মেহের আফরোজ তানজিলাঃ
মেয়েটা বসে আছে দোতালার বৃষ্টি বারান্দায়।বাড়ির ঠিক সামনে পানিতে টইটুম্বুর কলমিলতায় ভরা ছোট একটা পুকুর। এরপর এক চিলতে পাকা রাস্তা, যেখানে মাঝে মধ্যেই লক্কর ঝক্কর টমটম গুলো বিকট শব্দে হর্ণ বাজিয়ে মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে যায়। আর এরপরই আদিগন্ত বিস্তৃত আড়িয়াল বিলের শুরু। যেখানে বর্ষাকালের থৈ থৈ পানি, শরতের স্নিগ্ধ আকাশে সাদা মেঘেদের খেলা, হেমন্তকালে ধানের সোনালী রঙ আর শীতের কুয়াশা পেটমোটা বই হাতে মেয়েটার খুব পছন্দ।
মেয়েটা অবাক হয়ে দেখে এক দৃষ্টে। এত সুন্দর, এত সুন্দর পৃথিবী কীভাবে সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করলেন .. বারান্দায় বসেই যেন মেয়েটা বৃষ্টিতে পা ভেজাতে পারে, উথাল পাথাল জোছনায় পুরো জগত থেকে আলাদা হয়ে নিজের মতো সময় কাটাতে পারে তাইতো বাবা অর্ধেক ছাউনি দেওয়া বারান্দাটা মেয়েটাকে উপহার দিয়েছেন। এখানে শুধু তার আধিপত্য,শুধুই তার।
জোনাকির মায়াবি আলো দেখার জন্য রাত নয়টা থেকে দশটা একা ঝোপঝাড়ে ঢাকা বাড়িটায় লাইট বন্ধ করে মেয়েটা বসে থাকে, হারিয়ে যায় নিজের জগতে। এজন্য অনেকেই হয়তো মনে করেন ঐ বাড়িতে এখনো জ্বীন ঘোরে! নয়তো এই ভীতু মেয়ে এত রাতে কীভাবে একা থাকে? এখনো জ্বীন ঘোরে নাকি আমি জানি না তবে আমি জানি সারা বছর মেয়েটা অপেক্ষা করে কবে ঐ বাড়িটায় যাবে।
অপেক্ষায় প্রহর শেষ হয়ে আসছে। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা, তারপরই মেয়েটা চলে যাবে তার বৃষ্টি বারান্দায়, তার দাদা-দাদীর একদম কাছে। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে যেখানে বসে দাদা দাদীর হাতগুলো শক্ত করে করে জোছনা আর জোনাকির খেলা দেখতেন, মেয়েটাও সেখানে বসে একইভাবে জোনাকি দেখবে। পার্থক্য শুধু একটাই। সে থাকবে একা, তার হাতগুলো ধরে কাছে টেনে নেওয়ার কেউ নেই। তারপরও সব হতাশা ভুলে সে চেয়ে থাকবে একদৃষ্টিতে, খুঁজবে ভালোবাসার “কালপুরুষ”।
শিক্ষার্থী,
ভিকারুন্নেসা স্কুল এন্ড কলেজ