মাসুদ আনসারী: মনের অগোচরেই নাদিয়া কে ভালবেসে পেলে সায়েম। জীবনের পদচারণায় অনেক মেয়েকে দেখেছে, কিন্তু ভালবাসা-পছন্দ শব্দটি নাগাল পায়নি কখনো! এসবের চিন্তাও করতো না সে। কিন্তু নাদিয়াকে দেখা মাত্রই তার চোখযুগল ভালবাসার প্রতিচ্ছায়া দেখতে শুরু করে, সমস্ত দেহে নাদিয়ার প্রতি ভালবাসা ঘুরপাক খায়।
সায়েমদের বাসার দ্বিতীয় তলায় নাদিয়ার মামাদের বাসা। নাদিয়ারা তেমন বেড়াতে আসে না; বছরে একবারই। সায়েমও বাসায় থাকে না, ঢাবিতে পড়ে। ঈদের ছুটিতে এসেছিল এবার। ঈদের দুদিন পর কেমন জানি মন খারাপ সায়েমের, জানালা ঘেঁসে হ্যাডফোন লাগিয়ে মন খারাপীর গান শুনছে। ভাবুক চোখে বাইরে থাকিয়ে আছে। হঠাৎ হন বাজিয়ে একটা ফ্যামিলি গাড়ী সায়েমদের বাসার সামনে দাঁড়ায়। একজন একজন করে বেরুচ্ছে। সবশেষে নাদিয়া গাড়ি থেকে বের হয়। সায়েমের চোখ দুইটি থমকে দাঁড়ায়। নাদিয়াকে প্রথম দেখা,চোখজুড়ে নাদিয়ার প্রতি ভালবাসা জন্ম নেয় মুহূর্তের মধ্যেই। যেটাকে অনেক ক্রাশ বলে!
বিকেলে নাদিয়া মামাতো বোনকে নিয়ে ছাদে ঘুরতে যায়। মোবাইল নিয়ে অন্য মনস্ক হয়ে ছাদে যায় সায়েমও। নাদিয়ার দিকে থাকায় না, খারাপ ভাববে বলে! ছোট থেকেই সায়েম লাজুক টাইপের ছেলে, খুব ভদ্র। পাড়া জুড়ে তার যথেষ্ট ভদ্রতার কথা মানুষ জানে! আজ কিন্তু তাকে অভদ্র হতে ইচ্ছে করছে খুব, শুধু নাদিয়ার দিকে এক পরশ থাকাতে আর মন কুঁকড়ানো ভাললাগার কথা জানাতে….।
তিনদিন পেরিয়েছে। সায়েম জানতে পেরেছে কাল খুব ভোরেই নাদিয়ারা চলে যাবে। সারা রাত্রে একটুও ঘুম হয়নি। চোখ বন্ধ করলেই নাদিয়া ভেসে উঠে, অনেক স্বপ্ন উড়াউড়ি করে। ভোর ৫ টা, চারদিকে নিভু নিভু অন্ধকার। তখন গাড়ীর হন বাজতে শুরু করে বাসার সামনে, সায়েম তাড়াতাড়ি উঠে জানালা খুলে থাকায়। ঝাপসা চোখে দেখছে ঐদিনের গাড়ীটাই, খুব তড়িহুড়ি করে নাদিয়ারা উঠে পড়ে গাড়ীতে। সায়েমের মুখদেশে জল গড়িয়ে পড়ছে অবিরত,মনের ভেতরে সব চুরমার হয়ে যাচ্ছে। এসব কেন? মানুষের অজান্তেই ভাললাগার মানুষটির জন্য চোখ বেঁয়ে পানি আসা, মন কাঁদা এটা যেন জগতের চিরায়ত নিয়মের একটি। হয়তো তাই…
গাড়ী চলছে, সায়েমের স্বপ্ন গুলো গাড়ীর পেছনে দৌড়াচ্ছে। গাড়ীকে ধরতে পারে না, এদিকওদিক থাকাতেই গাড়ী বাতাসে মিশে যায়। সায়েম খাটের উপর নুয়ে পড়ে, হঠাৎ ঘুম চলে আসে। রাজ্যের সব ঘুম যেন হানা দিয়েছে তার সমস্ত দেহে!
