আশরাফুল আলম রাজু
গত বছর এক আত্নীয়ের বিয়েতে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। এখনকার দিনে শহরের বিয়ে সব কমিউনিটি সেন্টার নির্ভর। আমি কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে বসে থাকলাম। চারদিকে শুধু ফটোশ্যুট চলছে। কিছুক্ষন পর আমার খালাতো ভাই এসে বললেন রাজু, মিষ্টি কিনা লাগবে।তুমি একটু কষ্ট করে গিয়ে কিনে নিয়ে।
আমি মনে মনে খুশিই হলাম। যাক একটু বাইরে হাটা-চলা করে আসি। কমিউনিটি সেন্টার থেকে বের হয়ে দেখি ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যেই হেঁটে রাস্তায় গেলাম। চারদিকে তাকিয়ে দেখি কোনো রিক্সা নেই। কিছুদূর হাটার পর দেখি এক রিক্সাচালক বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়ে আছে। বললাম মামা,সামনে বাজারে যাবেন?
হ যামু।
আমি আর ভাড়া কত জানতে না চেয়ে উঠে রিক্সায় চড়ে বসলাম। কিছুক্ষন পরেই একটা মিষ্টির দোকান চোখে পড়ল। রিক্সাচলককে দাঁড়াতে বললাম। রিক্সা থেকে নেমে দেখি মিষ্টির দোকানের সামনে অনেক লোকের ভিড়। বৃষ্টির কারনে সবাই মিষ্টির দোকানের ছাউনিতে আশ্রয় নিয়েছে। রিক্সাচলাককে বললাম মামা তুমি দাঁড়াও,আমি মিষ্টি নিয়ে আসি।
হাটা ধরতেই দেখি একটা ছোট মেয়ে তার বাবার হাত ধরে কাকভেজা হয়ে দাড়িয়ে আছে।বাবার হাত টেনে নিয়ে বৃষ্টিতে নেমে যেতে চায়। দেখলাম তার বাবা হয়তো বকুনি দিয়েছে।মেয়েটা তবুও হাত ছেড়ে নেমে যেতে চাচ্ছে।যান্ত্রিক জীবনে মেয়েটা হয়তো হাপিয়ে উঠেছে।তাই বৃষ্টিতে ভিজে ক্লান্তি খানিকটা দূর করতে চাইছে। আমি বৃষ্টি ভেজা হয়ে দোকানে ঢুকলাম। মিষ্টি কিনতে একটু দেরিই হয়ে গেল। আমি বলতে গেলে ইচ্ছে করেই দেরি করলাম কারন বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। এমনিতেই ভিজে গিয়েছিলাম তাই আর ভিজতে মন চাইছিল না। বাইরে এসে দেখি রিক্সাচালক নেই। আমি তো প্রথমে মেজাজ গরম করে ফেললাম। কারন উনি টাকা না নিয়েই চলে গেছে। আমি দোকানের পাশেই একটা পান-সিগারেটের দোকানে গিয়ে বললাম, মামা এইখানে যে একটা রিক্সা ছিল ঐইটা কি চলে গেছে?
উনি আমার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে বলল, একটু আগে একটা পিচ্চি মেয়ে এক্সিডেন্ট হইছে। ঐ রিক্সায় করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
আমি বললাম, এইখানে যে একটা মেয়ে একটা লোকের হাত ধরে দাড়িয়ে ছিল ও?
হুম।
আমি বিস্মিত হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ভাবলাম আহারে বেচারী মেয়েটা তো শুধু যান্ত্রিকতার ঘাম মুছতে চেয়েছিল বৃষ্টিতে ভিজে। যান্ত্রিকতা হয়তো তাও কেড়ে নিবে। বুক ভরা নিঃশ্বাস ছেড়ে মিষ্টি নিয়ে বৃষ্টি দিয়েই হাটা ধরলাম। যান্ত্রিকতার এই পরিহাস ফুটফুটে কোমল জীবনটাকেও কেড়ে নিয়েছে হয়তো।