্পর্ধিত,দু:সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী এ মন্তব্যটি কবিদের কবি উর্দু-ফারসী সাহিত্যের কিংবদন্তি মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ গালিবের। সংক্ষেপে মির্জা গালিব।
তার ২২০ জন্মদিন আজ। ১৭৯৭ সালের এই দিনে ইন্ডিয়ার আগ্রায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
প্রাথমিক শিক্ষায় আগ্রার খ্যাতিমান বিদ্বানজন শেখ মোয়াজ্জম ছিলেন তার শিক্ষক। এছাড়াও তিনি মীর আযম আলী কর্তৃক পরিচালিত একটি মাদরাসাতেও যেতেন।
তিনি যুক্তিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, অধিবিদ্যা ও অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করলেও তার আসল ঝোঁক ছিল ভাষা ও সাহিত্যের উপর। বিশেষত ফারসি সাহিত্য।
মির্জা গালিব বেড়ে ওঠেন মাতুলালয়ে। এসময় তাদের বাড়িতে আব্দুস সামাদ নামক একজন আরবি ও ফারসি ভাষার পণ্ডিতজনের আগমন ঘটে এবং তিনি সেখানে দু’বছর অবস্থান করেন। মির্জা গালিব তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। গালিব জীবনে কোনদিন কাউকে তার শিক্ষক হিসেবে মানেননি ও পরিচয় দেননি- কিন্ত আব্দুস সামাদকে তার পরম গুরু হিসেবে মেনেছেন ও শ্রদ্ধায় ভক্তিতে সারাজীবন তার নাম স্বরণ করেছেন।
গালিব নয় বছর বয়স থেকেই ফারসি ভাষায় কবিতা লিখতেন। তার কবিতার মূল উপজীব্য ছিল প্রেম ও দর্শন। উর্দুভাষার প্রথম দার্শনিক কবি তিনি। মির্জা গালিব ভারতের শেষ মোগলসম্রাট ও কবি বাহাদুর শাহ জাফরের উস্তাদ ও সভাকবি ছিলেন।
গালিব গবেষক পুস্পিত মুখোপাধ্যায় লিখেন, “বাংলা সাহিত্যে রবীন্দনাথের যে গুরুত্ব, উর্দু সাহিত্যে মির্জা গালিবের গুরুত্ব তারচেয়ে অধিক বললে অত্যুক্তি হবেনা।” গালিবের গজল, শের, কবিতা উর্দু -ফারসি সাহিত্যে তো বটেই বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
মির্জা গালিবের জীবিকানির্বাহর নির্দিষ্ট কোন পন্থা ছিল না। সারাজীবন তিনি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বা ধারকার্য করে বা কোন বন্ধুর উদারতায় কাটিয়ে দিয়েছেন। জীবদ্দশায় তার কোন খ্যাতি ছিল না। তিনি বলেছিলেন তার খ্যাতি আসবে মৃত্যুর পর। ইতিহাস তার সত্যতা দিয়েছে। উর্দু ভাষায় সবচে বেশি লেখা হয়েছে মির্জা গালিবের ওপর।
১৮৬৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি কবি মির্জা গালিব মৃত্যুবরণ করেন।
তার ২২০ তম জন্মদিনে(২০১৭) গুগল তাকে নিয়ে ডুডল তৈরি করে কবিসম্রাটের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।
দিল্লির নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজার শরীফের কাছে পারিবারিক গোরস্থানে তিনি সমাহিত।উগ্র হিন্দুত্ববাদের অধুনা দিল্লিতে তার সমাধি চরম অবহেলায় পর্যবসিত।