সাহিত্য ডেস্ক
-হাসান ইনাম
‘ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে
রাত দুপুরে অই।
ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে
ট্রেনের বাড়ি কই ?
একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায়
মাঠ পেরুলেই বন।
পুলের ওপর বাজনা বাজে
ঝন ঝনাঝন ঝন।’
কবি শামসুর রহমানের সাথে শৈশবে এই কবিতা দিয়েই পরিচয় ঘটে আমাদের। আরেকটু উপরের ক্লাসে উঠলে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ পড়ে টগবগিয়ে ওঠে আমাদের রক্ত।
আমৃত্যু তিনি ছিলেন একজন প্রতিবাদী কবি। আইয়ুব খানকে কটাক্ষ করে ১৯৫৮ সালে লেখেন ‘হাতির শুঁড়’ কবিতাটি। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকা অবস্থায় তাকে নিয়ে লেখেন ‘টেলেমেকাস’।
পাকিস্তানের সব ভাষার জন্য অভিন্ন রোমান হরফ চালু করার প্রস্তাব করেন আইয়ুব খান যার প্রতিবাদে আগস্টে ৪১ জন কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন যাদের একজন ছিলেন শামসুর রাহমানও। কবি ক্ষুদ্ধ হয়ে লেখেন মর্মস্পর্শী কবিতা ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’।
এরো আগে ১৯৬৭ সালের ২২ জুন পাকিস্তানের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী রেডিও পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্প্রচার নিষিদ্ধ করলে শামসুর রাহমান তখন সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তান-এ কর্মরত থাকা অবস্থায় পেশাগত অনিশ্চয়তার তোয়াক্কা না করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।
ভাষা আন্দোলোনের সময় লেখেন ‘আসাদের শার্ট’।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কবি লেখেন ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’। কবিতা দুটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে সগৌরবে লেপ্টে আছে।
কবি শামসুর রাহমান ২০০৬ সালের ১৭ই আগস্ট মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুতে অস্তমিত হয় একটি নক্ষত্রের। যে নক্ষত্র উদিত হয়েছিলো ৭৭ বছর আগে ১৯২৯ সালে।
১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন এই কবি। আগামীর পক্ষ থেকে কবিকে স্মরণ করছি শ্রদ্ধার সাথে। কবি বেঁচে থাকুক পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত তাঁর সৃষ্টির মাঝে ।