গল্পিতা
-সালমান সাদ
পত্রিকাঅফিস থেকে বারবার তাগাদা আসছিলো নারীনেত্রী মাসুদা বাটের একটা সাক্ষাতকার নেয়ার জন্য। আমি তাই মুখিয়ে ছিলাম সুযোগের জন্য।
গত কিছুকাল সভা সমাবেশ মিটিং মিছিল নিয়ে মাসুদা বাট বেশ ব্যস্ত হয়ে ছিলেন। সাক্ষাতকার দেয়ার মত অবসর বের করা তার ভার হয়ে পড়েছিলো।
এদিক-ওদিক বহু দৌড়াদৌড়ির পর ‘জাগ্রত নারী’ পুরস্কারটা তিনি পেয়েই গেলেন। তারপর থেকেই তার কর্মচাঞ্চল্যে কেমন ভাটা নেমে এসেছে।
এখন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকেই বের হন না। অখণ্ড অবসর। আমি খবর পেয়ে কাগজভর্তি একটা ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে তার বাসার দিকে ছুট লাগালাম।
বহুতল একটা এপার্টমেন্টের দশম তলায় তিনি থাকেন। তবে সেখানে যাওয়ার জন্য দু’শো চল্লিশটা সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হলো না আমার। লিফটে চেপে শোঁ শোঁ করে উঠে এলাম।
“লিফট হইতে দুই পা ফেলিয়া” ডোরবেল টিপলাম। ড্রয়িংরুমেই তার দেখা পাওয়া গেলো। সেজেগুজে বসে আছেন। মুখের ঢিলাটে চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে মেকাপ পাউডার। দামি ফিমেল পারফিউমের বিদঘুটে গন্ধ। স্টার জলসা না কী বাংলা চ্যানেল যেন চলছে টি,ভি তে।
এক অভিনেত্রী নাকের জল চোখের জলে একাকার করে কেঁদেকেটে কী যেন বলছে আর তিনি তা মনোযোগ দিয়ে দেখছেন।
নারীনেত্রী জনাবা মাসুদা বাটের সাথে স্বাভাবিক পরিচয় পর্বের পর আলাপ শুরু হলো। কথার শুরুতেই-
আঠারোর আগে বিয়ে নয়, বাংলাদেশের আইন উল্টাপাল্টা, ষোল বছরের একটা বাবু মেয়ে কীভাবে সাংসারিক কাজ করবে, রান্নাঘর সামলাবে ইত্যাদি বিষয়ে আমাকে খুব একচোট ঝেড়ে নিলেন।
একটুপর ট্রে তে করে চা-নাস্তা নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো উনার বাসার কাজের মেয়ে।
তার বয়স তেরো কি চোদ্দ। ময়লা কাপড়ে অপুষ্ট শরীর, ফ্যাকাশে তার মুখ। ঘাম চপচপ অবয়ব। চোখের নীচে কালি। বাহুতে খুন্তির ছ্যাকার দাগ।
ডান গালটায় পাচ আঙুলের লাল টকটকে ছাপ…