রাফিউজ্জামান সিফাত পেশায় প্রকৌশলী হলেও তার নেশায় শুধু লেখালেখি। পাঁচ বছর যাবত প্রদায়ক হিসেবে আছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনে। নিয়মিতই লিখতেন ফেইসবুকে, তারপর ২০১৬ সালে প্রকাশ করলেন নিজের লেখা প্রথম বই “সে আমার গোপন”। এবার বই মেলায় আদী প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা বই মনোপাখি। বইটির প্রচ্ছদ করেছে রাজীব দও। মনোপাখি নিয়ে কথোপকথন হয় তার সাথে………..
সীমান্ত: মনোপাখি উপন্যাসটি কি নিয়ে লেখা?
রাফিউজ্জামান সিফাত: একটি কিশোরী মেয়ের জীবনের নতুন মোড়, এক যুবকের বৈচিত্রময় শৈশবের মাঝে দিয়ে বেড়ে উঠা, রুপালী সিনে জগতের চালচিত্রের পাশাপাশি নারী ও পুরুষের নিজস্ব ভুবনের পূর্ণবৃত্তের সমষ্টিগত শব্দকল্প মনোপাখি উপন্যাস। বহুমাত্রিক অন্তঃশীল জীবনকে উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মাধ্যমে প্রকাশের চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের চারপাশের আপন প্রাণের কথা উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে পাঠক অনুভব করতে পারবে। এক কথায় যদি বলি, মনোপাখি একটি বিষণ্ণময় ভালোবাসার উপন্যাস।
সীমান্ত: এখন পর্যন্ত আপনার কি কি বই প্রকাশিত হয়েছে?
রাফিউজ্জামন সিফাত: সে আমার গোপন(গল্পগ্রন্থ,২০১৬), সুয়া উড়িলো উড়িলো জীবেরও জীবন(উপন্যাস,২০১৭), পদ্ম বলে এসো(উপন্যাস,২০১৮), মনোপাখি(উপন্যাস,২০১৯)
সীমান্ত: লেখালেখিতে আসা শুরু হয় যেভাবে?
রাফিউজ্জামান সিফাত: জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে আমরা সবাই ছড়া কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি, আমিও তাই। ক্লাশ টু’তে পড়াকালীন সময়ে টিফিনের টাকা পয়সা জমিয়ে সবুজ রঙের ছোট্ট একটা নোটবুক কিনেছিলাম। আমার পকেটেই থাকত, সেখানে ছড়াটরা লিখতাম আর কি। প্রথম আলো’তে ছোটদের জন্য একটা গল্প লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল, ঐতিহ্য গোল্লাছুট গল্প লেখা প্রতিযোগিতা। সেখানে আমি একটা গল্প দিয়েছিলাম। বহুত ঝামেলা করে ময়মনসিংহ থেকে কুরিয়ার করে গল্পটি পাঠিয়েছিলাম, এবং ভুলে গিয়েছিলাম। মাস দুয়েক পর একটা চিঠি আসে আমার মায়ের অফিসের ঠিকানায়। আমার গল্পটি বাছাই হয় এবং ঢাকায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমার মা খুব খুশি হয়েছিলেন, অফিসের সবাইকে তিনি চিঠি পড়ে শুনিয়েছিলেন। আমি তো মহা উত্তেজিত। মনে হয়েছিল আমি কিছু একটা করে ফেলেছি, আমার লেখা গল্প আমাকে ঢাকা নিয়ে এসেছে! ঢাকা শহরে আসাটা তখন আমার কাছে বিশাল কিছু ছিল!
আমার সবকিছু ময়মনসিংহে, ঢাকায় আসা হত না, সেই গল্প লেখা প্রতিযোগিতা আমাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিল। গল্প লিখার পথটাও বোধহয় এভাবেই তৈরি হয়। পরবর্তীতে কলেজে পড়ার সময়ে মৌচাকে ঢিল (অনেকে যায়যায়দিন নামেও চিনে) হাতে পেলাম। ঐ ম্যাগাজিন আবার বড়রা পড়তে দিত না। আর বড়রা যা না করবে সেটাতেই তো আমাদের অসীম আগ্রহ, তাই না? লুকিয়ে পড়লাম। দেখলাম, প্রেম ভালোবাসার গল্পই বেশী। অধিকাংশ গল্পগুলো পাঠকের নিজস্ব অভিজ্ঞতা। আমার মনে হল আমিও লিখতে পারব। যা ভাবা তাই কাজ। বানিয়ে বানিয়ে একটা প্রেমের অভিজ্ঞতা লিখে পাঠিয়ে দিলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার বানানো প্রেমের অভিজ্ঞতা তারা ভালোবাসা দিবসের বিশেষ সংখ্যায় ছাপিয়ে দিল। তখন ফেসবুক ছিল না, আমার এখনও মনে আছে, সেই উচ্চ মূল্যের মোবাইল কলরেটের যুগেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমি প্রতিদিন একের পর এক ফোন পেতাম, শুধু মাত্র গল্পের খাতিরে। পাঠকের যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, পরবর্তীতে সেটাই হয়তো আমাকে আরও লিখতে উৎসাহী করেছে, আমি কৃতজ্ঞ।
সীমান্ত: লেখক হিসেবে রাজিউজ্জামান সিফাত নিজেকে একদিন কোথায় দেখতে চায়?
রাফিউজ্জামান সিফাত: একদিন না, সারাটা জীবন আমি নিজেকে একজন লেখক হিসেবেই দেখতে চাই। লিখতে ভালো লাগে। এর চেয়ে শান্তি আর তো কোথাও পাই না। আমার একটাই চাওয়া, লিখার তাগিদটা যেন থেমে না যায়।
সাক্ষাৎকার নিয়েছে: গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত