কদমতলী স্টেশনে নেমে খুবই বুদ্ধিমানের মতো ওভার ব্রিজ দিয়ে রেললাইন ক্রস না করে ট্রেনের সামনে দিয়েই ক্রস করলাম। ক্রস করা শেষ ট্রেনটাও প্রায় চলে এসেছে। তখনই কোন এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে টেনে ট্রেনের নিচে ফেলে দিলো। আর আমি মরে ভূত হয়ে গেলাম। আমি এখন ভূত হওয়ার পর ভাবি সব ক্ষেত্রেই ট্রেনের নিচে পড়ার সময় কেউ ধাক্কা মারে। আর আমাকে কি না টান দিয়ে ফেলেছে। ধুর, সহজভাবে মরতেও পারলাম না। ভূত হওয়ার আগে অর্থাৎ মৃত্যুর আগে ভূতের গল্পে পড়েছিলাম যে যেভাবে মারা যায় ভূত হওয়ার পর সে মানুষকে সেভাবেই মারতে থাকে। আমিও ভূত বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে আমি যেভাবে মরেছিলাম সেভাবেই মানুষকে মারার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু চেষ্টা চেষ্টাই থেকে গেলো। আমার যেভাবে মৃত্যু হয়েছিলো সেভাবে এখন মানুষ মারতে গেলে আমার আগে ট্রেনের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে এরপর মানুষকে টান মেরে ট্রেনের নিচে ফেলতে হবে। কিন্তু নিজেকে ট্রেনের সামনে কল্পনাই করতে পারি না আবার দাঁড়াবো। এখন ভূত হলেও এককালে তো মানুষই ছিলাম। ভয়ডর বলতে একটা ব্যাপার আছে না! এদিকে ভূত জীবন শুরু করার পর একটা মানুষও মার্যে পারিনি বলে ভূত সমাজে আমার আর মান সম্মান রইলো না। কদমতলী স্টেশনের আশেপাশে আর কোন ভূত নেই যে তার থেকে সাহায্য নেবো। তাই আয়াতুল কুরসি থুক্কু ভূত মন্ত্র পড়ে নিজ সাহসেই দাঁড়িয়ে পড়লাম ট্রেনের সামনে। সামনের লোকটাকে টান মেরে ফেলে দেবো ট্রেনের নিচে। আমি তো ভূত আমার কিছুই হবে না। কিন্তু টান দেওয়ার ঠিক আগেই রক্তে ভেসে গেলো সব! কি হলো! পরদিন সকালে দেখলাম স্টেশনে এক ছোকড়া পত্রিকা বিক্রি করছে। শেষ পৃষ্ঠায় শিরোনাম ‘ট্রেনের নিচে পড়ে মানসিক রোগীর আত্মহত্যা’। নিচে দেখি আমার ছবি দেওয়া। তাই আগ্রহ নিয়ে পুরোটা পড়লাম। পড়ে জানতে পারলাম এতদিন আমি জীবিত ছিলাম আর নিজেকে ভূত ভেবে ঘুরঘুর করতাম। আমার মৃত্যু হয়েছে গতরাতে ট্রেনে কাটা পড়ে।
আমি বসে বসে ভাবছি আমি কি সত্যি মারা গিয়েছি নাকি মানুষ মারতে গিয়ে আবার মারা পড়বো!
লেখা-এশনা বিনতে আলী
মিরপুর বাংলা স্কুল
দশম শ্রেণী