নাদিয়ার মামাতো ভাই থেকে জানতে পেরেছে সেও ঢাকায় পড়ে। ফেসবুক আইডির নামও জেনে নেয়। বাসায় ফিরে কাঁপানো হাতে সায়েম ফেসবুকের সার্চ বক্সে কিবোর্ডের অক্ষর ছাপছে বিদ্যুৎ গতিতে, সবগুলো ভালবাসার অক্ষর জোড় হয়ে নাদিয়া নামের পূর্ণতা পায়। অনেক গুলো নাদিয়া ল্যাপটপের স্ক্রিন জুড়ে, সবাই তো সায়েমের ভাললাগার নাদিয়া নয়, একেকজনের! প্রায় ১৫ পৃষ্ঠা পেরেয়েছি সার্চ পাতার, এখনও নাদিয়ার আইডি খুঁজে পাচ্ছে না। ১৬ পৃষ্ঠা আসতেই শুরুতে নাদিয়ার আইডি, তার ছবিও আছে। সায়েম নিজের চোখকে শুরুতে বিশ্বাসই করতে পারছিল না! মুচকি হাসি সায়েমের সারা মুখে ল্যাপ্টে আছে..
নাদিয়াকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠায় সায়েম। ফেসবুকে আসলেই নাদিয়া আইডিতে ঢুকে পড়ে, তার ছবি দেখে আর ভালোলাগার ঢেকুর তুলে প্রত্যহ। এভাবে সপ্তাহ না যেতেই এক সন্ধ্যায় নাদিয়া বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করে,সায়েম নোটিফিকেশন দেখে আঁতকে উঠে। এরপর থেকে নাদিয়া নিয়মিতই সায়েমের ছবিতে লাইক-মন্তব্য করতে শুরু করে, সায়েমও!
প্রতিদিন নাদিয়ার মেসেজ বাটনে ক্লিক করে কিছু না লিখেই আবার ফিরে আসে সায়েম, সাহস পায়না কিছু লিখতে। নোটে নাদিয়ার প্রতি ভালোলাগার কথাগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে লিখে রেখেছে সায়েম,আজ যেভাবেই হোক নাদিয়াকে মেসেজ পাঠানো হবে। সন্ধ্যার দিকে নাদিয়া ফেসবুকে আসে, সায়েমও মেসেজ পাঠায়।
কিছুক্ষণের মধ্যে একটি অপ্রত্যাশিত মেসেজ আসে নাদিয়ার আইডি থেকে, যে মেসেজের সাথে সায়েমের এতোদিনের লালিত স্বপ্নগুলো এলোমেলো,বিক্ষিপ্ত হয়ে উড়তে শুরু করে। এই প্রেমশহরে নিজেকে কেমন জানি আজ বেওয়ারিশ মনে হচ্ছে তার! চোখ বেঁয়ে পানি বেরুচ্ছে,দুএকটা ফোঁটা নাদিয়ার প্রোফাইল ছবির উপর গিয়ে পড়ে। সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে সায়েমের, দ্রুতই ল্যাপটপ বন্ধ করে বাসা থেকে বেরিয়ে জীবনময়ের গলিতে ঢুকে পড়ে। নাদিয়ার ম্যাসেজটি শুধু তার সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে, কষ্টের ভারত্ব বাড়াচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে।
ম্যাসেজে লেখা ছিল, হুম! আমি ম্যারিড ইতিমধ্যে। মামাদের বাসার ছাদে তোমাকে দেখে আমারও খুব ভালো লেগেছিল। আমাকেও তোমার ভালো লেগেছে, ঐদিনেই বুঝতে পেরেছিলাম। তোমার সাথে চোখ রেখে কথা বলবো ভাবছি আর কেমন জানি লজ্জা নুয়ে পড়েছিলাম ঐ বিকালে! মামাদের বাসা থেকে ফিরে আসার কয়েকদিনের মধ্যে আমার বিবাহ ঠিক হয়ে যায়। উনি ব্যাংকার, দেখতে তোমার মতো। তার মধ্যে তোমাকে আমি কল্পনা করি! অনুভবও!! এই মুহূর্তে অন্য একজন নাদিয়াকে খুঁজে নিতে পারো…
লেখক, ফিচার কন্ট্রিবিউটর
কালের কন্ঠ, শেয়ার বিজ