তানযীল রশীদ
রাত ৩ টাই আমার ফ্লাইট। মধ্যরাত বলা অবশ্য অপেক্ষাকৃতই শ্রেয়। কাঁচঢাকা গাড়িতে করে এয়ারপোর্টের দিকে যখন এগুচ্ছি সোডিয়াম বাতির শহর তখন অনেকটাই নির্জীব। কেউ গভীর ঘুমে মগ্ন, কেউ আবার হেডফোনে দুঃখী দুঃখী টাইপ গান শুনে প্রেয়সীর কথা ভেবে রাতটাই পার করে দিচ্ছে, কেউ দুঃখ ভুলছে, কেউ নতুন করে দুঃখ পাচ্ছে, কারো আভিজাত্য আর সুখ আবার মদের বোতলে বন্দী। আমার অবশ্য মনে হয় রাতে চট্টগ্রাম অদ্ভুত নেশাময়ী সৌন্দর্যের সাজে সজ্জ্বিত হয়। রাত যত গভীর হয়, নিয়ন আলোর যান্ত্রিক শহর যেন ক্রমশ এক মাতাল করা সৌন্দর্যের লীলাভূমি হয়ে উঠে। আমি তা দেখে রোমাঞ্চিত হয়, নতুন করে এই শহরের প্রেমে পড়ি। নেশাময়ী এই মধ্যরাতে নেপাল যাত্রায় আমার অবশ্য ঠিক যতটুক আনন্দ আর রোমাঞ্চের সাগরে ভাসতে থাকার কথা, আমি ঠিক ততটুকু নই। কারণটা অবশ্য নীলাঞ্জনা। এ ক’দিন ঝক্কিঝামেলায় মেয়েটার সাথে তেমন কোন কথায় হয় নি।
আজ পুরোটা দিন তো ব্যস্তই ছিলাম। এত রাতে ফোন দেওয়া বোকামি হবে নাকি লাজ শরমবিহীন বেহায়ার মতো আচরণ হয়ে যাবে সেই হিসেব অবশ্য আমি মেলাতে ব্যর্থই হচ্ছিলাম। কোন কাজে যাওয়ার আগে আম্মু আর নীলাঞ্জনার কাছ থেকে শুভ কামনা নিয়ে যাওয়া এখন অবশ্য আমার রেওয়াজই হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনটাও তাই তর সইছে নাহ। আম্মু থেকে শুভ কামনা পাওয়া হয়েই গিয়েছে, কিন্তু নীলাঞ্জনার কাছ থেকে এই যাত্রায় এখনো ” বেস্ট অব লাক ” পাওয়া হলো না। সোডিয়াম আলোর বেড়াজাল ভেঙে যখন এয়ারপোর্টে প্রবেশ করলাম, ঠিক সেই সময় লাল – সবুজ শাঁড়ি পরিহিতা নীলাঞ্জনাকে দেখে আমি রীতিমত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। চোশোমাটার পাওয়ারে ইদানিং ঝামেলা করছে বেশ। মধ্যরাতের কল্পনা নাকি চশমার কাঁচের গোলমাল সেই হিসেব মেলানোর আগেই নীলাঞ্জনা আমার কাছে এসে কপালে লাল-সবুজ পতাকা বেঁধে দিলো। তারপর আমার প্রশস্ত ললাটে চুম্বন এঁকে দিয়ে বললো ” পতাকাটাকে উঁচু করে ধরো ”