আরিফা সুলতানা রিমি
২৫ শে মে (১১জ্যৈষ্ঠ) এই দিনটি জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য সাধারন হলেও বাঙালি জাতির জন্য বিষেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর জন্ম জয়ন্তী। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন বলে কবিকে ভালোবেসে ‘দুখু মিয়া ‘ নামে ডাকা হত।তাকে বিদ্রোহী কবিও বলা হয়।কবি বাংলায় ১১ ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ সালে, ইংরেজি ২৪ শে মে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল এর চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন। কবি ছোটদের জন্য যেমন মজার মজার ছড়া- কবিতা লিখেছেন ঠিক তেমনি তিনি একাধারে ছিলেন কবি,সাহিত্যিক,সম্পাদক,অভিনয় শিল্পী,গায়ক ইত্যাদি। ছোটদের জন্যে লেখা কবিতা গুলো হলো: খুকু ও কাঠবিড়ালি, আমি হব,লিচুচোর,বিদ্রোহী,সাম্যবাদী ইত্যাদি।
মাত্র ২২ বছর বয়সে তাঁর বিদ্রোহী কবিতাটি প্রকাশ করেন।তাঁর ‘বান্ডেলের আত্নকাহিনী'(প্রথম লেখা), ‘মুক্তি’ (প্রথম কবিতা), ‘অগ্নিবীণা’ (প্রথম কাব্যগ্রন্থ,১৯২২), ‘ বাঁধন হারা ‘ (প্রথম উপন্যাস,১৯২৭), ‘তুর্কিমহিলার ঘোমটা খোলা ‘( প্রথম প্রবন্ধ), ‘যুগবাণী’ (প্রবন্ধগ্রন্থ), ‘ঝিলিমিলি’ (নাটক), ‘বিষের বাঁশি’ ( প্রথম নিষিদ্ধকৃত গ্রন্থ) দিয়ে কবি সাহিত্য জীবনে প্রবেশ করেন।তাঁর লেখার জীবন শুরু হয় সাংবাদিকতার মাধ্যমে।তিনি তাঁর পত্রিকায় শ্রমজীবী,কৃষিজীবী মানুষের কথা বার বার তুলে ধরেন।তাঁর প্রথম পএিকার নাম ‘ নবযুগ’।কবি উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় গান রচনা করেন এবং গায়ক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।তিনিই প্রথম বাংলা গজল গানের প্রবর্তক। প্রায় তিন হাজারের বেশি গান তিনি রচনা করেন।নজরুল তাঁর জীবনে ৮ টি চলচ্চিত্রের সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত ছিলেন।তিনি ‘ধ্রুব’ ছায়াছবিতে নারদের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
১৯৪২ সালে কবি তাঁর বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং একই বছরের জুলাই মাসে তিনি মস্তিষ্কের ভারসাম্য হারান।তিনি এ অবস্থায় ৮ লাইনের একটি কবিতা রচনা করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবি নজরুলকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষনা করা হয়।১৯৭৬ সালে জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।এছাড়াও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার জগত্তারিণী স্বর্ণপদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি নজরুলকে প্রদান করা হয়। আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় কবি ১৯৭৬ সালের ২৯ শে আগস্ট ঢাকায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে চলে যান না ফেরার দেশে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে কবিকে সমাধিত করা হয়েছে।বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামেে মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম।