সেদিন হিমালয় থেকে হিমু এসেছিল।
মো. মোস্তফা মুশফিক তালুকদার।
মাথার উপর পিচগলা রোদ, যেন সূর্য্যদেবতা সবখানি উত্তাপ আর আক্রোশ পৃথিবীর উপর ঝাড়ছেন। আমি রাস্তার মাঝখানে হাঁটছি, পড়নে হলুদ পাঞ্জাবী, পকেট ছাড়া। আমার এই রূপের কারণ রূপা গল্পে হলেও আজ কারণ অন্য, আজ আমার রচয়িতার জন্মদিন। কাল রাতে শেষ রূপার সাথে কথা হয়েছে, সে ফোন দিয়ে আমাকে ঠিক সকাল ১১টায় তুলে দেবে। সে দেখা করতে চায়। ঠিক সময়মত সে ফোন দিয়ে তুলে দিলো। আমি এখন পথে দাঁড়িয়ে ভাবছি আজ তার সাথে দেখা করবোনা। অন্যকোথাও চলে যাব, রচয়িতার জন্মদিনে। আমার রচয়িতার এখন অনেক ভক্ত, বিশেষত তার শারীরিকভাবে মৃত্যুরপর তা আরো কাঙ্ক্ষিতভাবেই বেড়ে গেছে। এখন অনেকে ঠিকমত আমার রচয়িতাকে নিয়ে জানেও না। আমার রচয়িতা যেই দেশকে ভালোবেসেছেন বা যেই আদর্শে চলেছেন তার বিপরীত মুখিরাও আজ আমার বেশ ধরেছে। নিজেদের মাহাত্ম্য, সাহিত্য সবাই প্রকাশ করছেন। আজকে আমার রচয়িতা সারাবিশ্বে দেশের গর্ব হওয়া সত্ত্বেও কতিপয় ধর্ম ব্যাবসাহীদের মুখে তার জন্য নাস্তিক শব্দটি জুটে। অনেকেই অকারণে গালাগাল করতেও ভুলে যান না। তবে কেউ ভেবে দেখেনা এই লোকটা চাইলেই তো দেশ ছেড়ে, এই টিনের চালে মাথা না গুঁজে থাকতে পারতেন উন্নতবিশ্বের কোনো এক রাষ্ট্রে। অনায়াসে পাওয়া অনেক বেশী অভিজাত আর উন্নত জীবনের লোভ তাকে স্পর্শ করেনি। সবকিছু অগ্রাহ্য করে থেকে গেছেন এই দেশেই। এই মাটিকে নিজের সবটুকু দিয়ে দাঁড় করিয়েছেন বিশ্ব মঞ্চে। এই ব্যাক্তিটিকে নিয়ে যখন আমাদের এই মাটির বুকে অসহনীয় সব বাক্যগুলো শুনতে হয়, তখন লজ্জা মাথাকাটা পরে পুরো জাতীর। এখনো ওরা গুণের কদর করতে জানলোনা, ওদের দেখে ঘৃণা রাগে ফেটে পড়ি আমি। যাইহোক, আর রচয়িতার জন্মদিন, তার নামটা মাথায় আসলেই ক্যামন জানি আবেগকাঁতর হয়ে পরি। জ্যোৎস্না আজও হয়, বৃষ্টি আজও হয়। কিন্তু জ্যোৎস্নাবিলাস, বৃষ্টিবিলাস আজ হয়না। ভালো থাকুন নির্মাতা, চরিত্রের স্রষ্টা। যেখানেই থাকুন না কেন, ভালোথাকুন সবসময়। যতদিন বৃষ্টি হবে, জ্যোৎস্না হবে, আর আমি হিমালয় থেকে হিমু রাস্তায় হাঁটবো, ততদিন আমাদের ভালোবাসা আপনার সাথেই থাকবে। শুভ জন্মদিন “হুমায়ূন আহমেদ”।
“নীল শাড়ির গল্প”
ফাতিহা অরমিন নাসের
নীল শাড়ি, দুহাত ভরা কাঁচের চুড়ি, চোখে কাজল আর খোলা চুল ; হাজারো হুমায়ূন পাঠিকার স্বপ্নের সাজ বলা চলে একে। কালজয়ী চরিত্র হিমুর অনেকটা জুড়েই আছে এই নীলাঞ্জনা, যার নাম রূপা।
হিমুকে নিয়ে লেখা উপন্যাসগুলোতে রূপা না থেকেও জুড়ে আছে বেশ খানিকটা। যখনই হিমু সমস্যায় পড়েছে, ছুটে গিয়েছে ফার্মেসিতে, ফোন করেছে রূপাকে। কিংবা, ক্লান্তিকর কোন যাত্রা শেষে রূপাকে আহ্বান জানিয়েছে বারান্দায় দুদন্ড দাঁড়াবার, চোখের দেখা নয়, মনের দেখা দেখবার জন্য। হুমায়ূন বলেছিলেন, প্রকৃতি কখনোই সোনায় সোহাগাদের একত্র করেনা। সে কথারই যথার্থতা প্রমাণ করতে নীল শাড়ি পরে, খোলা চুল উড়িয়ে, চুড়ির রিনঝিন শব্দ তুলে বারান্দায় দাঁড়ায় রূপা, ঠিক তখনই শহরের অলিতেগলিতে কল্পনায় রূপার হাত ধরে ময়ুরাক্ষীর দিকে যাত্রা করে হলুদ পান্জাবির হিমু। রূপার অনিন্দ্য জগতে তার বিচরণ না থাকলেও তার ফোনকলে রূপা গায়ে জড়ায় নীল শাড়ি, হিমু আসবেনা জেনেও হাত রাখে বারান্দার গ্রীলে। হিমুর এলোমেলো জীবনে আবছায়া হয়ে জুড়ে রয়েছে রূপা। দুই প্রান্তের দুই মানুষের মধ্যে অদৃশ্য সুতোর বন্ধন গড়ে দেয় একটা কথাই :
“রূপা, তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তুমি কি একবার নীল শাড়িটা পরে বারান্দায় আসবে ?”
ছবি-Ice Today