সৈকত হাসান
‘দ্য এ্যালকেমিস্ট’ – ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহো’র ‘অসাধারন বললেও কম হয়ে যাওয়া’ একটা সংগ্রহের নাম! ‘কেউ যখন সত্যি সত্যি কিছু চায়, পুরো বিশ্বব্রক্ষ্মান্ড তাকে সেটা পাইয়ে দেবার জন্য ফিসফাস শুরু করে দেয়!’ এমনই অনেক স্বপ্ন, ভাবনা, লক্ষ, প্রাপ্তির সংমিশ্রণ নিয়ে লেখা এই বইটি! অত্যন্ত সাধারণ কাহিনীর মধ্য দিয়ে অসাধারণ দার্শনিকতা, জীবনের দিক নির্দেশনা চমৎকারভাবে ফুঁটিয়ে তুলেছেন তিনি এই ‘দ্য এ্যালকেমিস্ট’ য়ের মাধ্যমে!
.
কাহিনীটা সান্তিয়াগো নামের এক বইপড়া রাখাল বালকের স্বপ্নে গুপ্তধনপ্রাপ্তির, যে স্বপ্নে দেখে একটা ছেলে মিশরের পিরামিডে গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে, এই খোয়াবের ব্যাখা জানতে সে এক মহিলা গণকের শরণাপন্ন হয়! সে যে ভুল স্বপ্ন দেখেনি এক-দশমাংশ গুপ্তধনের বিনিময়ে এটা নিশ্চিত করে মহিলা গণক! সালেমের ছদ্মবেশী রাজাও তাকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে এবং অনেক সদুপদেশ দেয়! তারমধ্যে উল্যেখযোগ্য- ‘সুখের গোপন উৎস হলো, তোমাকে পৃথিবীর সব গোপন বিস্ময় দেখতে হবে, সেইসাথে মনে রাখতে হবে চামচের উপর থাকা একবিন্দু তেলের কথাও!’ অসাধারণ একটা কোয়েট!
উল্লেখিত বিষয়গুলো ছাড়াও এখানে আর যেটা খুব স্পষ্টতই প্রতিফলিত হয়েছে সেটা হচ্ছে ‘ভালোবাসা’ লক্ষ অর্জনের পথে আমাদের অনেকের ধারনানুযায়ী ভালোবাসা শব্দটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে! এটা ভিত্তিহীন ধারণা ছাড়া কিছুই না! কেননা, ভালোবাসা কাউকে কখনো লক্ষ থেকে সরিয়ে দিতে চায় না! কেউ যদি লক্ষ ছেড়ে দেয়, বুঝতে হবে সে ভালোবাসা সত্যি নয়! সে ভালোবাসা, যা জগতের ভাষায় কথা বলে!
‘যখন তুমি কিছু পাবার জন্য চেষ্টা করবে তখন পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তা পাই দিতে ফিসফাস করবে!’ – এই কথাটা কতটুকু সঠিক তা পাঠকগণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে চিন্তা করতে থাকেন, যথার্থ পেয়ে যাবেন!
‘আমাদের একেকজনের জীবনের এক একটা নির্দিষ্ট বিন্দুতে এসে আমাদের আশেপাশে যা হচ্ছে তার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি! তখন জীবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় ভাগ্য’ – এটাই দুনিয়ার সবেচে বড় মিথ্যা! দ্য এ্যালকেমিষ্টের সবেচেয়ে পছন্দের কোয়েট! যাষ্ট ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করেন, অনকে কিছৃ বুঝার আছে, জানার আছে এখান থেকে!
– দ্য এলকেমিস্ট, পাওলো কোয়েলহো!
এই বইটিতে আরো একটা ব্যাপার খুব স্পষ্ট যে, যখন আমরা বর্তমানের চেয়ে ভালো হতে চাই, তখন আমাদের চারপাশের সবকিছুও তার সাথে ভাল হয়ে যায়! আর ভালো হওয়ার পথে ভয়টাকে পাত্তা দিতে নেই! এ্যালকেমিস্ট তাই সহজ ভাষায় বলেছেন, ‘ভয়ের কছে মাথা পেতে দিওনা, দিলে হৃদয়ের সাথে আর কথা বলতে পারবে না!’
লক্ষে পৌছানোর ব্রক্ষ্মাস্ত্র তো এটা যে, ‘তোমার হৃদয়ের কথা শোনো, সে সব জানে, কারণ, সে এসেছে আত্মার কাছ থেকে! আর একদিন সেখানেই ফিরে যাবে!’
সোজা কথায়, জীবনের লক্ষগুলো বাস্তবায়নের সহায়ক এই এ্যালকেমিস্ট! গুপ্তধনের মতো করে জীবনের অনেকগুলো না বলা সূত্র এতে উল্লেখিত আছে, তাই জীবনটাকে উপলব্ধি করার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এ্যালকেমিস্ট পড়ে ফেলুন খুব শিগগির-ই!